Dr. Neem on Daraz
Victory Day

গাইবান্ধার তৈরী কচুরীপানার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বিদেশে


আগামী নিউজ | মানিক সাহা, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২১, ১২:৩৪ পিএম
গাইবান্ধার তৈরী কচুরীপানার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বিদেশে

আগামী নিউজ

গাইবান্ধাঃ জেলার পিছিয়ে পড়া উপজেলা ফুলছড়ি। বন্যা, নদীভাঙ্গন সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় এই উপজেলার মানুষদের। জীবন সংগ্রামে প্রতিটি ধাপে তাদের মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বাস্তবতার।

ভৌগলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে নদী বেষ্টিত হওয়া এ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা চর বেষ্টিত। ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বহুমানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে। বন্যায় ফসলহানী ঘটে প্রতি বছরই। তবুও থেমে নেই এই উপজেলার সংগ্রামী মানুষের পথচলা। জীবন সংগ্রামে ঘুরে দাঁড়াতে নিরন্তর প্রয়াস তাদের।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রামের সুভাষ চন্দ্র বর্মণ যেন আলোক বর্তিকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বন্যা আর নদী ভাঙ্গণে নি:স্ব হয়ে যাওয়া মানুষকে পথ দেখাতে। তিনি গাইবান্ধা সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর, তালতলা এবং ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া গ্রামে গড়ে কচুরীপানাভিত্তিক হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

এসব কেন্দ্রে কাজ শিখে এখানেই কাজ করছেন প্রায় ২৫০ জন নারী। দাড়িয়াপুর, তালতলা, কঞ্চিপাড়া, ভাষানচর, মদনেরপাড়া বাগুড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে নারীরা কাজ করছেন কচুরীপানা নিয়ে। এতদিন কচুরীপানা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হলেও এখন তাঁরা কচুরীপানা দিয়ে তৈরী করছেন দৃষ্টিনন্দন ফুলের টব, ঝুড়ি, ভ্যানিটি ব্যাগ, মাদুর, ফুলের ডালা সহ নানা ধরণের বাহারী তৈজসপত্র।

যে কচুরীপানা ডোবা-নর্দমায় অবহেলায় পড়ে থাকে এবং পঁচে নষ্ট হয় এখন তা দিয়ে তৈরী হরেক সৌখিন সামগ্রী দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এই হস্তশিল্পকে কাজে এখানকার গরীব নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি সাংসারের স্বচ্ছলতা আনতে ভুমিকা রাখছেন।

ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রামের দেখা হয় এই পেশায় কর্মরত ২৫-৩০জন মহিলার সাথে। তাদেরই একজন মৌসুমী আকতার তমা। তিনি জানান, সুভাষ চন্দ্র বর্মণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে নানা ধরণের দৃষ্টিনন্দন হাতব্যাগ, ফুলের টব, ফুলদানী, ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরী করে প্রতিদিন ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা আয় করছেন। ব্রহ্মপুত্রের ভাষানচরে এই হস্ত শিল্পের প্রশিক্ষক আশুরা বেগম জানান, তিনি বর্তমানে ৭০-৮০জন নারীকে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন।  প্রথমে শিখতে গিয়ে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও পরে যখন এ কাজ শিখে পরিবারে জন্য আয় করেন তখন কাজের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।  

এই অঞ্চলে এই শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা সুভাষ চন্দ্র বর্মণ জানান, গত ২০০০ গাজীপুরের বাইলের একটি তৈরী পোষাক কারখানায় তিনি চাকুরি নেন। এক সময় তাঁর মায়ের মৃত্যুতে বাড়িতে আসেন এবং তখন তার চাকুরি চলে যায়, বন্ধ হয়ে যায় তাঁর আয় রোজগারের পথ। কাজের সন্ধানে ঘুরতে থাকে বিভিন্ন জায়গায়। এক সময় হস্ত শিল্প কারখানার সাইনবোর্ড দেখতে পান তিনি। সেখানে গিয়ে কথা বলে কাজ শেখেন এবং দৈনিক আয় শুরু করেন। ওই কারখানায় প্রায় পাঁচ বছর কাজ করার পর ২০১৬ সালে চলে আসেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে।

প্রথমে ২৫ জন মহিলা দিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন তার চারটি কারখানায় দৈনিক ১০০ জন কর্মী কাজ করছেন। পণ্যর আকারের ওপর ভিত্তি করে মজুরি দেন। প্রতিটি পণ্যসামগ্রী তৈরিতে ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দেন। তাঁর কারখানার তৈরিকৃত পণ্যসামগ্রী গাজীপুর সেনাকল্যাণ ইকোবাংলা জুট মিল কোম্পানীতে বিক্রয় করেন।

বর্তমানে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার কচুরিপানার হস্তশিল্প পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করেন। ইকোবাংলা জুট মিল থেকে এসব পণ্য নেদারল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানী হয়। সুভাষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, সরকারীভাবে সহযোগিতা পেলে এ হস্তশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে বেকারদেরকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন তিনি।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে