Dr. Neem on Daraz
Victory Day

একটা শেষ হয়ে যাওয়া গল্পের নাম ‘ভালো থেকো’


আগামী নিউজ | বাণী ইয়াসমিন হাসি প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২০, ০৯:২৯ পিএম
একটা শেষ হয়ে যাওয়া গল্পের নাম ‘ভালো থেকো’

ইয়াসমিন হাসি

সেদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল, অনেকক্ষণ বসে বসে ভাবলাম। ইদানীং খুউব অল্পতেই কাতর হয়ে পড়ি। সকাল বিকেল মনের রং পাল্টে যায়। গাছফুল, লতাপাতা অকারণে আকর্ষণ করে এবেলা ওবেলা। কবরের পাশে ফুলের গাছ লাগানো, তখনো মৃতের প্রতি পবিত্র অর্ঘ্য নিবেদনের পর্যায়ে। পাশের বাড়ির বুড়িটা অনেকদিন বিছানায় গড়িয়ে মরে গেছে, হঠাৎ করে বুঝতে পারি-বুড়ির কবর থেকে মাতাল এক ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। কেমন ভয় পেয়ে গেলাম, আকাশে তখন চকচকে থালার মতন পূর্ণিমার চাঁদ। অসহ্য সুন্দর আলোয় অদম্য আকর্ষিত ফুলের ঘ্রাণ, মুহূর্তে আমি গন্ধ মাতাল, পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম কবরের দিকে। সেদিন কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম মনে নেই। ভোর হতেই দুই একজন নামাজি কবর জিয়ারত করতে এসে বলছে-হাসনাহেনার গায়ে সাপ থাকে। আমি মুহূর্তে বুঝে নিয়েছিলাম-তোমার বিষাক্ত ঘ্রাণের তেলেসমাতি। আমি প্রথম উপলব্ধি করেছি-কাকে বলে মাতাল ঘ্রানানুভূতি। প্রিয় হাসনাহেনা, এখনো আমি তোমার গন্ধে মাতাল, যদিও এই শব্দগুচ্ছে মিটবে না সেই দেনা।

প্রিয় মানুষের সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর বিদায় নেওয়ার সময় সে বলবে, ভালো থেকো। বন্ধু দূরে চলে গেলে সেও বলে যাবে-ভালো থাকিস। আপনি হয়তো কারও কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন, যাওয়ার আগে আপনিও বলবেন-ভালো থেকো। সবাই চায় সবাই ভালো থাকুক। কিন্তু ভালো থাকার জন্যই তাকে পাশে প্রয়োজন ছিল, এই সহজ সত্যিটা  হয়তো কাউকেই বোঝানো যায় না। তাই ভালো থাকাটাই আর হয়ে ওঠে না।

ঠিক সন্ধ্যে নামার আগে। মন কেমন করা মুহূর্তরা। একা একা রিকশা ভ্রমণ...। অনেক দিন বাদে মুখস্থ নাম্বারে ডায়াল।ফোনটা রাখার পর মনে হলো কণ্ঠটা কি একটু ভারী শোনালো নাকি ঘুমে জড়ানো? ফোনটা হাতে নিয়ে মিনিট দুয়েক ভাবলাম। আবার কল করলাম। জিজ্ঞেস করলাম-'শরীর খারাপ?' ওপাশ থেকে-‘একটু'।
সে কোনদিনও আমার কিছুই ছিল না। তারপর ও ...তার গলার স্বরের একটু উঠানামা ই আমাকে আমূল কাঁপিয়ে দেয়।নিজেকে মাঝে মাঝে বড্ড অচেনা লাগে।

প্রকৃতি তার অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে হাজির। শুরু হয়েছে মেঘের খেলা। দুপুর, বিকেল আর সন্ধ্যা আলাদা করা ক্রমেই মুশকিল হয়ে পড়ছে। দিনগুলো সংক্ষিপ্ত কিন্তু একটানা শুয়ে থাকায় সময় যেন কাটতেই চায় না। দুপুরের পর থেকে কি এক বিষন্নতা মন খারাপী হাওয়া বয়ে যায় শরীরে-মনে। কারো সাথে আগ বাড়িয়ে গল্প করার অক্ষমতা আমার নিঃসঙ্গতা আরো তীব্র করে। ফেসবুকে ঢু মারি। ভার্চুয়াল বন্ধুদের কেউ কেউ হাই, হ্যালো, কেমন আছো... জাতীয় প্রশ্ন করে। আমি হ্যাঁ-না'র ধার দিয়ে যাই না। এড়ানোর চেষ্টা কখনো সফল হয়, কখনো হয় না। শব্দ বিরক্তি বাড়ায় তাই মোবাইল সবসময় সাইলেন্ট মোডে থাকে। কেউ কেউ নিয়ম করে প্রতিদিন ফোন করে। স্ক্রিনে চোখ না রেখেই কখনো কখনো সাড়া দিই।

এক পশলা বৃষ্টির পর আকাশ থেকে যেমন মেঘ সরে যায়, মনের আকাশে জমে থাকা পুরনো মেঘগুলো সেভাবে সরাতে ইচ্ছে করে। মনে না চাইলেও নিত্য যে অভিনয় করে যেতে হয়, তারচেয়ে একটু কঠিন হলেও সত্যিটাতে বাস করার তৃপ্তি অসীম। 

‘এই মেঘ, এই স্বপ্ন, ভালোবাসা আমি লিখে দিয়ে যাবো, তোমার উদ্দেশে। আর সব অস্ত যাবে, শুধু এই গান অস্ত যাবে না কখনো।' দুইটা মানুষের মধ্যে প্রেম ছাড়াও আরো অনেক কিছু থাকতে পারে। মায়া থাকে, নির্ভরতা থাকে, ভালোলাগা থাকে, মন কেমন করা থাকে। আরো কত কি থাকে। সব সম্পর্কই প্রেম না; কিছু সম্পর্ক হলো সম্পদ। সম্পর্ককে আটপৌরে বা সরলীকরণ করাটাই মস্ত বড় ভুল। কেউ যদি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারে, তবে তার সাথে কথা বলার জন্য পাগলামি গুলো ছেড়ে দাও। কেউ যদি তোমাকে কষ্ট দিয়ে স্থির থাকতে পারে, তবে তার জন্য অস্থির হওয়াটাকে ভুলে শক্ত হও। কেউ যদি তোমার মূল্য না বোঝে, তবে তার কাছে বারবার নিজের গুরুত্ব চাওয়া থেকে বিরত থাকো। কেউ যদি তোমাকে ছেড়ে ভালো থাকতে পারে তবে তাকে ভালো থাকতে দাও।

অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রেও কিছুটা হিসেবী হওয়া উচিত। অনুভূতি অপাত্রে দানের জন্য নয়। যার তার জন্য, যেখানে সেখানে এগুলো বিলি করবেন না। বরং সেই মানুষটার জন্য জমিয়ে রাখুন যার কাছে আপনার অনুভূতিগুলো পৃথিবীর আর সবকিছুর চেয়ে দামী। চোখের জলেও অনেক সুখ থাকে। অনেক পাওয়ার হিসেব লুকানো থাকে। ভালোবেসে কারো জন্য কাঁদতে পারাটাও অনেক সুখের। কাউকে কাঁদানোতেও সুখ আছে। খুব সহজে কি চোখে পানি আসে? যার তার জন্য কি আসে? বুকের খুব গভীরের কারো জন্যই মানুষ কাঁদে। খুব আপন কেউ ই কাঁদাতে পারে...দূরের কেউ না।

কাউকে কাউকে শুধু নিউরনের চিনচিন ব্যাথায় অনুভব করা যায়। সব ঠিকঠাক চলার পরও কখনো কখনো কোন কারণ ছাড়াই মন কেমন করে। কথার মাঝেই কথারা হারিয়ে যায়; সমস্ত চিন্তা এক অচেনা মোড়ে থমকে দাঁড়ায়। একটা শেষ হয়ে যাওয়া গল্পের নাম ‘ভালো থেকো’। জীবন, সময় এবং বাস্তবতা মানুষকে কখনো কখনো এমন এক অচেনা মোড়ে দাঁড় করায়, যেখান থেকে ফেরার কোন রাস্তা জানা থাকে না। জীবনের ফেলে আসা দিনের সত্যি যাচাই করতে গেলে জীবনকে আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। কিন্তু সময় এবং জীবন কোনোটাই সেই সুযোগ দেয় না যে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

আগামীনিউজ/জেএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে