Dr. Neem on Daraz
Victory Day

লাগামহীন রডের বাজার


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২০, ১০:৩৯ এএম
লাগামহীন রডের বাজার

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ কয়েক দিন থেকে দফায় দফায় বাড়ছে রডের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে একেএস রডের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৬০ হাজার টাকা। বিএসআরএম ৬৩ হাজার টাকা টন। অন্যান্য রডের দামও চড়া। মিলমালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান মদিনা স্টিলের মেহেদী।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলমালিকরা প্রতিদিন বাড়াচ্ছেন রডের দাম। বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সরকারের উন্নয়ন কাজও থমকে যাবে। ঠিকাদাররা কাজ ফেলে রাখবে।

মিলমালিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বাড়ছে। তাই রডের দামও বাড়ছে। সরকার কাঁচামালে ভ্যাট না কমালে রডের বাজার আরও অস্থির হয়ে যাবে। গতকাল সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে চার ধরনের এমএস রড বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৭৫ গ্রেড, সেমি অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৬০ গ্রেড, সাধারণ কারখানায় তৈরি ৪০ গ্রেড রড রয়েছে। এর বাইরে কোনো সিল বা নন-গ্রেডের রড বাজারে বিক্রি হয়। যে রডগুলো বাংলা রড নামে পরিচিত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব রডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের রডের দাম বেশি বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে টন প্রতি এই রডের দাম বাড়তে বাড়তে ছয় হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।

বিএসআরএমের ডিলার নয়ন জানান, আগে যেখানে প্রতি টন বিক্রি হতো ৫৫ থেকে ৫৭ হাজার টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৩ হাজার টাকা টন। একেএস ও কেএসআরএম ব্র্যান্ডের প্রতি টন আগে ৫৪ হাজার টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ হাজার টাকারও বেশি বলে জানান মেহেদী। অন্যান্য ব্রান্ডের রডের দামের একই দশা।

তিনি বলেন, মিলমালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তাই আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মেট্রোসেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তার প্রভাবও বাংলাদেশে পড়েছে। এছাড়া আগে কাজ কম হতো। চাহিদাও কম ছিলো।

কিন্তু বর্তমানে কাজ বেশি হওয়ায় চাহিদাও বাড়ছে। কাঁচামালে ভ্যাট কমালে এটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। তা না হলে দাম বাড়তেই থাকবে। আরও অস্থিতিশীল হয়ে যাবে বাজার। উন্নয়ন কাজও থেমে যাবে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এক সময় চীন থেকে আমরা কাঁচামাল আমদানি করতাম।

বর্তমানে তারাই আমাদের দেশ থেকে বিলেট আমদানি করছে। তাহলে বোঝেন, সমস্যা কোথায়। চীনে স্ক্র্যাপ আমদানির খবর আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় স্ক্র্যাপের দামে প্রভাব পড়েছে।  আমরা আশঙ্কা করছি, চীন স্ক্র্যাপ আমদানি শুরু করলে বাংলাদেশে ইস্পাত উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বজায় রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ এখনই এই প্রভাব পড়েছে আমাদের স্থানীয় বাজারে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শাহরিয়ার স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, গত অর্থবছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি হয়নি রডের দাম।

কারণ গতবার এ সময়েও ৬৫ হাজার টাকা টন ছিলো। তবে করোনার প্রভাব ও বাজেটে কিছু সুবিধা দেয়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারিতেও লকডাউন উঠে যাওয়ায় নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। একযোগে বিশ্বের সব দেশে কাঁচামাল আমদানি করায় রপ্তানিকারক দেশগুলোতে কাঁচামাল সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকটের কারণে রপ্তানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল মেলডিং স্ক্র্যাপ আগে ২৭০-৩০০ ডলারের স্থলে এখন ৪০০ ডলারের বেশি টন কিনতে হচ্ছে। প্রতি টনে একটি আইটেমেই ১০০ ডলার দাম বেড়েছে। আর স্থানীয় কাঁচামাল শিপ স্ক্র্যাপের দাম প্রতি টন ২৯ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, যারা আগে মাল এনেছিল তারা কম দামে রড বিক্রি করেছে। কিন্তু আমদানি করতে গিয়ে দাম বাড়া শুরু হয়েছে। এ জন্য গ্রেডের রডের দামও বেড়ে গেছে। তা ৬৫ হাজার টাকা টন হলে অস্বাভাবিক নয়। কারণ গত অর্থবছরের এই সময়েও ৬৫ হাজার টাকা টন ছিলো। আর নন-গ্রেডের সাড়ে ৬২ হাজার টাকা।

এটা সহনীয় পর্যায়ে বলা যায়। এছাড়া কাঁচামাল আমদানির জন্য কনটেইনার পাওয়া যাচ্ছে না। শিপমেন্ট অনেকটা বন্ধ বলা যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে রডের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে রড তৈরির কাঁচামাল সংকট আরও বেশি হবে। রডের দাম আরও বাড়বে। তাতে বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দিতে পারে। এতে সরকারের ক্ষতি হবে।

কারণ করোনার প্রকোপ মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাই রড, সিমেন্ট ইট বেশি করে বিক্রি হতে থাকে। এর সাথে রাজমিস্ত্রী, প্রকৌশলী, ঠিকাদারদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু বাজার অস্থির হলে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দিলে সবার ক্ষতি হবে। আমাদের বিক্রিও কমে যাবে।

কীভাবে বাজার সহনীয় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ ডাবল ভ্যাট কমাতে হবে। দেখায় কাঁচামাল আদমানিতে এআইটি, পণ্যে আবার ভ্যাট। এভাবে রড তৈরির কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি করতে আমাদের একাধিক ভ্যাট দিতে হয়। তা কমালে প্রতি টনে দুই হাজার টাকারও বেশি ব্যয় কমবে। তখন আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারবো।

আগামীনিউজ/এএইচ 

 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে