Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বীমা খাত


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২১, ০১:২৩ পিএম
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বীমা খাত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, বীমা হোক সবার’ এই শ্লোগানে পালিত হচ্ছে জাতীয় বীমা দিবস। বীমা দিবসে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।দেশের সম্ভাবনাময় আর্থিক খাতগুলোর অন্যতম বীমা খাত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে যে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা গড়ে উঠেছে, তা থেকে বের হতে পারছে না এই খাত। ফলে স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই বীমা খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মাত্র ৮% শতাংশেরও কম জনসংখ্যা ইনস্যুরেন্সের কাভারেজেরও আওতায় রয়েছে। অথচ উন্নত বিশ্বে এই হার প্রায় শতভাগ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহককে ঠিকমতো বীমা দাবি পরিশোধ না করা, মাঠপর্যায়ের বীমা কর্মীদের গ্রাহকের কিস্তির টাকা নিয়ে প্রতারণাসহ নানা কারণে এ খাতে ইমেজ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বীমার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বীমা খাতের উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টিকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কর্মীদের অবাস্তব টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারা সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বীমা করতে প্ররোচিত করার পর প্রথম বছর বীমার কিস্তি পরিশোধ করলেও দ্বিতীয় বছরে গিয়ে এটি আর থাকে না।’ তিনি বীমা কোম্পানিগুলোর সূত্র উল্লেখ করে বলেন, ‘দ্বিতীয় বছরে গিয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গ্রাহক অনিয়মিত হয়ে পড়েন। এর কারণ হলো মাঠে যারা গ্রাহকদের নিয়ে কাজ করেন তাদের কোম্পানিগুলো অবাস্তব টার্গেট দেয়। তাদেরকে ব্যাপক পরিমাণে ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। যে কারণে মাঠপর্যায়ের ওই বীমা কর্মীরাও গ্রাহকদের যেকোনো উপায়ে প্রলোভন দেখিয়ে বীমা করানোর চেষ্টায় লিপ্ত হন। এতে গ্রাহকরা প্রথমবার বীমার কিস্তি দিলেও পরবর্তীতে তার মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেওয়ায় পরের কিস্তিগুলো আর দিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।’

বীমা খাত পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অ্যাকচুয়ারি সংকট, বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে যথাযথ ইনসেনটিভ না দেওয়াকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর ভূমিকাকে আরো জোরালো করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশে মাত্র ৩ জন অ্যাকচুয়ারি রয়েছেন। যাদের মধ্যে একজন পার্টটাইমার এবং যিনি বেশির ভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকেন। অথচ এত বড় একটা শিল্পের জন্য প্রয়োজন ছিল হাইলি স্কিল্ড অ্যাকচুয়ারি। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে নির্বাহী কর্মকর্তারাও ততটা দক্ষ নন। ফলে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়া রুগ্ণ এই শিল্প এগোতে পারছে না। সবার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হলেও দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র মাঠপর্যায়ের বীমা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদেরকে মূলত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কীভাবে পাবলিককে প্ররোচিত করে পলিসি করানো যায় সে বিষয়ে। জোর করে চাপিয়ে ইনস্যুরেন্সের পলিসি করানোর কারণে একজন গ্রাহক অনিয়মিত হয়ে পড়ার পাশাপাশি সে তার আশপাশের সবাইকে বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তাটি পৌঁছে দেয়। ফলে এভাবেই ধীরে ধীরে এই শিল্প সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ দরকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। কারণ তাদের মনোভাবের পরিবর্তন আনতে না পারলে এই সংকট দূর হবে না।

ইনস্যুরেন্সে মাথাপিছু যে ব্যয় আমাদের দেশে হয় সেটি বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করছে। ২০১৯ সালের একটি তথ্য বলছে, লাইফ ইনস্যুরেন্সের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ব্যয় মাত্র ১৫০ টাকা। যেখানে সিঙ্গাপুরে ৫১ হাজার ৯২৮ টাকা, ৩৬৯৩ টাকা। অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে লাইফ এবং নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পেইড আপ ক্যাপিটাল বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তবে আশার কথা হলো বীমা শিল্পের এই সংকট দূর করতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার ফলে বর্তমানে এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করেছে। আইডিআরএ যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম বীমা সেক্টরের অটোমেশন তথা ডিজিটালাইজেশন।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব  বীমা শিল্পের পুনর্গঠনে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। তার মধ্যে দু-একটা প্রয়োগ করেছি। এবং তার ফলও পেতে শুরু করেছি। পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইনস্যুরেন্স নাম্বার ওয়ান আর্থিক খাত হলেও বাংলাদেশে সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। আমরা শুরু করেছি অনেক দেরিতে। আমাদের হাতে অনেকগুলো নতুন পদক্ষেপ রয়েছে। নন-লাইফ ইনস্যুরেন্সের বিষয়ে কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে আশা করি শিগগিরই এই সেক্টর দেশের নাম্বার ওয়ান আর্থিক খাতে পরিণত হবে।’

আইডিআরএ চেয়ারম্যান মনে করেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সেক্টর নিয়ে অভিযোগের পরিমাণ বেশি। কিন্তু আর্থিকভাবে এই সেক্টরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা খুবই কম। এ কারণে বীমা একটি একটি বড় সেক্টর হওয়া সত্ত্বেও এগোতে পারছে না।

তিনি জানান, আমরা অটোমেশন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দিচ্ছি।

আগামীনিউজ/এএইচ   

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে