Dr. Neem on Daraz
Victory Day
মিলারদের কারসাজি

মন্ত্রণালয়ের তদারকিতেও চালের দামে ঊর্ধ্বগতি


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০, ০৩:০৭ এএম
মন্ত্রণালয়ের তদারকিতেও চালের দামে ঊর্ধ্বগতি

ঢাকা: ধানের দাম বাড়তি এবং বৈশাখে নতুন ধান না আসা পর্যন্ত চালে দাম কমবে না- মিলারদের এমন অজুহাতে গত বছরের নভেম্বর থেকেই এর দামে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। তবে মিল মালিকদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর কয়েক দিনের জন্য দাম কিছুটা কমলেও আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে মিলারদের কারসাজিতে মিলগেটে চালের দাম বস্তায় (৫০ কেজি) সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের দাম। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তাপর্যায়ে। যদিও এই দাম নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক মনিটর করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সেল। কিন্তু অদ্যাবধি আসেনি কোনো ইতিবাচল ফল।


বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে মিলাররা চালের দাম বাড়ালেও সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম আরও কমেছে। কিন্তু চালের দাম কমেনি। দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত চাল মজুদ ও মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার পরও মিলারদের কারসাজির কারণে ভোক্তারা কম দামে চাল কিনতে পারছেন না; যার দায় সরকারের ওপরে গিয়ে পড়ছে।

শুক্রবার খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিসংখ্যানে জানা গেছে, (২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সরকারি গুদামে মোট ১৮ লাখ ১৭ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টন এবং গম ৩ লাখ ৬২ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে খাদ্যশস্যের মজুদ সন্তোষজনক। আর মাসিক চাহিদা ও বিতরণ পরিকল্পনার তুলনায় পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতির কোনো সম্ভাবনাও নেই বলে মন্তব্য করা হয় পরিসংখ্যানে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, চালের দাম কমাতে সব পর্যায়ে তদারকি হচ্ছে। মিলারদের অজুহাতও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম পেলে ভোক্তা আইনে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, শুধু চাল নয়, অন্যান্য পণ্যের দামও যাতে না বাড়ে সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে।

রাজধানীর নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৫ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৭ টাকা। প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা কেজি; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৩৬-৩৭ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩৩ টাকা কেজি। রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন শুক্রবার বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়তি। কারণ পাইকাররাও মোকাম মালিকদের কাছ থেকে বেশি দরে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন; যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। এর পেছনে মিলারদের কারসাজি রয়েছে।

এদিকে রাজধানীর সর্ববৃহৎ চালের আড়ৎ বাদামতলী ও কারওয়ানবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার পাইকারি দরে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫১ টাকা। ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪৪ টাকা। প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪৬ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৩৬ টাকা কেজি; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকা। মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৩১ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২৮ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়ত আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান  বলেন, মিলারদের কারসাজি থামছে না। তারা সব ধরনের চালের দাম শুধু বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, মিল-মালিকরা গত বছরের নভেম্বর থেকে দুই ধরনের অজুহাত দিয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছে। প্রথম অজুহাত ধানের দর বাড়তি। আর দ্বিতীয় অজুহাত বৈশাখে নতুন চাল এলে সব ধরনের চালের দাম কমবে। কিন্তু এই দুই অজুহাত তাদের মনগড়া। অতি মুনাফা লুটতে তারা এ কৌশল অবলম্বন করছে। তাই সরকার সংশ্লিষ্টদের কঠোর মনিটরিং করতে হবে। তাহলে তাদের অতি মুনাফার ছক বের হয়ে আসবে।

এছাড়া শুক্রবার নওগাঁ, দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ১৮০০ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয় ১৫০০ টাকা। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি বস্তা বিআর-২৮ চালে দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা। এছাড়া প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ২৪৫০ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২৩০০ টাকা। সেক্ষেত্রে ১৫ দিনে দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। প্রতি বস্তা নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয় ২২০০ টাকা। বস্তায় দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৪৫০ টাকা; যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৩৫০ টাকা। বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোসাদ্দেক হুসেন বলেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে চালের ওপর। ধানের দাম বাড়লে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাই সর্বোপরি চালের দাম একটু বাড়তি।

জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, চালের দাম কমাতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল গঠনের পরও ভোক্তারা সুফল পায়নি। বর্তমানে চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক। কারণ দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ধানেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এর কারণ অনুসন্ধান করে দাম বাড়ানোর পেছনে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়া দাম যেন আর না বাড়ে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, মিল-মালিকরা বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বললেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) ধানের দাম কমেছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। শুক্রবার দিনাজপুরের বৃহৎ ধানের হাট দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায়, মোটা হাইব্রিড ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগে প্রতি বস্তা বিক্রি হয় ১৫০০ টাকা। প্রতি বস্তা বিনা-৭ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৬০০ টাকায়। সুমনস্বর্ণ ধান বিক্রি হতো ১৫৫০ টাকায়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ টাকায়।

প্রসঙ্গত, ২৯ জানুয়ারি বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- চালের দাম সহনীয় রাখতে বাজারের ওপর নজরদারি প্রতিষ্ঠায় সরকার বিশেষ টিম গঠন করে। পাশাপাশি খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। কারসাজির মাধ্যমে কেউ যাতে চালের দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য এ পদক্ষেপ নেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধানের সঙ্গে চালের দামের সামঞ্জস্য রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই যাতে বাড়তি সুবিধা না নিতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। সহনীয় দামে ভোক্তার চাল কেনার সুযোগ এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে কেউ যদি কারসাজির চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী। কিন্তু এরপরও চালের দাম কমেনি বরং আরেক দফায় বেড়েছে।

সূত্র:যুগান্তর

আগামীনিউজ/নাঈম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে