Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বড় ঝুঁকি


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২০, ০৮:৫৬ এএম
মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বড় ঝুঁকি

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। সে হিসাবে গতকাল রবিবার করোনাকালের ১২০ দিন বা চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে পঞ্চম মাস। চার মাস শেষে দেশে শনাক্তকৃত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। এসব রোগী শনাক্ত করতে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬২টি। শনাক্তের শতকরা হার ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ। প্রায় প্রতি ৫টি পরীক্ষায় ১ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৫২ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭২ হাজার ৬২৫ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য তাদের তুলনায় বাংলাদেশে একই সময়ের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃতের হার কম হলেও এখনো উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। তারা বলছেন, জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট হবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা এবং ঈদে মানুষের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করছে আমাদের করোনা পরিস্থিতি। তারা বলেন, চার মাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেও দেখা যায়, চতুর্থ মাসে মৃতের হার অন্য তিন মাসের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। শনাক্তের হার বেশি। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ এবং মৃতের হার কমছে। সুস্থ হওয়ার হার বেড়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তারা বলেন, প্রথম দফায় ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের ফিরে আসার খেসারত দিয়েছে দেশ। দ্বিতীয় দফায় পোশাক শ্রমিকদের একবার ছুটি দেওয়া ও আরেক দফা ফিরিয়ে আনায় সংক্রমণের পরিধি বেড়েছে। এখন তা গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এরপর ঈদুল ফিতরে মানুষের বাড়ি যাওয়া, রোজায় দোকানপাট, উপাসনালয় খুলে দিয়েও কিছুটা সংক্রমণ বেড়েছে। গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্তও ছিল আমাদের জন্য ভীতিকর। তবে ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনের মতো পরিস্থিতি প্রায় দুমাস চলার কারণে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিল। আবার প্রতিদিন শনাক্তের হার এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মানুষজন নিজেরাই সচেতন ছিল। পাশাপাশি চাকরি হারানো কারণে কেনাকাটায় এবং গণপরিবহনে ভিড় কম থাকায় সংক্রমণ যে হারে বাড়ার কথা ছিল তা বাড়েনি। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কী হবে সেটার জন্য ঈদুল আজহা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও আইইডিসিআরের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতান হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্য দেশের সঙ্গে একই সময়ে শনাক্ত ও মৃতের হার দিয়ে এখানে বিবেচনা করা যাবে না। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের লোড দেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারপ্রধান শুরু থেকেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা এবং পরবর্তী সময়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জোর করে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা খোলার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। এসব ব্যবসায়ীর কারণে রাজধানীতে একসঙ্গে লকডাউন কার্যকর করতে পারছে না সরকার। এখন আবার ঈদুল আজহা এবং আবার গ্রামে যাওয়ার একটা চাপ রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা করতে হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া উপায় নেই।

বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম আলমগীর হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত দুই সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সংক্রমণ স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। একটা পজিটিভ সাইন হলো, ভাইরাসের রিপ্রোডাকশন রেট দুই সপ্তাহে ১-এর নিচে নেমেছে। এটাকে আর-নট বলা হয়। এই আর-নট দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা হয়, একজন মানুষ কতজনকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে। আমাদের দেশে আর-নট হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে একজনেরও কম লোককে সংক্রমিত করার আশঙ্কা। ফলে এটা পজিটিভ সাইন। তিনি বলেন, তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, সবগুলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যদি কার্যকর থাকে, তবে জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। তবে তিনিও মনে করেন, ঈদুল আজহার গরু-ছাগলের হাটে এবং ঈদে মানুষের বাড়িতে যাওয়া আসার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, সংক্রমণ বাড়বে এবং আবারও স্থিতাবস্থা থেকে ঊর্ধ্বগতিতে উঠবে।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজীর আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, গরুর হাট আর ঈদের বাড়ি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করতে না পারলে অবশ্যই সংক্রমণ বাড়বে। পাশাপাশি রাজারবাগের মতো রাজধানীর বেশিরভাগ রেড জোনে একসঙ্গে লকডাউন কার্যকর করলেই এই মাসের শেষের দিক থেকে সংক্রমণ কমতে থাকবে। তবে এখন যে পরিস্থিতি তাতে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত পিক টাইম থাকবে।

চার মাসের মধ্যে প্রথম মাসে (৮ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল) মোট ৩ হাজার ৬১০টি পরীক্ষায় ১২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ওই সময় মৃত্যুবরণ করেছে ১২ জন এবং সুস্থ হয়েছে ৩৩ জন। এছাড়া আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছিল ৪৪৩ জনকে ও কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৮১০ জনকে। একইভাবে দ্বিতীয় মাসে (৭ এপ্রিল থেকে ৬ মে) পরীক্ষা ৯৬ হাজার ৩৬টি, শনাক্ত ১১ হাজার ৫৯৬ জন, মৃত্যু ১৭৪ জন, সুস্থ ১ হাজার ৭৪৭ জন, আইসোলেশন ২ হাজার ৬৭৮ জন এবং কোয়ারেন্টাইন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯০ জন। তৃতীয় মাসে (৭ মে থেকে ৫ জুন) পরীক্ষা ২ লাখ ৭২ হাজার ৭১৯টি, শনাক্ত ৪৮ হাজার ৬৭২ জন, মৃত্যু ৬২৫ জন, সুস্থ ১১ হাজার ২৪ জন, আইসোলেশন ৭ হাজার ৬৭২ জন এবং কোয়ারেন্টাইন ৯৫ হাজার ৭৩৩ জন। চতুর্থ মাসে (৬ জুন থেকে ৫ জুলাই) পরীক্ষা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৭টি, শনাক্ত ১ লাখ ২ হাজার ২৬ জন, মৃত্যু ১ হাজার ২৪১ জন, সুস্থ ৫৯ হাজার ৮২১ জন, আইসোলেশন ২০ হাজার ৭৯ জন এবং কোয়ারেন্টাইন ৭৯ হাজার ৫৯৯ জন।

শেষ মাসে শনাক্তের হার বেড়েছে, পরীক্ষা বৃদ্ধির মাত্রা কমেছে : পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম মাসে রোগী শনাক্তের হার ছিল গড়ে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি একশ পরীক্ষায় ৩ জনের কিছু বেশি করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় মাসে তা বেড়ে ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ, তৃতীয় মাসে আরও বেড়ে ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং চতুর্থ মাসে রোগী শনাক্তের হার হয়েছে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রথম ও দ্বিতীয় মাস মিলে রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট শনাক্তের মাত্র ৭ ভাগ। আর তৃতীয় মাসে শনাক্ত হয়েছে মোট রোগীর প্রায় ৩০ ভাগ এবং বাকি ৬৩ ভাগ রোগীই শনাক্ত হয়েছে চতুর্থ বা শেষ মাসে। অন্যদিকে প্রথম মাসে খুবই কম সংখ্যক পরীক্ষা হয়েছে। দ্বিতীয় মাস থেকে পরীক্ষা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়। শতকরা হিসাবে প্রথম মাস থেকে দ্বিতীয় মাসে পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫৬০ শতাংশ। তৃতীয় মাসে বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১৮৩ শতাংশ। কিন্তু চতুর্থ মাসে এসে পরীক্ষা বৃদ্ধির মাত্রা অনেক কমে গেছে। এ মাসে আগের মাস থেকে ৭৪ শতাংশ পরীক্ষা বেড়েছে।

মোট মৃত্যুর ৬০ ভাগই শেষ মাসে : দেশে করোনায় মোট দুই সহস্রাধিক মৃত্যুর মধ্যে ১ হাজার ২৪১ জনই মৃত্যুবরণ করেছেন চতুর্থ বা শেষ মাসে। প্রথম মাসে মৃত্যুবরণ করেছেন মাত্র ১২ জন, যা মোট মৃত্যুর এক-শতাংশেরও কম। দ্বিতীয় মাসে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ মৃত্যু। শেষের দুই মাসের মধ্যে তৃতীয় মাসে হয়েছে মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশ এবং চতুর্থ মাসে বাকি ৬০ শতাংশ। প্রথম তিন মাস মিলে ৪০ শতাংশ মৃত্যুর বিপরীতে শুধু চতুর্থ মাসেই হয়েছে ৬০ শতাংশ মৃত্যু। এছাড়া তৃতীয় মাসের দ্বিগুণ মৃত্যু হয়েছে চতুর্থ মাসে।

সুস্থ বেড়েছে শেষ মাসে : দেশে শনাক্তকৃত মোট করোনা রোগীর ৪৪ শতাংশের বেশি ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। সর্বমোট সুস্থ ৭২ হাজার ৬২৫ জনের মধ্যে ৫৯ হাজার ৮২১ জনই সুস্থ হয়েছেন চতুর্থ বা শেষ মাসে, যা মোট সুস্থের ৮২ ভাগ। এছাড়া মাসভিত্তিক সুস্থ হিসাব করলে, প্রথম মাসে শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন, দ্বিতীয় মাসে প্রায় ১৫ শতাংশ, তৃতীয় মাসে প্রায় ২৩ শতাংশ এবং চতুর্থ মাসে শনাক্ত হওয়া রোগীর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৫৯ শতাংশ।

আইসোলেশন বেড়েছে, কোয়ারেন্টাইন কমেছে : আইসোলেশনে নেওয়া রোগীর সংখ্যা প্রথম মাস থেকেই ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি রোগীকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে ২০ হাজার রোগীকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে শেষ মাসে, যা মোট আইসোলেশনের প্রায় ৬৭ ভাগ। অন্যদিকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো ব্যক্তিদের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি। প্রথম মাসে ৬৬ হাজারের পর দ্বিতীয় মাসে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৪ হাজার ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। পরের দুই মাসে কোয়ারেন্টাইন ক্রমান্বয়ে কমেছে। তৃতীয় মাসে ৯৫ হাজার এবং চতুর্থ মাসে ৭৯ হাজার জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। (খবর :দৈনিক দেশ রূপান্তর, ০৬ জুলাই, ২০২০) 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে