Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সনদেই যত গোলমাল


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২০, ০৯:৪৫ এএম
সনদেই যত গোলমাল

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ইতালিফেরত একজনের মাধ্যমে পরিবারের অন্য দুই সদস্য সংক্রমিত হয়েছিলেন। সংক্রমণ শুরুর প্রথম সপ্তাহে যতজন আক্রান্ত পাওয়া গিয়েছিল, তারা সবাই ছিলেন ইতালিফেরত কিংবা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি। এরপর ধাপে ধাপে বিস্তার ঘটিয়ে ভাইরাসটি মহামারির রূপ নেয়। উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে ইতালি থেকে ছুটে আসা কয়েক হাজার মানুষই বাংলাদেশকে করোনাঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন বলে মনে করেন অনেকে। এখন ইতালিতে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় বাংলাদেশে ঝুঁকি তৈরি করা ওই ইতালিফেরতরাই সে দেশে ফেরত যাচ্ছেন। কিন্তু ইতালি সরকার তাদের এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে। সম্প্রতি করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে ইতালিতে যাওয়া ৩৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য বিমান যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। একই সঙ্গে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া দেশগুলো এই সিদ্ধান্তের জন্য করোনার ভুয়া নেগেটিভ সনদকে দায়ী করেছে। তাদের দাবি, বাংলাদেশ থেকে নেগেটিভ সনদ নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সে দেশে করোনা পরীক্ষার পর পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ বিক্রি হয়। এ কারণে ইতালি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বাংলাদেশে কভিড-১৯ সনদ দেওয়ার প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি রয়েছে।

ভুয়া নেগেটিভ সনদের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও তোলপাড় চলছে। ভুয়া সনদ বিক্রির দায়ে এরই মধ্যে জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। করোনার ভুয়া সনদ বাণিজ্যের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করেছেন সংশ্নিষ্টরা। এতে করে ভবিষ্যতে বিশ্ব থেকে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কার কথাও বলেছেন অনেকে। গত বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এক ব্রিফিংয়ে এ আশঙ্কার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কিছু মানুষ সংক্রমণ লুকিয়ে তথ্য গোপন করে চলাফেরা করছেন, আবার কেউ করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে বিদেশে গিয়ে বিমানবন্দরে পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। এতে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং লাখ লাখ প্রবাসীকে অবিশ্বাস আর অনিশ্চয়তার আঁধারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান সংকটকে ঘিরে একশ্রেণির অসাধু চক্র প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে এবং মানুষ ঠকাচ্ছে। এ ধরনের প্রতারণা মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে নির্মম বাণিজ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব প্রতারণা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ভুয়া সনদের নেপথ্যে যারা : এই ভুয়া রিপোর্টের জন্য দায়ী কে, কীভাবে এই রিপোর্ট দেওয়া হলো অথবা এর নেপথ্যে কারা রয়েছে- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে সংক্রমণের শুরুতে একমাত্র আইইডিসিআরে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু সারাদেশের মানুষের নমুনা পরীক্ষা এই একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ অবস্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্প্রসারণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর চাপ বাড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দিকে সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আরটিপিসিআর মেশিন ও ল্যাব স্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে নিজস্ব ল্যাব নেই এমন কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে আরটিপিসিআর ল্যাবে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভুল রিপোর্টের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসা ব্যক্তির মৃত্যু-পরবর্তী পরীক্ষার ফল পজিটিভ পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের ভয়াবহ প্রতারণার খবর সামনে আসে। ওই দুটি প্রতিষ্ঠান নমুনা সংগ্রহ করে নিজেদের ইচ্ছামতো পজিটিভ ও নেগেটিভ সনদ দিয়ে আসছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে নমুনা সংগ্রহকারী বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে গত ৭ জুন অভিযোগ করেছিলেন নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশিদ রিয়াজ। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে তাকে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়। ভুয়া সনদবাণিজ্যের জন্য বহুল আলোচিত জেকেজির মালিক আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরীও একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, এদের প্রতারণার বিষয়টি মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সরে আসেন। করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে ভুয়া সনদ দেওয়া, বিনামূল্যের পরীক্ষা অর্থের বিনিময়ে করিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা ধরনের অনিয়ম করেছে জেকেজি ও রিজেন্ট। এদের মতো একইভাবে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতির দায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেবল একজন পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে করোনা-দুর্যোগ কাজে লাগিয়ে কেনাকাটা, নিয়োগবাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেও অন্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। কয়েকজন হয়ে উঠেছে আরও প্রভাবশালী।

দুর্নীতিবাজদের স্বপদে বহাল থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেকেজি, রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে শুরু করে করোনাকালে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতরা সবাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের ঘনিষ্ঠজন। অভিযোগ রয়েছে, তার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এসব দুর্নীতি ঘটছে। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্য খাতের চেইন অব কমান্ড একরকম ভেঙে পড়েছে। ডিজির সিন্ডিকেটের কর্মকর্তাদের ইশারা ছাড়া কোনো ফাইলই নড়ে না। এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলেছেন অনেকে।

সম্প্রতি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, জেকেজি-রিজেন্ট হাসপাতাল করোনা পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। ভুয়া সনদ দিয়ে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্ব ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তারা কী করল- এটি জানতে চাওয়া প্রয়োজন।

দায় স্বাস্থ্য বিভাগের- মত বিশেষজ্ঞদের : করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে অনিয়মসহ যাবতীয় ঘটনার দায় স্বাস্থ্য বিভাগের বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আরটিপিসিআরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার মান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে ভুল ও ভুয়া রিপোর্ট, ল্যাবরেটরি-ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অস্বাভাবিকতার কারণে এই পদ্ধতিটির সঠিক ব্যবহার করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে একটি প্রতারক চক্রকে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত করা হয়েছে। ওই চক্রটি নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া সনদ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়, করোনা বহনকারী ব্যক্তিকে নেগেটিভ সনদ দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে তারা। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন জড়িত না থাকলে এই চক্রটি মাসের পর মাস এই কার্যক্রম চালাতে পারত না। এই চক্রের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক সমকালকে বলেন, কোনো পরীক্ষার গুণগতমান নির্ভর করে ল্যাবরেটরির মান নিয়ন্ত্রণ এবং মান নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থার ওপর। এ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত আবশ্যকীয় উপাদান হচ্ছে সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করে সঠিক সময়ে ও তাপমাত্রায় তা ল্যাবরেটরিতে পরিবহন, মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি আর কিট ব্যবহার করে পরীক্ষা করা, প্রশিক্ষিত আর অভিজ্ঞ জনবল নিয়োজিত করা, পরীক্ষা পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছে কি-না তা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার মাধ্যমে তদারকি করা এবং সবশেষে ফলাফল যথাযথভাবে বিশ্নেষণ করে নির্ভুলভাবে রিপোর্ট তৈরি করা। এগুলোর যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় বর্তমান অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।


চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সমীর সাহা সমকালকে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গাইডলাইন অনুসারে মানসম্পন্ন করোনাভাইরাস কিটের নির্ণায়ক কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল নমুনা থেকে আরএনএ পৃথক করার উপযুক্ত কলাম এক্সট্রাকশন কিট এবং করোনাভাইরাসের ওআরএফআই জিন ছাড়াও কভিড-১৯ নির্দেশক যে কোনো দুটি জিন (ঘ এবং ঊ অথবা জফজঢ়) শনাক্ত করতে সক্ষম এমন আরটিপিসিআর কিট প্রয়োজন। সরবরাহকৃত কিটের গুণগতমান যাচাইয়ের স্বীকৃত পদ্ধতি হচ্ছে ব্যবহারের আগে ল্যাবরেটরিতে তুলনামূলক বিচার করে নেওয়া। দক্ষ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাই শুধু তা নিশ্চিত করতে পারেন। বিকল্প হিসেবে মান যাচাইকারী তৃতীয়পক্ষের অনুমোদনপত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়।

অধ্যাপক সমীর সাহা আরও বলেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ আসতে পারে। এই ফলস নেগেটিভ এড়ানোর জন্য শুধু এফডিএ অনুমোদিত কিট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলে মানহীন রিপোর্টের আশঙ্কা অনেকটা কেটে যাবে। একই সঙ্গে কলাম এক্সট্রাকশন করা গেলে শতভাগ নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু কলাম এক্সট্রাকশন করার জন্য অটোমেটিক মেশিন প্রয়োজন। হাতেগোনা তিন থেকে চারটি প্রতিষ্ঠানে এটি আছে। এর বাইরে সারাদেশে স্থাপিত ল্যাবগুলোতে ওই মেশিন নেই। অত্যাধুনিক মেশিনগুলো থাকলে শতভাগ নির্ভুল রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

করোনা সনদ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তোলপাড় : সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ২৭৬ যাত্রী নিয়ে যে বিমানটি রোমে অবতরণ করে তাদের মধ্যে ৩৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর পরই ইতালি সরকার বাংলাদেশিদের এক সপ্তাহের জন্য সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর গত রোববার রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে ১২৫ জন বাংলাদেশিকে সে দেশে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি বিশ্বজুড়েই ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ইতালির বহুল প্রচারিত এল মেসেজ্জারো পত্রিকায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ বিক্রি হয়। এ কারণে ইতালি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তিন হাজর ৫০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে কভিড-১৯-এর ভুয়া নেগেটিভ সনদ পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, ওই বাংলাদেশিরা বৈধভাবেই ইতালি যাচ্ছিলেন। তারা জানতেন না যে ইতালি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিমান পৌঁছানোর টাইম লিমিট ছিল। কিন্তু বিমানটি দেরি করায় সেই টাইমে যেতে পারেনি। টাইম লিমিট ক্রস করায় তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে ফেরত আসা ওই যাত্রীদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ১০ জুন বিমানের একটি ফ্লাইটে জাপানে যাওয়া যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ১১ জুন চীনের সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের এবং একই দিন দক্ষিণ কোরিয়ায় ঢাকা থেকে যাওয়া একটি বিশেষ ফ্লাইটের যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর দক্ষিণ কোরিয়াও বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আরব আমিরাত বিমান বাংলাদেশকে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিয়েও ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তা আবার স্থগিত করে। তবে গত ১৫ জুন থেকে যুক্তরাজ্য ও কাতারের সঙ্গে বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তুরস্ক ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে সব ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর তাগিদ থেকেই সারাদেশে প্রায় ৭৬টি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরই মধ্যে কয়েকজনের প্রতারণার খবর সামনে এসেছে। পুরো বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। একই সঙ্গে ল্যাবের মান বাড়ানোর জন্য আইইডিসিআরের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সারাদেশে স্থাপিত ল্যাবগুলোর মানোন্নয়নে তারা কাজ করবেন বলে জানান তিনি। (খবর : দৈনিক সমকাল, ১২ জুলাই, ২০২০) 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে