Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মধ্যপ্রদেশে গরু মন্ত্রিসভা


আগামী নিউজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২০, ০৭:০৮ পিএম
মধ্যপ্রদেশে গরু মন্ত্রিসভা

ঢাকাঃ মধ্যপ্রদেশে গরুর জন্য আলাদা মন্ত্রিসভা, আলাদা অভয়ারণ্য তৈরি হচ্ছে। গরুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বসানো হবে কর।

ভারতে এই প্রথম গরুর জন্য আলাদা মন্ত্রিসভা। যার নাম দেয়া হয়েছে কাউ ক্যাবিনেট। তৈরি করেছেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তবে এখানেই থামেননি তিনি। গরুদের বিচরণের জন্য তৈরি করছেন অভয়ারণ্য। আর গোশালা তৈরির জন্য তিনি এ বার কর বসাবেন বলে জানিয়েছেন। দেশের অন্যতম গরিব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখন গরুর জন্য যাবতীয় কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। বিরোধীদের তো বটেই, গরু-রাজনীতিতে তিনি অন্য বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের থেকেও অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। এই সব সিদ্ধান্তের জন্য তিনি সঙ্ঘ পরিবারের কাছ থেকেও সাধুবাদ পেতে পারেন।

গরু ক্যাবিনেট গঠনের সিদ্ধান্ত অভিনব। মোট ছয়টি মন্ত্রণালয়কে রাখা হয়েছে গোরু ক্যাবিনেটে। পশুপালন, বন, পঞ্চায়েত, কৃষি, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, গরুর রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণের বিষয়টি দেখবে ওই গরু মন্ত্রিসভা। ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক হয়ে গেছে। সেখানে রাজ্য জুড়ে গোশালা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কিন্তু গরুর কল্যাণের জন্য পয়সা আসবে কোথা থেকে? গোশালা তৈরি, গরুদের খাবার দেয়া, গরু অভয়ারণ্যের কাজ করতে তো কম টাকা লাগবে না! তার সমাধানও বের করে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। রোববার তিনি বলেছেন, ''গোমাতার কল্যাণ ও গোশালা তৈরির জন্য আমি সামান্য কর বসাব ভাবছি।'' তাঁর বক্তব্য, ''আমরা সকালে প্রথম রুটি গরুকে খাওয়াই। রাতে শেষ রুটি দিই কুকুরকে। এরকমভাবেই আমরা প্রাণীকে ভালোবাসি। তাই গরুর জন্য আমরা সামান্য অর্থ মানুষের থেকে নেয়ার কথা ভবছি।'' ফলে অদূর ভবিষ্যতে মধ্যপ্রদেশের মানুষকে গরু কর দিতে হতে পারে। 

ভারতে এখনো পর্যন্ত বাঘ, সিংহ, গন্ডারের জন্য অভয়ারণ্য আছে। বিশেষ কুমির প্রকল্প আছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কিন্তু গরুর অভয়ারাণ্য নেই। শিবরাজের এই পরিকল্পনাও অভিনব। আর ভারতে প্রায় সব রাজ্যেই গো-হত্যা বন্ধ। কিছু রাজ্যে মোষ মারা যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজস্থানে বেওয়ারিশ চরতে থাকা গরুর দল ভোটে ইস্যু হয়ে গেছিল। ক্ষুধার্ত বেওয়ারিশ গরু আটকাতে কৃষকরা রাত জেগে খেত পাহারা দিতেন। মধ্যপ্রদেশেও একই সমস্যা আছে।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসও তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রাজ্যে এক হাজার গোশালা তৈরি করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে কোনো বেওয়ারিশ গরু থাকবে না। এই প্রতিশ্রুতিতে কংগ্রেসের লাভ হয়েছিল বলেই নেতারা মনে করেন। রাজ্যে ১৫ বছরের বিজেপি শাসনের পর কংগ্রেসের সরকার হয়েছিল। কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিদ্রোহে বছরখানেকের মধ্যে সরকারের পতন হয়।

এখন শিবরাজ এসে গরুর কল্যাণে কাজ শুরু করছেন। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''শিবরাজ আসলে হিন্দুত্বের সুবিধা পেতে চাইছেন। গরু ক্যাবিনেট, গরু কর, গরুর অভয়ারণ্য, গোশালা তৈরির সিদ্ধান্ত সে কারণেই। এরপর স্থানীয় ভোটে তিনি এর সুফল পেতেই পারেন।''

করোনা রুখতে দিল্লিতে গোমূত্রের আজব পার্টি

গোমূত্র পার্টি
চীনে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে ছিল, তখনই বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির কোনও কোনও নেতা বলেছিলেন, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না। ভারতে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করার পরে সেই আশ্চর্য কাজটিই প্রকাশ্যে করে দেখাল গেরুয়া শিবির। আয়োজন হল গোমূত্র পার্টির।
 

বাবা চক্রপানি মহারাজ
স্বঘোষিত এই বাবাজির ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাম অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির সঙ্গে তাঁর ভালই ঘনিষ্ঠতা। এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কেরালায় বন্যায় সময় বলেছিলেন, যাঁরা গোমাংস খান, তাঁদের ত্রাণ দেওয়া উচিত নয়।

গোমূত্র ভক্ত
সেই চক্রপানি বাবাই এ বার দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিলেন। যেখানে প্রায় ২০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। গোমূত্র, গোবর, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয়েছিল পানীয়। ভক্তরা খেলেনও তা ঢকঢক করে। এতেই না কি প্রতিহত হবে করোনা।

বিজেপির লাইনেই বাবাজি
চক্রপানি মহারাজ প্রথম নন, এর আগে গোমূত্র খেয়ে করোনা প্রতিহত করার কথা বলেছিলেন আসামের বিজেপি নেত্রী সুমন হরিপ্রিয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে জেতা বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছিলেন গোমূত্র খেলে ক্যান্সারও আটকানো যায়।

কারা গেলেন পার্টিতে
শনিবার চক্রপানি মহারাজের গোমূত্র পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন। তাঁদের অধিকাংশই মহারাজের ভক্ত। বহু গরিব মানুষ নিছক অন্ধবিশ্বাস থেকে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।

মাথায় হাত চিকিৎসকদের
গোমূত্র পার্টির কথা শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, স্বঘোষিত বাবাজিরা বলছেন গোমূত্র খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে শরীরে। কিন্তু বাস্তব ঠিক তার বিপরীত। গোমূত্র এবং গরুর গোবর খেলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে।

হতে পারে যক্ষ্মা
দিল্লির এক চিকিৎসকের বক্তব্য, কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে গোমূত্র খেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্রবল শরীর খারাপ নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। তাঁর গোটা শরীরে যক্ষ্মা ছড়িয়ে গিয়েছে।

কে বোঝে কার কথা
এক দিকে চিকিৎসকরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলছেন, তখন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের মদতে স্বঘোষিত বাবাজিরা দিকে দিকে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

গ্রেফতার করা হোক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন আমলার বক্তব্য, চাইলে এই বাবাজিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সে কাজ হচ্ছে না।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে