Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মাত্র ১৮ বছর বয়সেই উঠেছিল রাজমুকুট


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৩:৪৭ পিএম
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই উঠেছিল রাজমুকুট

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত রানিদের একজন তিনি। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রের সেই টালমাটাল দশায় শক্ত হাতে টেনে ধরেছিলেন রাশ। ফিরিয়ে এনেছিলেন রাজতন্ত্রের পুরোনো গরিমা। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তার মাথায় উঠেছিল রাজমুকুট। 

একের পর এক আধুনিক সংস্কার, জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম তাকে করে তুলেছিল দেশের মানুষের নয়নের মণি। তিনি আর কেউ নন, ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের অন্যতম চর্চিত নাম রানি ভিক্টোরিয়া। রানির জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে বহু বই। তৈরি হয়েছে সিনেমা। তবু এখনও তার জীবনের অনেকটাই রয়ে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বাকিংহাম প্যালেসের অন্দরে আজও পাক খায় রাজপরিবারের তেমনই অনেক অজানা গল্প।

জন্মের মাত্র আটমাসের মাথায় বাবাকে হারান ভিক্টোরিয়া। রাজপরিবারের ভিতরে একা মায়ের আদরে আর শাসনেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। অবশ্য নিন্দুকেরা বলেন মেয়ের উপর মায়ের আদরের চেয়ে শাসনের পরিমাণই বেশি ছিল। পরবর্তীকালে নিজের শৈশব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার সেসব নৈরাশ্যের তিক্তস্মৃতি তুলে এনেছেন ভিক্টোরিয়া।

রাজপরিবারের মেয়ে, স্কুলে আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়ের সঙ্গে মেলামেশা করে, সেই ভয়ে কোনোদিন স্কুলে পাঠানোই হয় নি ভিক্টোরিয়াকে। সমবয়সী কারো সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায়নি সে। রাজবাড়িতেই একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়েছিল ছোট ভিক্টোরিয়ার জন্য। খুব অল্প বয়সেই জার্মান আর ইংরাজি, দুটো ভাষাতেই চৌকস হয়ে ওঠে ভিক্টোরিয়া। এমনকি ল্যাটিন আর ফ্রেঞ্চও তার পছন্দের ভাষা ছিল। তবে তার কোনো বন্ধু ছিল না। 

কাছাকাছি বয়সের এমন কেউ ছিল না, যার সঙ্গে প্রাণখুলে গল্প করা যায়। তার উপর প্রাসাদের কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা আর মায়ের কড়া শাসন। এ ব্যাপারে রাজকর্মকর্তা জন কনরয়ও কম যেতেন না। ভিক্টোরিয়াকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতেন তিনিও। একদিকে রাজপরিবারের নিয়ম - কানুন, সহবতশিক্ষা আর অন্যদিকে এই দুজনের প্রতিমুহূর্তের নজরদারি ভিক্টোরিয়ার শৈশবকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। 

প্রাসাদের এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানোরও অনুমতি ছিল না। মনখারাপ হলে এক কোণে বসে ছোট মেয়েটি একা একাই খেলা করতো পুতুল আর পোষা কুকুরদের সঙ্গে। এভাবেই ধীরে ধীরে কেনসিংটন প্রাসাদের ভিতর বেড়ে ওঠেন ভিক্টোরিয়া। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার মাথায় ওঠে রানির মুকুট৷ সিংহাসন লাভের পর রানি ভিক্টোরিয়ার প্রথম হুকুম কী ছিল জানেন ' এক ঘণ্টা একা থাকতে দাও।' হ্যাঁ , সারাদিনের দুর্বিষহ ঘেরাটোপ থেকে একঘণ্টার মুক্তি, এটাই ছিল রানি ভিক্টোরিয়ার প্রথম ইচ্ছে। 

রানি হওয়ার পরই আরো দুটো কাজ সেরে নিয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকে এক ঘরে মায়ের খাটেই রাত কাটাতে হয়েছে তাকে। রানি হয়েই তিনি নিজের ঘর থেকে বেশ কিছুটা দূরে বাকিংহাম প্যালেসের একটি প্রত্যন্ত অ্যাপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মাকে। আর নিজের কর্মচারী পদ থেকে বরখাস্ত করেছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ জন কনরয়কে। এভাবেই নিজের শৈশবকে হত্যা করার প্রতিশোধ নিয়েছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া।

১৮৩৬ সাল থেকেই ভিক্টোরিয়ার বিয়ে নিয়ে একটা চাপানউতোর শুরু হয়েছিল ইউরোপের রাজপরিবারগুলোতে। প্রস্তুত করা হয়েছিল রূপে, গুণে, বংশমর্যাদায় সেরা রাজকুমারদের নামের তালিকাও। সেসব নামের বেশ উপরের দিকেই ছিল নেদারল্যান্ডের যুবরাজ আলেকজান্ডারের নাম। তবে প্রথম আলাপে আলেকজান্ডারকে তেমন মনে ধরল না ভিক্টোরিয়ার।

ভিক্টোরিয়ার ১৭ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে জার্মানি থেকে লন্ডনের রাজপ্রাসাদে বেড়াতে আসে রাজপরিবারের আত্মীয়রা। তাদের মধ্যে ভিক্টোরিয়ার মামাতো আর খুড়তুতো ভাই-বোনেরাও ছিল। তখন কৈশোর ছেড়ে সদ্য যৌবনে পা দিয়েছেন ভিক্টোরিয়া। ভালো লেগে গেল নিজেরই মামাতো ভাই রাজকুমার অ্যালবার্টকে। সেই ভালো লাগা থেকে প্রেম। আর তার ঠিক পরের বছরই ব্রিটেনের রানি হিসাবে শপথ নিলেন ভিক্টোরিয়া।

রানি হওয়ার পরও বেশ কয়েকবার ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে অ্যালবার্টের। সমস্ত রাজপরিবারই তখন মুখিয়ে আছে আসন্ন শুভদিনের। তবে গোলমাল বাধল অন্যত্র। রাজপরিবারের অনুশাসন মেনে রানিকে তো বিবাহপ্রস্তাব দেয়া যায় না। অতঃকিম! এই প্রথম ব্রিটিশ এটিকেট ভাঙলেন ভিক্টোরিয়া। ইংরেজি আদবকায়দায় বিয়ের প্রস্তাব পুরুষেরাই দিয়ে থাকেন, মেয়েরা শুধু সম্মতি বা অসম্মতি জানায়। 

সেই প্রথমবার নিয়ম ভেঙে রানি নিজেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন ভালোলাগার পুরুষ অ্যালবার্টকে। অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না রানি ভিক্টোরিয়ার। বরং তিনি চেয়েছিলেন অ্যালবার্টকে আরো কিছুটা উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে, যাতে ভবিষ্যতে ব্রিটেনের রানির স্বামী হিসেবে তিনি নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে পারেন। পড়াশোনা শেষ করে বিদেশ থেকে ফেরার পর ১৮৪০ এর ১০ ফেব্রুয়ারি শুভদিন দেখে রানির সঙ্গে বিয়ে হয় প্রিন্স অ্যালবার্টের।
 
মাত্র ১৮ বছরের সদ্য তরুণী ভিক্টোরিয়ার মাথায় উঠল রাজমুকুট। বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে তখনো তার অভিজ্ঞতা তেমন নেই বললেই চলে। সেসময় লর্ড মেলবোর্ন ছিলেন ইংল্যান্ডের মন্ত্রীসভার প্রধান। রাজনৈতিকভাবে অনভিজ্ঞ রানি প্রথমদিকে যেকোনো পরামর্শের জন্য মেলবোর্নের উপরই নির্ভর করতেন।

প্রধানমন্ত্রী লর্ড মেলবোর্ন এই বুড়ো প্রধানমন্ত্রী জানতেন রানির হাতে দেশের অধিকাংশ ক্ষমতা। ক্ষমতার লোভে তিনি সবসময় চাইতেন রানি ভিক্টোরিয়াকে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। 

অল্পবয়সী ভিক্টোরিয়াকে নানারকম প্ররোচনাও দিতেন এই প্রৌঢ় মন্ত্রী। প্রথম প্রথম বিশ্বাসের বশে মন্ত্রীর ফাঁদে পা-ও দেন রানি। এইসময় বিপত্নীক প্রধানমন্ত্রী লর্ড মেলবোর্নকে ঘিরে সারাদেশে গুজব রটে যায় যে ভিক্টোরিয়া এই বৃদ্ধকেই বিয়ে করতে চলেছেন। রাজপরিবারের অন্দরে তো বটেই, এমনকি ইংল্যান্ডের মানুষের মধ্যেও সেসময় জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল ভিক্টোরিয়া আর প্রধানমন্ত্রী মেলবোর্নের সম্পর্ক নিয়ে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রানিকে 'মিসেস মেলবোর্ন'  বলে কটাক্ষও করা হত।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে