Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনাভাইরাস নিয়ে আতংকিত হবার মতো কিছু হয় নাই


আগামী নিউজ | সাইফুল হক মিঠু  প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০, ০৩:০৮ পিএম
করোনাভাইরাস নিয়ে আতংকিত হবার মতো কিছু হয় নাই

গত বছরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নামক রোগ। অল্পসময়ে দ্রুত বিস্তার করায় ভাইরাসটি সারা বিশ্ব আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ভাইরাসটি শুধুমাত্র চীনের স্বাস্থ্যসেবাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেনি বরং বিশ্ববাণিজ্য, অর্থনীতি, এমনকি কূটনৈতিক পর্যায়েও বড় ধরনের বিপত্তি ডেকে এনেছে। এরই মধ্যে দুই হাজার ছাড়িয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে আগামীনিউজ ডটকমের সাথে কথা বলেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার।

আগামীনিউজ: করোনাভাইরাস এতো দ্রুত ছড়াচ্ছে কেনো?

কবিরুল বাশার: করোনাভাইরাস একটি প্রাণীবাহি রোগ। পৃথিবীতে অনেক রোগ আছে যা প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে। বন জঙ্গল থেকে প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়িয়েছে। করোনাভাইরাস একাধিক মাধ্যমে ছড়াতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর কারণে খুব দ্রুতই অনেক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের দুই ফিটের মধ্যে অন্য কোন মানুষ থাকলে তারও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে। এটা হাঁচি, কাশি এমন কি স্পর্শের মাধ্যমে ও ছড়াতে পারে। প্রাণীর শরীর থেকে মানুষের শরীরে আসার পর ঘনবসতির কারণে জ্যামিতিক ভাবে এটা দ্রুত ছড়াচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলছে, একজন করোনাভাইরাস রোগী আরো ৩ থেকে ৪ জনকে এফেক্টেড করতে পারে। তার মানে ছড়ানোর হার অনেক বেশী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাণীর দেহ থেকে করোনাভাইরাস মানুষের কোষে প্রবেশের পরে মিউটেশন বা অভিযোজন করতে পারে। সে খুব দ্রুত এডাপ্টেশন করতে পারে।

আগামীনিউজ: হঠাৎ করেই করোনা মহামারি হলো কেনো?

কবিরুল বাশার: করোনাভাইরাসের ইতিহাস একদম নতুন কিছু না। ১৯৬০ সালে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে একটা মুরগীর দেহে। পরে ২০০৩ সালে তখন সেটাকে বলা হতো সার্স। এটাতে অনেক রোগী ইনফেক্টেড হয়েছিলো মারাও গিয়েছিলো। তারপর ২০১২ সালে সৌদি আরবে যখন উটের মাধ্যমে ছড়ায় সেটাকে বলা হলো মার্স ভাইরাস। এখন ২০১৯ সালে যেটা ধরা পড়লো সেটাকে আমরা বলছি করোনাভাইরাস। সার্স কিংবা মার্স করোনারভাইরাসের ৭ টা সেরোটাইপের একটা। ঘনবসতি, শুষ্ক মৌসুম প্রথম দিকে অবহেলার কারণে এটা মহামারি আকার ধারণ করেছে। যদিও চীনের বাইরেও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কম।

আগামীনিউজ: বাংলাদেশে করোনার ঝুঁকি কেমন?

কবিরুল বাশার: আমাদের দেশের সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রচুর মানুষ চীনে আসা যাওয়া করে। তবে এখন করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র চীন থেকেই নয়, অন্যদেশ থেকে যখন কোন মানুষ বাংলাদেশে আসছে বিমানবন্দর দিয়ে তখন তার থার্মাল স্ক্যানারে তার জ্বর মাপা হচ্ছে। তবে থার্মার স্ক্যানার দিয়ে জ্বর আমরা আইডেন্টিফাই করতে পারি। কিন্তু করোনাভাইরাস আইডেন্টিফাই করা যায় না। করোনাভাইরাস নিয়ে কোন নাগরিক যখন বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসে সেই মূহূর্তে তার জ্বর থাকতে না ও পারে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর হতে পারে। তাই ১৪ দিনের মধ্যে রোগীকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। সেটা ফ্যামিলির মাধ্যমে হোক কিংবা সরকারের মাধ্যমে হোক সেটা খুবই দরকারি।

আগামীনিউজ: কবে নাগাদ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে?

কবিরুল বাশার: সবাই বলছে দ্রুত ভ্যাকসিন চলে আসবে কিন্তু এটার ৭ টা সেরোটাইপের ভ্যাকসিন তৈরি করা এই মূহূর্তে অনেক কঠিন কাজ।

আগামীনিউজ: তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হতে কি করা যেতে পারে?

কবিরুল বাশার: ভাইরাসের কোন প্রোপার ট্রিটমেন্ট নাই। ভাইরাসের ট্রিটমেন্ট হচ্ছে রেস্ট নেওয়া আর প্রচুর পরিমানে পানি পান করা।

আগামীনিউজ: বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে আতংক তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না ফেসিয়াল মাস্ক?

কবিরুল বাশার: শুষ্ক মৌসুমে ভাইরাসজনিত অসুখগুলো এমনিতেই বাড়ে। তাপমাত্রা যখন বেড়ে যাবে, বাতাসে হিউমিডিটি বাড়বে তখন করোনার প্রকোপ কমে যাবে। করোনাভাইরাসে আসলে আতংকের কিছু নাই। অন্যান্য রোগের চাইতে এটা কিন্তু খুব ডেডলি ডিজিজ না। যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ৬০ এর উপরে। তাদের আরো বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিলো বিধায় তাদের সুস্থতার হার কম। যাদের শরীরের ইমিউন সিষ্টেম ভালো তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের ইফেক্টটা কম। কারণ ইমিউন ভাইরাসের সাথে ফাইট করবে। একজন মানুষ কতটা সুস্থ তার উপর নির্ভর করে তার দেহে করোনা প্রভাব ফেলবে। এ জন্য বয়স্ক এবং শিশুদের উপর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়নি। তবুও সরকার করোনা মোকাবেলায় অনেক সতর্ক। আমি মনে করি করোনাভাইরাস নিয়ে এখনই আতংকিত হবার মতো কিছু হয় নাই।  

আগামীনিউজ/মিঠু/মিজান 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে