Dr. Neem on Daraz
Victory Day
বন্দরকে গতিশীল করতে নতুন সফটওয়্যার

দেশের প্রথম ডিজিটাল কাস্টম হাউস বেনাপোল


আগামী নিউজ | মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৬, ২০২১, ১২:০৫ পিএম
দেশের প্রথম ডিজিটাল কাস্টম হাউস বেনাপোল

ফাইল ফটো

আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল, রাজস্ব ফাঁকি রোধ ও শুল্কায়নে স্বচ্ছতা আনতে বিকম (বাংলাদেশ কাস্টমস অফিস ম্যানেজমেন্ট) নামে একটি নতুন সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছে বেনাপোল কাস্টম হাউস। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বেনাপোল কাস্টম হাউসই দেশের একমাত্র ডিজিটাল কাস্টম হাউসে উন্নীত হলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদনক্রমে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে সময় সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি রোধ সম্ভব হচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক ও পণ্যের তথ্য সংগ্রহ করতে জিরোপয়েন্টে ইতিপূর্বে কার্গো শাখায় কাস্টমস, বন্দর ও বিজিবি যৌথভাবে এন্ট্রি করত। ফলে একটি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে সময় লাগতো ৩০ মিনিট। বর্তমানে ‘বিকম’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বারকোড ব্যবহার করায় সময় লাগছে মাত্র ৫ মিনিট। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। ভারতীয় এসব ট্রাকের অবস্থান ও কোন শেডে পন্য আনলোড হচ্ছে তা মুহুর্তেই জানা যাচ্ছে বিকমের মাধ্যমে। আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের বিশ্লেষণওদ্রুত সম্ভব হয়। দেশের যেকোন স্থানে অবস্থান করেও আমাদনি-রফতানি পণ্যবাহি ট্রাকের সুনির্দিস্ট স্থান নির্ণয় করা যাচ্ছে। এছাড়াও মুহুর্তেই জানা যাচ্ছে, বকেয়া রাজস্ব, ব্যাংক গ্যারান্টি, আন্ডারটেকিং ও সিএন্ড এফ এজেন্ট লাইসেন্সের সকল তথ্য একযোগে যে কোনো অফিসার জানতে পারছেন।

বেনাপোল কমিশনার আজিজুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো: নেয়ামুল ইসলাম এর একক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে এই প্রথম কাস্টম হাউসে বিকম সফটওয়্যার তৈরী করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ১৫টি মডিউলের মাধ্যমে আমাদনি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল, শুল্কায়ন স্বচ্ছতা ও প্রতিদিন পাসপোর্টযাত্রীদের যাতায়াত মনিটরিং, চোরাচালানী পণ্য আটকসহ কাস্টমস ও বন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষন করছেন কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনারসহ এনবিআর। এর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পণ্য ডিটেক্ট করা দ্রত সম্ভব হয় এবং বন্দরের গুদামে সংরক্ষিত বাজেয়াপ্ত মালামাল সমূহের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়। পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতি করা সম্ভব নয় বলে এটি অত্যন্ত নিরাপদ একটি সফটওয়্যার।  

বেনাপোল কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো: নেয়ামুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন যুক্তরাস্ট্রে পড়াশুনার সুবাদে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করার সুযোগ হয়েছে। বিবেকের তাড়নায় এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মুখাপেক্ষী না হয়ে স্বল্প খরচে (অ্যাসাইকুডা বা ভ্যাট অনলাইন এর তুলনায় ১৫ হাজার ভাগের এক ভাগ খরচ) নিজস্ব উদ্ভাবনীতে টিমের সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করি ২০২০ শেষ ভাগে।

ওই বছরের ২১ অক্টোবর বেনাপোল কাস্টম হাউস কমিশনার কর্তৃক আমাকে দলনেতা করে আইসিটি টিম গঠন (কমিটির অন্যান্য সদস্য উপ কমিশনার এসএম শামীমুর রহমান, সহকারি কমিশনার এইচ এম আহসানুল কবীর, প্রোগ্রামার আকতারুজ্জামান, সহকারি প্রোগ্রামার নাজমুল ইসলাম, ও রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম রবিউজ্জামান) করেন। ওই বছর বিজয় দিবসে বেনাপোল কাস্টম হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে সফটওয়্যারটির যাত্রা শুরু হয়। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি আহবায়ক, ইনোভেশন টিম এনবিআরের নিকট চিঠির মাধ্যমে উদ্ভাবনের সংবাদ জানানো হয় এবং উপস্থাপনের সুযোগ চাওয়া হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ইনোভেশন টিম এনবিআরের সম্মুখে সফটওয়্যারটি উপস্থাপন করেন। ইনোভেশন টিম উদ্ভাবনী সফটওয়্যারটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

সূত্র জানায়, ৮ মার্চ এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভ্যাট ও কাস্টমস এর সকল সদস্য, জুমে সংযুক্ত সকল কমিশনার, আইটির সকল উধর্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে বেনাপোল কাস্টম হাউস কর্তৃক উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ‘বিকম’ উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপনার পর সকল সদস্য এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। এনবিআরের অধীন অন্যান্য কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনের জন্য একই সফটওয়্যারের ব্যবহারে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়াও এনবিআরের চেয়ারম্যান কর্তৃক ইনোভেশন পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়।

সফটওয়্যার সম্পর্কে জানা গেছে, এটি এনবিআরের অধীন সকল কাস্টম হাউস, ভ্যাট ও শুল্ক স্টেশনের জন্য ব্যবহার উপযোগী, সম্পূর্ণ ওয়েব বেইজড (রিয়াল টাইম ডাটা), কাস্টমাইজড সফটওয়্যার, দ্রুত ডাটা সর্টিং এবং রিপোর্ট জেনারেটিং করা সম্ভব, লগইন ও ইউজার আইডি পাসওয়্যার্ড দিয়ে ব্যবহার করতে হয়, ডাবল লেয়ার সিকিউরিট সিস্টেম; ফলে সহজে হ্যাক করা সম্ভব নয়। প্রতিটি দপ্তর পছন্দ মতো মডিউল যোগ ও বিয়োগ করতে পারবে। কাস্টম হাউসের অফিস ম্যানেজমেন্টের সম্ভাব্য সকল কিছু একটি সফটওয়্যারে আনয়ন, মোবাইল ফোনে ব্যবহার উপযোগী, স্বল্প মূল্যে (অ্যাসাইকুডা বা ভ্যাট অনলাইন এর তুলনায় ১৫ হাজার ভাগের এক ভাগ খরচ) স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় নির্মিত সফটওয়্যার।

এ সফটওয়্যারে মোট ১৫টি মডিউল রয়েছে। যেমন-ভেহিক্যাল ট্রাকিং (ইনকামিং ও আউটগোইনং) মডিউল, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রোফাইলিং, বিচারিক মামলা সম্পর্কিত তথ্য, বকেয়া রাজস্ব আদায়, ব্যাংক গ্যারান্টি, অঙ্গীকারনামা ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, অনলাইন ছুটি মডিউল, অনলাইনে বাসা বরাদ্দ ও রেস্ট হাউস বুকিং, স্থানীয় রাজস্ব অডিট, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট, কাস্টমস ভ্যালুয়েশন অডিট, কেমিক্যাল ল্যাব টেস্ট মডিউল, সিএন্ডএফ লাইসেন্স হালনাগাদ তথ্য, গুদামে রক্ষিত মালামালের তথ্য।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে