Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২১, ০৩:২৩ পিএম
নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

ছবি: সংগৃহীত

ডাকাঃ নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অবহেলিত অঞ্চলে সরকারের উৎসাহে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব এলাকার অবহেলিত মানুষের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও এসব এলাকায় আবার সরকারি কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।

এতে এক দিকে মিনি গ্রিডের উৎপাদিত বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, অপর দিকে জাতীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে। পাশাপাশি চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা লোকসানের মুখে পড়ে না পারছেন ঋণ পরিশোধ করতে, না পারছেন প্রকল্প গুটিয়ে নিতে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ পাইকারি হারে কিনে নেয়ার নির্দেশনাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ সূত্রিতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, সরকারের উৎসাহে দুর্গম চরাঞ্চল, দ্বীপ ও পাহাড়ে যেখানে গ্রিড বিদ্যুৎ পৌঁছানো কষ্টকর, এমন স্থানের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সোলার মিনি গ্রিডের যাত্রা শুরু হয়। গত এক দশকে ২৬টির মতো মিনি গ্রিড স্থাপিত হয়েছে। এদের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ মেগাওয়াটের মতো।

উদ্যোক্তারা জানান, আরইবি, পিডিবি এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়েই ২০ বছরব্যাপী মিনি গ্রিড স্থাপনের কাজ শুরু করেন তারা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (ইডকল) কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা মিনি গ্রিড স্থাপন করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেন। এতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়। কিন্তু এসব এলাকায় সরকারি গ্রিডের বিদ্যুৎ ঢুকে পড়ায় এসব মিনি গ্রিড চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২১৩-এ বলা হয়েছে, মিনি গ্রিডগুলোর ২০ বছর জীবনকাল ধরে মূলধনসহ যাবতীয় পরিচালন ব্যয়ের ওপর ১৫ শতাংশ মুনাফা ধরে হয় সরকার সংশ্লিষ্ট বিতরণকারী কোম্পানিগুলোকে কিনে নেবে, না হয় একই মুনাফা হারে ব্যয় তোলার জন্য পাইকারি হারে মিনি গ্রিডের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো কিনে নেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মিনি গ্রিডগুলোতে সরকারি বিতরণ কোম্পানি ঢুকে পড়ায় উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞাতাকে কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী মিনি গ্রিডগুলো থেকে পাইকারি হারে বিদ্যুৎ কিনে নেয়ার পক্ষেই মত দেন। এ জন্য মূল্য নির্ধারণের জন্য মিনি গ্রিডের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে একটি কমিটি গঠন করেছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)। কিন্তু কমিটি গঠনের এক বছর অতিবাহিত হলেও আজো একটি মূল্য নির্ধারণ করতে পারেনি স্রেডা।

সোলার মিনি গ্রিড উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মিনি গ্রিড এলাকায় প্রাপ্ত লোড না থাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিক্রির পরিমাণও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। উদ্যোক্তারা আরো জানিয়েছেন, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাসিক বিক্রয় মূল্য থেকে মিনি গ্রিডের পরিচালন, সংরক্ষণ ব্যয় ইত্যাদি সব খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তা দিয়ে ইডকলের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়। আয় কমে যাওয়ায় ইডকলের ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। এতে তারা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। ফলে উদ্যোক্তাদের অন্যান্য ব্যবসাবাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোড কমে যাওয়ার জন্য উদ্যোক্তারা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের (ওজোপাডিকো) মতো বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ডকে তারা দায়ী করেছেন।

সোলার মিনি গ্রিড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসএমএবি) চেয়ারম্যান ডি এম মজিবর রহমান  বলেন, তারা যখন উদ্যোগ নেন তখন বলা হয়েছিল দুর্গম অঞ্চলে শুধু তারা সেবা দেবেন। যেহেতু এসব অঞ্চলে সাধারণ গ্রিড নেয়া দুষ্কর। কিন্তু সরকারের ‘সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পরিকল্পনার আওতায় বিতরণ কোম্পানিগুলো সোলার মিনি গ্রিডের এলাকাতেও লাইন নিয়ে গেছে। আরইবি, পিডিবি চর এলাকায় মিনি গ্রিড উদ্যোক্তাদের গ্রাহকের ঘরেই আবার মিটার স্থাপন করে জোরপূর্বক বিদ্যুতায়ন করছে। সোলার মিনি গ্রিডের চেয়ে গ্রিড বিদ্যুতের দাম কম হওয়ায় গ্রাহক গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ফলে মিনি গ্রিডের গ্রাহক কমছে।

সমস্যার সমাধান চেয়ে সম্প্রতি মিনি গ্রিড অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়- তারা দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে প্রত্যন্ত অফগ্রিড চর এবং দ্বীপ এলাকায় মিনি গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছেন। এই বিদ্যুতের কারণে এসব এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনি গ্রিডের কারণে এসব চর ও ও দ্বীপের ২০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটার শিখতে পারছে। শিল্পকারখানা স্থাপিত হচ্ছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে; কিন্তু সরকারি বিতরণ কোম্পানিগুলো জোর করে বিদ্যুতায়নের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গ্রাহক হ্রাস পাওয়ায় আয় কমে গেছে।

স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, একটা কমিটি কাজ করছে। তারা মিনি গ্রিড উদ্যোক্তাদের সাথে বসেছেন। এখন দাম চূড়ান্ত করা হয়নি। আশা করা যাচ্ছে, একটা দাম চূড়ান্ত হবে।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে