Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভিটামিন ডি সবার জন্য নয়


আগামী নিউজ | লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০, ০২:৩০ পিএম
ভিটামিন ডি সবার জন্য নয়

ঢাকাঃ কোভিডে ভিটামিন ডি সকলের ক্ষেত্রে কার্যকরী নয়।

বেলজিয়ামের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমনটা দাবি করলেন। ‘স্টেরয়েড বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনই দাবি করেছেন বেলজিয়ামের কে ইউ লিউভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

পরীক্ষা করে ওই বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ভিটামিন ডি সবার ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ কমাতে পারে না। বিশ্বের সব দেশের চিকিৎসকদের ধারণা ছিল কোভিডে দারুণ কাজে আসে ভিটামিন ডি। বেলজিয়ামের গবেষকদের মত, ভিটামিন ডি ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তৈরি জটিল রোগকে ঠেকাতে কাজে আসে ঠিকই, কিন্তু সব কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে তা খাটে না।

এমনকি রোগী শারীরিক অবস্থা না বুঝে ভিটামিন ডি ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট দিলে ফল হিতে বিপরীত হতেও পারে। বেলজিয়ামের বিজ্ঞানীদের দাবি, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টে থাকা ‘ক্যালসিফেডায়ল’ অনেক ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা কমাতে পারলেও ওই রাসায়নিকে অনেক কোভিড রোগীর শরীরে তীব্র শ্বাসকষ্ট তৈরি করে।

‘স্টেরয়েড বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’ পত্রিকায় রোগী শারীরিক অবস্থা উল্লেখ করে পত্রিকায় বিস্তারিত ব্যাখ‌্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কেন এমনটা হচ্ছে তার একটা ব্যাখ‌্যাও দিয়েছেন বেলজিয়ামের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, ‘ক্যালসিফেডায়ল’ আদপে একটি প্রি-হরমোন।

এটি লিভারে তৈরি হয়। এই হরমোনের কাজ হলো শরীরের প্রদাহ কমানো। এটি দ্রুত রক্তে মিশে প্রদাহ কমাতে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায় শরীর যতটা ওই হরমোন তৈরি করে তা মোটামুটি সহনশীল হলেও বাইরে থেকে সাপ্লিমেন্টের আকারে দিলে তা অনেক ক্ষেত্রে হানিকর হয়ে ওঠে।

শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ তৈরিতে প্রি-হরমোন ‘ক্যালসিফেডায়ল’ কার্যকরী হলেও সব ক্ষেত্রে সে নিয়ম না খাটার জন্যই চিন্তা। চিকিৎসকরাও ধরেই নিয়েছিলেন বাইরে থেকে বেশি করে দিলে কাজটা আরও ভালো হবে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এখন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।

কেইউ লিউভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জোসে ম্যানুয়েল কুয়েসেডা গোমেজ জানাচ্ছেন, লিভারে ভিটামিন ডি থ্রি হাইড্রক্সিলেশন হয়ে ওই প্রি-হরমোন তৈরি করে। কিডনিতে ক্যালসিফেডায়লই একটি এনজাইমের সাহায্যে বদলে গিয়ে ক্যালসিট্রিয়ল তৈরি করে যা এক ধরনের সেকোস্টেরয়েড।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল ভিটামিন ডি থ্রি থেকে তৈরি ক্যালসিফেডায়লের সাপ্লিমেন্ট নিলে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম থেকে অনেকটা মুক্তি মেলে। আগে পরীক্ষায় দেখা গেছে ফুসফুসের জটিল রোগ ‘অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ রোগীকে এই সাপ্লিমেন্ট খাওয়ালে তার ফুসফুসে কোনও রকম সংক্রমণ হবে না।

শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে পারবেন রোগী। ভিটামিন ডি-এর এই সাপ্লিমেন্টের সলিডারিটি ট্রায়ালে একসময়ে ফল দেখিয়েছিল। ৫০ জন কোভিড রোগীকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিনের থেরাপি করে যা ফল পাওয়া গেছে তার থেকে অনেক গুণ বেশি ফল মিলেছে ওই সাপ্লিমেন্টের প্রয়োগে।

নির্দিষ্ট দিনের ডোজে থেরাপি করে দেখা গেছে ৫০ জন রোগীর মধ্যে মাত্র ১জনকে ইনটেনসেনসিভ কেয়ারে দিতে হয়েছে। বাকি সকলেই সংক্রমণ কমে যায়। এমনকি ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকা রোগীদের শ্বাসকষ্ট কমতে দেখা গেছে। এসব দেখার পরেই ভিটামিন ডি:র ঘাটতির সঙ্গে সার্স-কভ-২ ভাইরাস সংক্রমণের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছিলেন বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা।

শুরু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, কোভিড রোগীদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, দুর্বল শরীর ও ক্রনিক রোগ যাদের আছে, তাদের করোনা সংক্রমণ বেশি ঘটছে। ভিটামিন ডি দিয়ে চিকিৎসা সারলেও ভালো হওয়ার পর কিছু ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ থেকেই যায়। দেখা গেছে, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাকিদের থেকে কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট থেকেই এটাই বড় সমস্যা দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভিটামিন ডি যদি শরীরে সঠিক মাত্রায় থাকে, তাহলে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে, কিন্তু সবার জন্য ভিটামিন ডি নয়। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ভিটামিন ডি ডেফিশিয়েন্সি (ভিডিডি)। সাধারণত ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মেয়েই ভিডিডি’তে ভোগেন। সেই সঙ্গে ৬০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষ ও মহিলারাও এই রোগের শিকার।

তবে করোনা কালে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিলে সেটা কী মাত্রায় নিতে হবে তাই এখনও বিচার্য বিষয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা একমাত্র রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তা বলতে পারেন। তাই চিকিৎসকদের না আলোচনা করে নিজে থেকে ভিটামিন ডি ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত নয়।

সূত্রঃ গণশক্তি

আগামীনিউজ/এমকে

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে