Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আরাধ্য কথন


আগামী নিউজ | আর এ শিপন প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২০, ০৫:২৪ পিএম
আরাধ্য কথন

ফাইল ছবি

আরাধ্য কথন
ভালোবাসা এক শূন্যতার নাম, ভালোবাসা একবুক বেদনার নাম, ভালোবাসা স্পষ্টত ধুকে ধুকে মৃত্যুর নাম নাকি ভালোবাসা এক অনুভবের নাম? ভালোবাসার কি কোন রঙ আছে ? আছে কি কোন বর্ন বা আকার? ভালোবাসার রঙ নীল, আর বেদনার রঙ ও নীল। ভালোবাসা আকাশ সমান আর আকাশ মানেই অসিম শূন্যতা। আসলে ভালোবাসা বলতেই হয়তো কিছু নেই।

হাতে জ্বলন্ত সিগরেট, পরনে জিন্স আর টিশার্ট। উপরের কথা গুলো মনে মনে বলতে বলতে হেটে যাচ্ছিলো আরাধ্য একবুক অসিম শুন্যতা নিয়ে। তার প্রিয়তমা আজ অন্যের হয়ে যাচ্ছে। কিছুখন আগেই কথা হলো তানহার সাথে। অবলিলায় বলে গেলো সে আর তার হবে না,

আরাধ্যঃ ফোন দিয়েছো কেনো?
তানহাঃ কোথায় আছো তুমি?
আরাধ্যঃ যেখানেই থাকি না কেনো তুমি জেনে কি করবে?
তানহাঃ তুমি কি পাগলামো করছো?
আরাধ্যঃ কিশের পাগলামী? আমি খুব ভালো আছি, এইতো হাটছি অচেনা রাস্তা ধরে।
তানহাঃ দেখো আমাদের এক হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। আমাদের মধ্যে এখন আলোকবর্ষ দুরুত্ব।
আরাধ্যঃ কোন দুরুত্ব নেই, তুমি চাইলেই আসতে পারতে।
তানহাঃ তুমি বুঝতেছো না কেনো আমি অলরেডি ম্যারিড। আজ আমাকে নিয়ে যাবে আর তুমি এখন এসব বলছো।
আরাধ্যঃ ভালোবাসা আমায়?
তানহাঃ (কিছুখন চুপ থেকে) মোটেও না।
আরাধ্যঃ তাহলে ফোন দিয়েছো কেনো? সান্তনা দিতে?
তানহাঃ নাহ। টেনশন হচ্ছিলো। যদি উল্টা পাল্টা কিছু করো।
আরাধ্যঃ একটা গান শুনাবে?
তানহাঃ চুপ করো (তানহার অমৃত বানী)। আমিও আগেও অনেকবার বলেছি আমি গান গাইতে পারি না।
আরাধ্যঃ আচ্ছা রাখি।
তানহাঃ শুনো।
আরাধ্যঃ বলো।
তানহাঃ ভুলে যেও আমায়, ভালো থেকে আর আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আরাধ্যঃ ক্ষমা কিসের জন্য? তুমি তো আর আমাকে ধোকা দাওনি। তুমি খুব ভালো। তোমাকে অনেক ডিস্টার্ব করেছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
তানহাঃ আবার। প্লিজ তুমি এভাবে বইলো না।
আরাধ্যঃ হুম। আর কথা হবে না, সো কিছু বলাও হবে না। যারাকে দিয়ে তোমার বিয়ের গিফট পাঠিয়েছি।
তানহাঃ তুমি আসবে না? আমাকে বউ সাজে দেখবে না?
আরাধ্যঃ অনেকবার দেখেছি।
তানহাঃ কল্পনায়।
আরাধ্যঃ আই লাভ ইউ।

আরাধ্য ফোন কেটে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে আর কথা গুলো বলছে মনে মনে। পেছন থেকে কিছু একটা এসে ধাক্কা দেয় আরাধ্যকে। এরপর কিছুখন অচেতন অবস্থায়। জ্ঞ্যান ফিরলে দেখে সে রাস্তার পাশে পুকুরে পরে আছে। উঠে দাঁড়ায়, হাত-পা সহ সম্পুর্ন শরীর ব্যাথা। অনেক মানুষের চিৎকার। কাছে গিয়ে দেখে একটা বাস এক্সিডেন্টলি খাদে পরে গেছে। আশে পাশের মানুষজন ছুটে এসেছে। অনেক মানুষ মারাও গেছে দেখছি। রাস্তার উপরে কয়েকজনের লাশ সুয়িয়ে রাখা হয়েছে। আরাধ্য এগিয়ে যায়। বাস থেকে এখনো আহত মানুষদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

বাসের চাকার নিচ থেকে একটা লাশ বের করা হয়। একদম থেতলে গেছে। উঠিয়ে এনে পারে রাখে। পুলিশ এনে দুইজনকে কি জেনো বলে। তারপর পুলিশ কিছু লাশ নিজ দায়িত্বে গাড়িতে উঠিয়ে পাঠিয়ে দেয়। এরপর আসেপাশে লোকজনদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় আর বলে সব আহত যাত্রী আর লাশ বের করে আনা হয়েছে। আপনারা সবাই চলে যান। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। কিন্তু নিচের দিকে তো আরো কিছু লাশ আছে। এগুলোকে তো পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হলো না। লোকজন সরে যাবার পরে দুইজন লোক এসে লাশগুলোকে পাশের একটা নর্দমার কুচুরিপানার নিচে পুতে রাখলো। কিন্তু কেনো? আরাধ্যের কৌতহুলি মন লুকিয়ে লুকিয়ে লাশ গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। কুচুরি পানা সরিয়ে এক এক করে দেখলো। শেষের লাশটা উপর করে রাখা আছে। হাত দিয়ে উল্টিয়ে মুখ দেখতেই দুই হাত পেছনে লাফ দিয়ে চলে গেলো।

এ তো আমি। আরে আমি এখানে কেনো? স্বপ্ন দেখছি না তো। চিৎকার করতে লাগলো আরাধ্য। সেখান থেকে ছুটে আসে পুলিশদের গাড়ির কাছে। চিৎকার করে ডাকে কিন্তু কেউ তার ডাকে সারা দেয় না। আরাধ্যঃ হ্যালো, স্যার এই যে আমি। আমি ঐখানে কেনো? কি হলো, আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না?

আরাধ্যঃ আমি কি মরে গেলাম? মরে গেলে তো ঐখানে সুয়ে থাকার কথা তাহলে এখানে কি করছি? শুয়েও তো আছি আবার এখানেও । নাহ মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। চিমটি কেটে দেখি।
আরাধ্য নিজেকে নিজে চিমটি কেটে দেখে। কোন ব্যাথা বা অনুভব নেই। মানুষিক ধাক্কা খেয়ে মাটিতে বসে পরে।

আরাধ্যঃ আমি মারা গিয়েছি, আর এখন আমার আত্তা ঘুরছে আসে পাসে। আমি ভূত হয়ে গেলাম না তো?  ধুর বাল। কেউ তো আমার কথা শুনছে না কাকে বলছি। আচ্ছা কি করবো এখন আমি? ভূতদের কি হয়। ধুর কিচ্ছু ভালোলাগছে না। কেমন জানি অসহ্য যন্ত্রনা লাগছে। ভাবতে ভাবতে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায় আরাধ্যের। ঘোড় অন্ধকার। উফ কে কে, এমন করছো কেন? (আরাধ্য চোখ খুলে দেখে সে একটা রাস্তার পাশে ফুটপাতে সুয়ে আছে, আর কয়েকটা ছেলে ওর পিঠে লাত্থি দিচ্ছে)

আরাধ্যঃ কে তোমরা?
শালা ভূতের জাতের নামে কলংক। তুই ভূত হয়ে এই রাতে ঘুমাচ্ছিস?
আরাধ্যঃ আমি ভূত হলাম কবে? ওই কি বলো।
ঐ ব্যাটা ভূত না হইলে আমার লাথি কি তোর গায়ে লাগতো?
আরাধ্যঃ হ্যা আমি তো মারা গিয়েছি। এখন ভূত হয়ে গেছি তাই না। নতুন মাল মনে হইতেছে। কবে মরছো?
আরাধ্যঃ এইতো আজই। জানাজা বা শেষকৃত্য হয় নাই?
আরাধ্যঃ নাহ। ওরা আমার লাশ গুম করে ফেলছে।
শাওন কাকা পাইছি। গুমের ভুত পাইছি একটা। এরেও গুম কইরা মাইরা ফেলছে।
আরাধ্যঃ আরে নাহ। রাস্তায় এক্সিডেন্টে মারা যাই। এরপর লাশ একটা পুকুরে কুচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে, পরে মনে হয় কোথাও মাটিচাপা দিবে।

কি নাম তোমার?
আরাধ্যঃ আমি আরাধ্য। তোমরা?
-   আমি মাহফুজ, আমি আজাদ, আমি কাওসাও তবে ভালোবাইসা সবাই সিস্টেম বইলা ডাকে
-   আমি নোমান আমারে সবাই হিরো আলম বলে আর ঐযে বইসা পয়া উঠাইয়া দিয়া হাত নাড়া চাড়া করছে উনি শাওন। পৃথিবীতে থাকতে জাতীয় কবি ছিলেন।
আরাধ্যঃ জাতীয় কবি তো কাজী নজরুল ইসলাম। উনি কোন দেশের জাতীয় কবি?
কাওসারঃ ইশশিরে, সিস্টেম বুঝেনারে। আরে আমরা ভালোবাইসা ডাকতাম। আমাগো শিপন ভাই নাম দিছিলো।
আরাধ্যঃ ওহ।
মাহফুজঃ শুনেন। উনি আমাগো গুরু। আসেন আপনার সাথে পরিচয় করায় দেই।
আরাধ্যঃ চলো।


আজাদঃ কাকা তোমার বিড়ি টানা হইছে? শাওন সাহেব হাত দিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে।
আরাধ্যঃ(কাউসারের কানে কানে নিচু গলায়) আচ্ছা উনি এই পাইপটা বার বার মুখে নিচ্ছেন আবার বের করছেন কেনো?
কাওসারঃ আরে ভাই সিস্টেস এটা, সিস্টেম করতেছে।
আরাধ্যঃ বুঝলাম না।
কাওসারঃ বিড়ি খাও নাই জিবনে? ভূত হওয়ার পর কি আর বিড়ি খাওয়া যায়? যায় না। তাই সিস্টেমে পাইপ নিয়ে বিড়ির সুখ নিতাছে।
আরাধ্যঃ ওহ বুঝলাম।
শাওনঃ ঐ কারে ধইরা আনলি তোরা?
মাহফুজঃ কাকা এইটা নতুন ভূত। এইখানে আইসা পড়ছে তাই তোমার কাছে নিয়া আসলাম।
শাওনঃ কি নাম তোমার?
আরাধ্যঃ আমি আরাধ্য।
শাওনঃ কেমনে মরলা?
আরাধ্যঃ এক্সিডেন্টে।
শাওনঃ দেশে এক্সিডেন্ট বাইরা গেছে। যেভাবে মানুষ মরতেছে সেভাবে ভুতের সংখ্যাও বাড়তেছে। আচ্ছা বাদ দাও। তো থাকবা কোথায়?
আরাধ্যঃ আমি তো কিছু জানিনা।

শাওনঃ ঐ হিরো আলম ওরে রাখুম নাকি আমাদের সাথে?
নোমানঃ কাকা রাখি। তাইলে সুবিধা আছে। ওই পাড়া বাবুল ভুতদের সাথে এইবার টক্কর দেওয়া যাইবো।
শাওনঃ কথা খারাপ বলিস নাই। আচ্ছা রাখ।
আরাধ্যঃ ধন্যবাদ আপনাদের।আচ্ছা একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
আজাদঃ কি ?
আরাধ্যঃ তোমরা মরলে কিভাবে? সবাই হেসে দেয়।
আজাদঃ হাহাহাহাহাহাহাহা, সব গুজব সব গুজব। আমরা মরি নাই।
আরাধ্যঃ মানে।
কাওসারঃ মানে কি? মানে হইলো সব সিস্টেম।
আরাধ্যঃ খুলে বলো না রে ভাই।
শাওনঃ ওই সব খুইলা বল।

মাহফুজঃ কাকা আমি কই। শুনো ভাই। একদিন রাতে আমরা একটা বাড়ির দ্বোতালায় রাতে বারবিকিউ পার্টি করছিলাম।গানা বাজনা করতে করতে পার্টি। হটাত করে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরন হইয়া আমরা একসাথে সবাই মইরা গেলাম।

আরাধ্যঃ খুবই দুঃক্ষজনক।
শাওনঃ চল ঘুইরা আসি। এতো প্যাচাল ভালো লাগে না।
নোমানঃ চলো কাকা।
শাওন আর নোমান পয়া দিয়ে মাটিতে একটা ধাক্কা দিয়ে সুপারম্যানের মত উড়তে শুরু করে। এর পর কাওসার ও দৌড় দেয়। আজাদঃ ভাই চলেন। ( চলেন বলে সেও উড়ে যায়)
আরাধ্যঃ তোমরা সুপারম্যান?
মাহফুজঃ হাহাহাহাহাহা। নাহ ভূত।
আরাধ্যঃ উড়তে পারো। আমাকে শেখাবে?
মাহফুজঃ ভুতেরা সব পারে। তুমিও ভূত তুমিও পারবে।
আরাধ্যঃ কিভাবে?
মাহফুজঃ পয়া দিয়ে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে উপরের দিকে মনকে নিয়ে যাও দেখবে তুমিও চলে গেছো। আরাধ্য ট্রাই করে। প্রথমে পরে গেলেও পরেরবার ঠিক উড়ে যায়। তবে চলাচলে কন্ট্রোল আনতে কিছুটা সময় নেয়।

আরাধ্যঃ ওয়াও। ভূত হয়ে যে এতো মজা আগে জানতাম না।
কাওসারঃ ধুর মিয়া, যখন ঠেলায় পরবা বুঝবা।
আজাদঃ খাওন নাই, থাকার জায়গা নাই, মানুষের অত্যাচার আর সে বলে ওয়াও।
আরাধ্যঃ নাহ, উড়ে বেরাতে আমার ভালোই লাগছে।
শাওনঃ সবাই নিচে নাম। ঐ দেখ বাবুল।
সবাই মিলে নিচে নামে। নিয়ন আলোর ডাকার শহর, কোন মানুষজন নেই, এই রাতে শহরের এই অংশটুকু ভুত-ভূতুদের।

আরাধ্যঃ ওরা কারা?
কাওসারঃ মাস্তান। সিস্টেমে মাস্তান।
মাহফুজঃ আমরাও মাস্তান। ওরা আমরা এখন এই জায়গাটা দখল নিয়ে ঝামেলা করতেছি। শালাগো মাইরা এলাকা ছাড়া করতে হবে।
আরাধ্যঃ তাহলে কি এখন আমিও মাস্তান?
নোমানঃ অবশ্যই।
শাওন বাবুলের সামনে দাঁড়ায়।
বাবুলঃ এইভাবে সামনে দাড়াইলি কেন?
শাওনঃ দাড়াইলে কি করবি?

বাবুলঃ দেখ একলা পাইয়া ঝামেলা করবি না। সাহষ থাকলে পরে আসিস। আমিও আমার পোলাপাইন নিয়া আসুম।
কাওসারঃ কাকা সিস্টেমে আঘাত দিলো। ছাইড়া দাও।
শাওনঃল ছাইড়া দিমু? নোমার বাবুলের লুঙ্গিতে একটা টান দিয়ে লুঙ্গি খুলে ফেলে। বাবুল লুঙ্গি উচা করে ভৌদৌড়। আর সবাই মিলে হেসে দেয়। তারপর হাটা শুরু করে। কিছুদুর হাটার পর হটাত একটা মানুষকে দেখতে পায়। আজাদ খুব খুশি। কাকা পাইছি পাইছি বলে চিৎকার।

আরাধ্যঃ তুমি এতো খুশি কেন?
আজাদঃ মানুষ পাইছি। একা একা হাটতেছে। আজ খাইছি তোরে দাড়া।
আরাধ্যঃ তোমরা মানুষও খাও নাকি?
মাহফুজঃ ধুর, এই খাওয়া সেই খাওয়া না। এই খাওয়া মানে হইলো ওরে ভয় দেখাইয়া ১২টা বাজাই দিবো।

কাওসার লোকটার সামনে গিয়ে সাদৃশ্য হয়। মাটি থেকে একটু উপরে, হাট দিয়ে নিজের মাথাটা নিজে টেনে ছিড়ে ফেলে। আর এটা দেখে লোকটা জ্ঞ্যান হাড়িয়ে পরে যায়। তার ভয়ে জ্ঞ্যান হাড়িয়ে পরে যাওয়া দেখে ওরা যে কত টা খুশি বা আনন্দিত সেটা ভাষায় বুঝিয়ে বলা যাবে না।

ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। আরাধ্যকে সাথে নিয়ে ওরা ফিরে আসে পুরোনো এক বিল্ডিং এর পরিত্যাক্ত ছাদে। ছাদের ভাঙ্গাচোরা চিলেকোঠায় তাদের বর্তমান বাসস্থান। নতুন করে ভেঙ্গেচুরে বিশাল অট্রালিকা গড়ার সিদ্ধান্তের আগপর্যন্ত হয়তো এখানেই থাকতে হবে তাদের।

আরাধ্য এখানেই থাকে। বেশ কিছুদিন  হয়ে গেছে। ভূত জীবন খারাপ কাটছে না তার। তবে প্রিয় জায়গা গুলো খুব মিস করে। ধানমন্ডি লেক ব্রিজের কোনায় বসে সিগারেট টানতে টানতে আড্ডা, রবিন্দ্র সরবরের চা। চা এর কথা বলতেই মনে পরে গেলো তানহার কথা। তানহা সরবরের চা খুব পছন্দ করে। আরাধ্য যেদিন শুনেছিলো যে তানহা সরবরের চা পছন্দ করে সেদিনই ভোরে চা খেতে গিয়েছিলো। তাও আবার অফিসের বসকে নিয়ে।

আরাধ্য মন খারপ করে বসেছিলো। শাওন এসে পেছন থেকে ডাক দেয়। ইতিমধ্যে শাওন আর আরাধ্যের সম্পর্কটা খুব জমে গেছে, দুজনেই ছ্যাকাখাওয়া তাই হয়তো।

শাওন: কি রে কি হইছে?
আরাধ্যঃ কিছু না।
শাওনঃ আরে বল ব্যাটা।
আরাধ্যঃ আড্ডার জায়গা গুলো খুব মিস করছি। যেতে সেখানে গিয়ে আবার আড্ডায় জমে উঠতে পারতাম।
শাওনঃ কোথায় বল? আজ সেখানে যাবো।
আরাধ্যঃ প্রায় সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেখে, রবিন্দ্র সরবরে আড্ডা দিতাম। শাওন চিতাকার করে বাকি সবাইকে ডাক দেয়। ওরা চলেও আসে।
শাওনঃ আজ ধানমন্ডি লেকে যাবো। সেখানে আড্ডা দিবো।
কাওসারঃ রাতে?
শাওনঃ নাহ এখনি।
কাওসারঃ এখন তো সন্ধ্যা। এখন অনেক মানুষ, এতো মানুষজনে গেলে ঝামেলা হয়।
মাহফুজঃ কথা সত্য।
শাওনঃ মাঝে মাঝে ঝামেলাতে পরা ভালো। চল।

শাওন আরাধ্য সহ সবাই মিলে উড়ে চলে আসে ধানমন্ডি লেকে। এককোনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আড্ডার হাসাহাসির শব্দ কোন একভাবে একটু পাশেই বসে থাকা এক জুটির কানে যায়, ভয়ে চিৎকার করে উঠে। তারপর সেখান থেকে পালিয়ে আসে রবিন্দ্র সরবরে। হাটছিলো সবাই মানুষদের মাঝ দিয়ে। হটাত আরাধ্যের চোখ পরে একটা মেয়ের দিকে। মেয়েটি তানহা। আরাধ্যের ভালোবাসার মানুষ। বিয়ে হয়ে গেছে, জামাই এর সাথে ঘুরতে এসেছে। মাঝে মাঝেই ওরা দুজনে আসতো এখানে আর তাই আরাধ্যও এই দিকটাতে ভয়ে ভয়ে আসতো।

শাওনঃ কি রে আবার মন খারাপ কেন? কি হইছে?
আরাধ্যঃ এই মেয়েটাকে দেখছো না? এই মেয়েটিই তানহা।
শাওনঃ ১০ বছরের ভালোবাসা, লুকিয়ে রাখার তানহা?
আরাধ্যঃ হুম।
শাওনঃ ছেলেটা কে?
আরাধ্যঃ ওর জামাই।
শাওনঃ ভালোই মানাইছে।
আরাধ্যঃ খুব ইচ্ছে করে ওর পাশে পাশে থাকতে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে, ওর মুখের কথা শুনতে।
শাওনঃ যা পাশে পাশে থাক, ইচ্ছে মত তাকিয়ে থাক, পাশে বসে ওর গল্প শোন।
আরাধ্যঃ সে তো সম্ভব না।
শাওনঃ সম্ভব না কে বলছে? তুই এখন চাইলেই পাশে গিয়ে বসতে পারবি, কথা শুনতে পারবি।
আরাধ্যঃ দারুন আইডিয়া। আমি তোপ চাইলেই এখন রোদেলার পাশাপাশি থাকতে পারবো, ওর মুখের কথা, ওর মনভোলানো হাসি দেখতে পাবো।
শাওনঃ যা বেটা যা।

আরাধ্য তানহার কাছাকাছি চলে আসে, তানহা আর তার জামাই এর সাথে তাদের বাড়িতেও চলে আসে।এরপর থেকে আরাধ্য তানহার শ্বশুরবাড়ীর ছাদেই আশ্রয় নেয়। তানহাকে দেখে, তানহার খোলা চুল দেখে, তানহার মিষ্টি হাসি দেখে মুগ্ধ হয় আরাধ্য। মাঝে মাঝে তানহা আর তার জামাই এর রোমান্স দেখে খুব কষ্ট লাগে আরাধ্যের, ইচ্ছে হয় মরে যেতে কিন্তু সেটাতো আর সম্ভব না কারন সে অলরেডি মরে ভূত হয়ে গেছে।

তানহা আজ সেজেছে। হলুদ শাড়ী আর কালো ব্লাউজ, চোখে কাজল, হাতে লালচুড়ি আর খোপায় ফুল। অসম্ভব অপসরীর মত লাগছে। ইচ্ছে করছে ছুয়ে দেই কিন্তু সেটা তো পসিবল না। কিছুখন পর তানহার জামাই আসে, রুমে ঢুকেই তানহাকে চুমু খেতে শুরু করে। দেখে মেজাজ খুব গরম হয়ে যাচ্ছিলো। তাই বেরিয়ে পরে আরাধ্য। এখন সমধ্যা। তানহা আর তানহার জামাইও বের হয়ে যায়। তারা একটা বিয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে।

আরাধ্য মন খারাপ করে একা একা হাটছিলো। হটাত পেছন থেকে এসে উকি দেয় সিস্টেম। ওহ সিস্টেম মানে হচ্ছে কাওসার।
কাওসারঃ ভাই তুমি আমাদের সিস্টেম কইরা দিলা?
আরাধ্যঃ সিস্টেম করে দিলাম মানে?
কাওসারঃ মানে ভুইলা গেছো।
ইতিমধ্যে দলের বাকিরা এসে হাজির।
শাওনঃ কিরে তোর আবার মন খারাপ কেন?
আরাধ্য সব বলে যে কি কারনে তার মন খারাপ।

মাহফুজঃ ভাই স্পর্শ পাইতে ইচ্ছে করে তাই না? হাহাহাহাহাহাহা কি রোমান্টিক কথাবার্তা।
শাওনঃ ওরা তো গায়ে হলুদে গেছে তাই না? সেখানে গিয়ে নিশ্চয় হলুদ মাখাবে? বাজাপোড়া খাবে, আবার বেশি ফুর্তি করে চুলও খোলা রাখতে পারে। তখন তুই ওর ঘাড়ে চেপে পরবি। তাহলেই ওর স্পর্শ পাবি।
আজাদঃ বুদ্ধিখানা খারাপ না। ট্রাই মারো। সো চলো যাই সেখানে
আরাধ্যঃ চলো।
হলুদের আসর থেকে বের হয় তানহা। খোলা চুল আবার হাতে খাবার খেতে খেতে রিক্সা দিয়ে যাচ্ছিলো তানহা।
শাওনঃ এখনি সুজোগ আরাধ্য, যা ঘাড়ে চেপে বস।

আরাধ্য গিয়ে তানহার ঘাড়ে চেপে বসে। তানহার স্পর্শ নেয়। ওর শরীরের গন্ধ নেয়।

তানহার জামাই ব্যাপারটা বুঝতে পারে। বাসায় গিয়ে তানহার বাড়ির অন্যান্য লোকজন বুঝতে পারে যে কিছু একটা ঘটেছে তানহার সাথে। তারা পাশের এক ওঝাকে ডেকে নিয়ে এসে এবং ওঝা তানহাকে দেখেই বলে যে ভুতে ধরেছে। ওঝা ঝাড়পোক শুরু করে। আরাধ্যের খুব কষ্ট হচ্ছিলো, অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছিলো। কিন্তু সে কোন ভাবেই তানহাকে ছেড়ে যেতে নারাজ। ওঝা জানায় যে এই ভুত অনেক ঘাড় ত্যাড়া, না পিটাইলে যাবে না।

তানহার জামাইঃ ভুতকে কিভাবে দেখবেন? কিভাবে পিটাবেন?
ওঝাঃ ভূত তো এই মেয়ের শরীরে, এই মেয়েরেই মারলে ভূত চলে যাবে।
তানহার জামাইঃ যাবে তো?
ওঝাঃ এমন মাইরা মারুম যে না গিয়ে উপায় থাকবে না।
তানহার জামাইঃ আচ্ছা ঠিক আছে, যা করার তারাতারি করে। ধুপের গন্ধ আমার সহ্য হয় না। এতো ধুপ জ্বালাইতে হয়।ওঝা কিছুখন মন্ত্র ত্রন্ত পরে তারপর একটা লাঠি দিয়ে বাড়ি শুরু করে তানহার শরীরে। তানহার শরীরে আঘাত করলেও ব্যাথা পাচ্ছিলো আরাধ্য। তবে সে ব্যাথা সহ্য করতে প্রস্তুত, সে কোন ভাবেই তানহাকে ছেড়ে যাবে না। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরে গেলো ব্যাথা আপাতত তার লাগলেও ক্ষত হচ্ছে তানহার শরীরে। তারমানে সে তানহার ক্ষতি করছে। আরাধ্য তানহার শরীর থেকে বের হয়ে যায়। বের হয়ে দূরে সরে যায়। আর ফিরে আসে না তানহার কাছে। সে চায়না তার জন্য তানহার কোন ক্ষতি হোক।

আরাধ্য ফিরে আসে শাওনদের কাছে, সেই পুরনো ছাদের পরিত্যাক্ত চিলেকোঠা আবার নিজের আস্তানা গাড়ে। অন্যদিকে তানহাও সুখে জীবনযাপন করে তার পরিবারের সাথে।
সমাপ্ত

আগামীনিউজ/জেএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে