Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পায়রা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২১, ১২:০৩ পিএম
পায়রা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ পটুয়াখালীর দুমকির লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে গণভবন থেকে পায়রা সেতু, দুমকি, পটুয়াখালী প্রান্তে ভার্চুয়ালী সংযুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পরই চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সেতুটি।

এসময় সেতু নির্মাণে দেশ ও বিদেশের যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। উদ্বোধনের পরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চার লেনের এই সেতুটি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা সবাই ঘরে বন্দী। আমার খুব ইচ্ছা ছিল যে স্থান দিয়ে নদীপথে যাওয়া-আসা  করেছি সেই নদীপথের ওপর নির্মিত সেতুর ওপর গাড়ি চালিয়ে যেতে। সেখানে গাড়ি চালিয়ে যাব, গাড়ি থেকে নেমে সেতুর ওপর একটু দাঁড়াব। করোনার কারণে পারলাম না। সেটা হবে ইনশাআল্লাহ। আমি আসবো।’

গণভবনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে দুমকি প্রান্তে উপস্থিত রয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি, বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার সংসদ সদস্যরা, সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর, শেখ হাসিনা সেনা নিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো. জিয়াউর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, বিএমপি পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, সড়ক বিভাগ বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবালসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পায়রা সেতুর উদ্বোধনের সঙ্গে ফেরি দুর্ভোগের আরও একটি দাগ মুছে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। এখন পদ্মার এপার অর্থাৎ কাঁঠালবাড়ি থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কপথে ফেরি বিড়ম্বনার কোনো অবকাশ রইল না। এতে দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি, গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। ঘুঁচবে বেকারত্ব। প্রসারিত হবে পর্যটনশিল্প।

উল্লেখ্য, পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী পয়েন্টে সেতুটি নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। কার্যাদেশে সেতু নির্মাণে ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। 

১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ৮২ ভাগ অর্থায়ন করে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং এপেক ফান্ড। নির্মাণ কাজ করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন। 

সেতু নির্মাণের নকশা কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। চার লেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হচ্ছে এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইন্ড প্রযুক্তিতে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও এই প্রযুক্তিতে নির্মিত। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি কেবল­ দিয়ে দুই পাশে সংযুক্ত রয়েছে। নদীর মাঝখানে একটিমাত্র পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। জলতল থেকে সেতুটির উচ্চতা নদীর ১৮ দশমিক ৩০ মিটার। বাতি জ্বলবে সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে। 

পায়রা সেতু চালুর মাধ্যমে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে আর ফেরির দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। আগে যেখানে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা এখন পায়রা সেতু চালু হলে সময় লাগবে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এ ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে কুয়াকাটা সমুদ্রবন্দর ও পর্যটনকেন্দ্রের আরও আকর্ষণ বাড়বে। 

নদীর দুই পাড়ে দুটি ও নদীর মধ্যে একটি- মোট তিনটি পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে পায়রা সেতু। নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সবচেয়ে দীর্ঘ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এ সেতুতে।

আগামীনিউজ/বুরহান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে