Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ফটোর মতো ছবি আঁকেন যে ওলন্দাজ শিল্পী


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২০, ০২:৩৪ পিএম
ফটোর মতো ছবি আঁকেন যে ওলন্দাজ শিল্পী

ঢাকাঃ চিত্রশিল্পী মারিসা ওস্টারলে-র সৃষ্টিকর্মের বৈশিষ্ট্য সত্যি অনবদ্য৷ খুঁটিনাটি বিষয়গুলির দিকে এত নিখুঁতভাবে নজর দেওয়া হয়েছে, যে ছবিগুলি দেখলে বোঝার উপায় নেই যে ফটো নয়, সবই হাতে আঁকা৷ নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণে কাটভাইক শহরে তিনি নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে বাস্তব জীবনের দৃশ্য ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন৷

তিনি নিজের শৈলির নাম দিয়েছেন ‘কন্টেমপোরারি রিয়েলিজম’ বা সমসাময়িক বাস্তববাদ৷ মারিসা বলেন, ‘‘বাস্তবধর্মী উপায়ে আঁকতে গেলে দর্শককে বোঝাতে হয় যে সে আসলে কী দেখছে৷ শিল্পী নিজস্ব জগত, নিজস্ব বাস্তব সৃষ্টি করতে পারে৷ দর্শকের চোখে ফাঁকি দিয়ে তাদের বিশ্বাস করাতে হয়৷’’

নিজস্ব জগত যতটা সম্ভব বিশ্বাসযোগ্য করে সৃষ্টি করতে ৩৯ বছর বয়সি এই শিল্পী সবার আগে এক টেমপ্লেট প্রস্তুত করেন৷ তার জন্য মডেলের প্রয়োজন হয়৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাদের একই পোজ দিতে হয়৷ শিল্পী স্কেচ আঁকেন, ফটো তোলেন৷ বড় আকারের প্রতিকৃতি সৃষ্টি করতে তাঁর তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে৷ নিজের কাজের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে মারিসা বলেন, ‘‘আমি কম্পিউটারে সব জোড়া দেই৷ কখনো স্কেচও সেখানেই করি৷ কখনো আমি রং, আলো ও আকার-আকৃতি বদলাতে ফটোশপ ব্যবহার করি৷ কখনো কোনো শটের একটি অংশের সঙ্গে অন্য শটের অংশ জুড়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে পছন্দমতো ছবি ফুটিয়ে তুলি৷’’

অবাস্তব জগতকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন মারিসা
মারিসা এয়ারব্রাশ ও অয়েল পেন্টিং-এর মতো নানা কৌশলের মধ্যেও মেলবন্ধন ঘটাতে ভালোবাসেন৷ তিনি কখনো শিল্পের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন নি৷ বহু বছর ধরে ইলাস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করে নিজেই আঁকা শিখে নিয়েছেন৷ বিভিন্ন মিউজিয়াম ঘুরেও তিনি শিক্ষা নিয়েছেন৷ মারিসা বলেন, ‘‘প্রাচীন চিত্রকরদের ছবি ভালো করে বিশ্লেষণ ও নকল করে আমি অনেক কিছু শিখেছি৷ তারপর বই কিনতে শুরু করি৷ আমার বইভরা বিশাল লাইব্রেরি রয়েছে৷ তাতে নানা কৌশল, প্যালেট, পিগমেন্ট সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে৷ নিজস্ব তৈলচিত্র সৃষ্টি করতেও শিখেছি৷ তবে সেই সময় আমার নেই৷’’

২০০৩ সাল থেকে পেশাদারী শিল্পী হিসেবে তিনি কাজ করছেন৷ এরই মধ্যে কয়েকশো প্রতিকৃতি এঁকেছেন তিনি৷ আন্তর্জাতিক শিল্প সংগ্রহকারীরা তাঁর জাদুময় সৃষ্টি কিনে থাকেন৷ প্রথমদিকে তিনি যতটা সম্ভব ফটোর মতো বাস্তব চিত্র আঁকার কাজে মন দিয়েছিলেন৷ তারপর তিনি নিজের শৈলির আরও বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং সোনার তবকের মতো উপকরণও কাজে লাগাচ্ছেন৷

তিনি বিভিন্ন কর্মশালায় বাস্তববাদী চিত্রকর্ম সম্পর্কে জ্ঞানও বিতরন করেন৷ মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি ২২টি দেশে এমন কোর্স আয়োজন করেছেন৷ বর্তমানে তিনি মূলত অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষা দেন৷ মারিসা বলেন, ‘‘সাধারণত শুধু ফটো বিশ্লেষণ দিয়েই শিক্ষা শুরু হয়৷ আমার ওয়ার্কশপে সেটাই শেখাই৷ একটি ছবি বেছে নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের সেটি হুবহু নকল করতে হয়, যাতে তারা এর নেপথ্যের কৌশল বুঝতে পারেন৷ একবার কৌশল বুঝে নিলে তারপর তা কিছুটা রপ্ত করে সবরকম সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে নিজস্ব বাস্তব গড়ে তোলা সম্ভব৷’’

‘ওয়াশিং অ্যাওয়ে মাই সরোস' নামের সাম্প্রতিক সিরিজে তিনি সেই কাজই করছেন৷ একটি ছবির উপর কৃত্রিম ফেনা সমুদ্রে দূষণের সমস্যা ফুটিয়ে তুলছে, যা তাঁর অন্যতম বড় দুশ্চিন্তার কারণ৷

সমুদ্রই তাঁর সৃষ্টিকর্মের প্রেরণা৷ তাঁর স্টুডিও থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরেই উত্তর সাগরের উপকূল৷ সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন৷ প্রায়ই তিনি বাবার সঙ্গে সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মারিসা বলেন, ‘‘আমরা সমুদ্র থেকে অনেক কিছু নিয়েছি৷ সমুদ্র আমাদের উপার্জনের সুযোগ দিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে৷ এখন প্রতিদান দেবার সময় এসেছে৷ আজকাল চিত্রকর্মের মাধ্যমে প্রকৃতি ও দূষিত সমুদ্রের জন্য কিছু করার তাগিদ জন্মায়৷’’

শিল্পী হিসেবে সমুদ্রে নতুন অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতার লক্ষ্যে আগামী বছর মারিসা স্পেনে চলে যাচ্ছেন৷ তিনি সেখানেও ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের আঁকা শেখাবেন এবং বাস্তববাদী শিল্প সৃষ্টির কৌশল দেখিয়ে দেবেন৷

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে