Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রোগ-ব্যাধির হাত থেকে মুক্ত থাকতে সুষম খাবারই যথেষ্ট


আগামী নিউজ | ইসরাত জাহান  প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২০, ০৭:৫২ পিএম
রোগ-ব্যাধির হাত থেকে মুক্ত থাকতে সুষম খাবারই যথেষ্ট

সুস্থ থাকার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো ইত্যাদি। কিন্তু অনেক সময় মানুষ ভুলে যায় সঠিক ও পরিমিত খাবারের বিষয়টি। আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী হতে অনেকেই ক্র্যাশ ডায়েট সহ বিভিন্নডায়েট  শুরু করেন। অনেক সময় এটা অবসেশনের পর্যায়ে চলে যায়। তখন ওজনও কমতে থাকে দ্রুত কিন্তু জটিলতা সরুপ শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায় বলে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে।


 পাশাপাশি হাড়ের ক্ষয় জনিত রোগ অস্টিওপোরোসিস সহ হৃদরোগ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই অবস্থাকে কখনই হালকাভাবে দেখা উচিত নয় । রোগ-ব্যাধির হাত থেকে মুক্ত থাকতে সুষম খাবারই যথেষ্ট।  প্রকৃতিতে এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো নিয়ম করে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে নানা ধরণের সমস্যায় ভুগছেন মানুষ তার ওপর মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে যে কোনো সংক্রমণকে প্রতিহত করা যায়। এমন কিছু খাবারের তালিকা এখানে দেয়া হলো। দেখে নিন-

১. ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি জাতীয় সব্জিগুলোতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারে টমেটো, লেবু, জাম্বুরা, মাল্টা, পেয়ারা, পেপে, কালোজামের মতো খাবার রাখুন।


 

২. মিষ্টি আলুঃ গাজরের মতো মিষ্টি আলুতেও থাকে বিটা-ক্যারোটিন। মানুষের শরীরে ঢুকে এটি হয়ে যায় ভিটামিন এ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এমনকি বুড়ো হয়ে যাওয়া ঠেকাতেও কাজ করে বিটা-ক্যারোটিন।

৩. চিকেন স্যুপঃ বাসায় বানানো চিকেন স্যুপ মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে থাকে কারনোসিন নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি ভাইরাসজনিত জ্বরের সংক্রমণ থেকে মানুষের শরীরকে বাঁচাতে ভূমিকা রাখে।

৪. রসুনঃ রসুন থাকে সবার বাসায়ই। রান্না করা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় রসুন। কাঁচা রসুন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষ করে, ত্বকের সংক্রমণ নিরাময়ে ভালো কাজ করে রসুন। শরীরের কোলেস্টরলের পরিমাণ কমাতেও কাজ করে এটি।


৫. আদাঃ খাবারের ঝাঁজ বাড়াতে আদার তুলনা নেই। এছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেরও ভালো উৎস আদা। আর ফলমূল বা সবজি থেকে পাওয়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে কাজও করে তাড়াতাড়ি।

৬.তরমুজঃ তরমুজে থাকে গ্লুটাথায়োন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার সক্ষমতা বাড়ে।

৭. মাছঃ  ওমেগা ৩ ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন মাছ খান।

৮. দুধ ও দইঃ  জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ ও দই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দুধ হজম না হলে দুধের তৈরি খাবার খান। দিনে অন্তত ১০০ গ্রাম দই অথবাআর ১ কাপ দুধ খাবার চেষ্টা করুন।
 
৯.  ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধে খুব সাহায্য করে। গাজর, টমেটো, কুমড়া বেশি করে খান। সারাদিনে ১ কাপ গাজরের জুস খেতে পারলে দারুন উপকার পাবেন। গাজরের জুস দুধের থেকে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর।

১০. মধু ও দারুচিনিঃ  মধু ও দারচিনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

১১. আমলকীঃ  আমলকীর সাথে অল্প আদা ও খেজুর বেটে নিন। ভিটামিন সিতে ভরপুর আমলকীর এই চাটনি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।

১২. পানিঃ  সারাদিনে প্রচুর পানি পান করুন। এছাড়া হারবাল চাও খেতে পারেন, কেননা তা শরীরকে নীরোগ রাখতে সহায়তা করে। সফট ড্রিঙ্ক কম খান।

১৩. গ্রিন টি : তুলসি ও গ্রিন টি দেহের জন্য দারুণ উপকারী। এগুলো অর্গানিক, ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী, ক্যালোরি অনেক কম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। গ্রিন টি খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।

১৪. টক দইঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য খনিজ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকর। টকদইয়ে ভাল কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা দেহের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।

১৫. কাঠবাদামঃ কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই যা খুবই শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ঠাণ্ডার সমস্যা ও কাশি প্রতিরোধ করে। এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি প্রদান করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বজায় রাখে।

শরীরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য শরীরের পাঁচটি প্রতিরোধব্যবস্থাকে জোরালো করার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এই পাঁচটি প্রতিরোধব্যবস্থা হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা, শরীরের স্টেম সেল ব্যবস্থা, আমাদের ডিএনএ ব্যবস্থা, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং রক্তনালীর কার্যক্রম ব্যবস্থা। এই পাঁচটি জিনিস ঠিক রাখতে পারলে সুস্থ থাকা যায়। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়া, মানসিক চাপ, খারাপ খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে এই পাঁচটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই এই পাঁচটি ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে পারলেই রোগ-ব্যাধি থেকে শরীরকে অনেকাংশেই মুক্ত রাখা সম্ভব। তবে তার জন্য সবার আগে নজর দিতে হবে সুষম খাবারের দিকে।

লেখক: পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান

আগামীনিউজ/বিজয়

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে