এই শিকল পরা ছল (তৃতীয় পর্ব)
প্রনমি বোস
মাথায় ব্যান্ডেজ করে নিজের রুমে যায় নিরু।ততক্ষনে বিনির জ্ঞান ফিরে আসে।
টেবিলে রাখা খাবার বিনিকে খাইতয়ে দিতে দিতে বলে,
"কেমন আছিস বিনি?কেমন লাগছে এখন?তোকে কোথাও না দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে.....
তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়,তোর মা নিশ্চয়ই চিন্তা করবে, সকালে তাড়াতাড়ি চলে যাস। "
বিনির মাথায় হাত বোলাতে থাকে নিরু,ঘুম আসছিলো না, বিনির যদি কিছু হত নিজেকে ক্ষমা করতে পারতো কি সে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিরু..
সকাল ১০ টা, বিনি আর নিরু গেল ডাক্তার নওশাদের কেবিনে।
"শুভ সকাল নিরু,কাল রাতে না থাকায় তোমাদের চেকআপ করানো হয়নি,এখন কেমন বোধ করছো?
"কিছুটা ভালো , মাথাটা,একটু ব্যাথা....
" ওষুধ লিখে দিচ্ছি, ঠিক হয়ে যাবে..
"আর বিনি? তুমি কেমন আছো?কাল কি কেউ ছিল তোমার সাথে?চিনতে পেরেছিলে কি?"
"না,ছ্যার কিসু মনে নাই
" ঠিক আছে , অত প্রেশার নিতে হবে না, বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নাও....."
ডাক্তার নওশাদের কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে,মফিজ কে দেখতে পায় তারা..
বিনি বলে উঠে, "আফু,দেহ শয়তানডারে...
"না বিনি,এখন না,সঠিক সময়ের অপেক্ষা কর, বাড়িতে যা,এখন তুই " বিনিকে থামিয়ে দেয় নিরু।
বিনিকে পাঠিয়ে দিয়ে নিরু ভাবতে থাকে! কি হচ্ছে এসব?? একবার মফিজের উপর নজর রাখা হোক...
মফিজকে খুঁজতে থাকে সে...
"মফিজ হাত ছাড়ো, কি হচ্ছে এসব, আমি কিন্তু লোক জড়ো করব,ভালোই ভালোই হাত ছেড়ে দাও" চেঁচিয়ে উঠে মুন
মফিজ ভয় পেয়ে হাত ছেড়ে দেয়...
দূর থেকে তাকিয়ে দেখে নিরু।দিনদিন মফিজের সাহস বেড়েই চলেছে, এসব অন্যায় কারো চোখেই পড়ছে না!!
আচ্ছা নওশাদ স্যারকে বলে দেখলে কেমন হয়?স্যার অনেক হেল্পফুল!মাঝবয়েসী হলেও চিন্তা চেতনা অনেক আধুনিক!স্যার নিশ্চয়ই বুঝবে তাকে......
ডাক্তার নওশাদের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায় নিরু।দরজা নক করে, স্যারের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ!মিনিট তিনেক পর দরজা খুললো, ভেতরে ঢুকে নিরু দেখলো ডাক্তার নওশাদ চেয়ারে বসা আর তার টেবিলের সামনে মুন বসে আছে...
মুনকে এখানে দেখে অবাক হয় নিরু!মুখে কেমন যেন অস্পষ্টতার ছাপ। এ ভাষা বুঝতে পারে না নিরু......
"কি ব্যাপার নিরু?তুমি এই সময়ে?কোন সমস্যা?"
"আপনার সাথে একটু জরুরী কথা ছিল"
"ঠিক আছে মুন তুমি বাইরে গিয়ে বসো, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি......
মুন কিছু না বলে বাইরে চলে গেল...
" স্যার কথাটা মুন কে নিয়েই, আমি তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইনি তাই... দাড়োয়ান মফিজের স্বভাব ভালো না, সে আজ মুনের হাত ধরে টানাটানি করছিলো,দিনেদুপুরে সে মেয়েদের হেনস্তা করছে, হয়ত কাল রাতে বিনির সাথেও সে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছে..."
"কি বলছ এসব?সে আজ এত বছর যাবত এখানে চাকরি করছে, এমন করতেই পারে না সে।
" না স্যার আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে, আমি নিজ চোখে দেখেছি।"
"ঠিক আছে এত জোর গলায় বলছ যখন আমি বিষয় টা দেখছি, তুমি চিন্তা কর না, এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলিও না, প্রতিষ্ঠানের সম্মানের ব্যাপার।
" ঠিক আছে স্যার, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কেবিন থেকে বেরিয়ে এল নিরু।
"আচ্ছা মুনের সাথে কি একবার কথা বলে দেখব?বলাটা কি উচিত হবে?
না থাক।স্যার যখন বলেছে চুপ করেই থাকি।।
নিজে নিজেই বলতে থাকে নিরু।
কিন্তু মুন কোথায় গেল!বাইরেই তো বসে ছিল...
হয়ত রুমে গিয়েছে।নিরুও তার রুমে ফিরে এলো৷
সন্ধ্যা ৮ টা ৩০ মিনিট
বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়ছিল নিরু।
হঠাৎ একটা চিৎকার!
কান পেতে শোনার চেষ্টা করে নিরু।
ছাদ থেকেই যেন আওয়াজ টা আসছে।
নিরু সহ কয়েকজন ছুটে যায় ছাদের দিকে....
"বাতি টাও কে নিভিয়ে দিল এত অন্ধকার!!
"আমার সর্বনাশ করে পালাতে পারবি না তুই...."
"কে? কে ওখানে!!নিরু চিৎকার করে উঠে
" আমাকে বাঁচাও, শয়তানটা......
সবাই টর্চ নিয়ে এসে,দেখে মুন চুল উস্কোখুস্কো, পড়নের জামা ছেড়া..
মফিজের হাত শক্ত করে ধরে আছে।
"এ কি দাঁড়োয়ান মফিজ তুমি???শীঘ্রই ম্যাম দের ডেকে নিয়ে আসো "
রেজিস্টার ম্যাম সহ কয়েকজন স্টাফ ছুটে এলো...
"ম্যাম দেখুন।কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেন নি এখন নিজের চোখেই দেখুন।এখনো চুপ করে থাকবেন"
তোকে আজ আমি মেরেই ফেলব। বলে ছুটে যায় নিরু।
নিরুকে বাঁধা দেয় রেজিস্ট্রার ম্যাম শিরিন।
"না নিরু, পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে, পুলিশ এসে ওর একটা ব্যবস্থা করবে।"
"বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি,, আমাকে পুলিশে দিবেন না,দয়া করুন।"
কেঁদে উঠে মফিজ।
ইন্সপেক্টর এসে মফিজ কে থানায় নিয়ে গেল।
প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল মুন!সবাই মিলে তাকে রুমে নিয়ে গেল...
"এসব কিভাবে হলো মুন?"
"কাল সন্ধ্যায় কেউ একজন আমার মুখে রুমাল চেপে ধরে নিরু, এরপর আর কিছুই মনে নেই.....
বলেই কাঁদতে থাকে মুন।
নিরু তাকে জড়িয়ে ধরে, " ভয় পেও না, আমরা আছি"।
শয়তানটাকে পুলিশে দেয়া হয়েছে, এবার শায়েস্তা হবে...
মেয়েদের কে হেনস্তা করার মজা এবার থানায় বুঝবে সে...আর চিন্তার কোন কারন নেই।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নিরু।
চলবে......
আগামীনিউজ/জেএস