Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভারতের উপর নির্ভরশীলতা, পেঁয়াজ পেঁয়াজ খেলা আর কত!


আগামী নিউজ | আল আমিন হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০, ১২:২১ এএম
ভারতের উপর নির্ভরশীলতা, পেঁয়াজ পেঁয়াজ খেলা আর কত!

ফাইল ছবি

ঢাকাঃ হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই ভারত সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বন্ধ রয়েছে পেঁয়াজ আমদানি । এতে এক দিনের ব্যবধানে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পর বাংলাদেশে একদিনেই পেঁয়াজের দাম এক তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে।

বাজারে মোটেও সংকট নেই, উৎপাদনও হয়েছে বিপুল পরিমাণে, আমদানিও হয়েছে হাজার হাজার ট্রাক। তারপরও ভারত সরকারের ঘোষণা শুনেই কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ী একদিনেই অস্থির করে ফেলেছে সারা দেশের পেঁয়াজের বাজার। প্রশাসনও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে পেঁয়াজের আড়তদার ও খুচরা দোকানদারদের বিরুদ্ধে অভিযান। সরকারের নানামুখী নজরদারি কিংবা কঠোর হুঁশিয়ারি—কোনও প্রচেষ্টাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এর মূল্য।

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ভারত কোন কারণ ছাড়াই হুট করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে দুই থেকে তিন গুণ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধ পেয়েছে, তাহলে কি আমরা ভারতের উপর নির্ভরশীল। 

গত বছরও সেপ্টেম্বর মাসে কোনো ঘোষণা ছাড়াই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।

এবারও সেই সেপ্টেম্বরেই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিল। এতে পেঁয়াজের দাম আবারও অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে-এমন আশঙ্কায় কেউ কেউ বাড়তি পেঁয়াজ কেনা শুরু করে দিয়েছেন।

ভারতের  পেঁয়াজের উপর নির্ভরশীলতার কারণ কি? 

যেসব ভোগ্যপণ্যের জন্য বাংলাদেশের ভোক্তারা ভারতের উপর অনেক নির্ভরশীল তার মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেবার পর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন আকাশচুম্বী। ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হাবার পরে সেদেশ থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। গরুর মাংসের দাম এক লাফে কেজি প্রতি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তীব্র সংকট তৈরি হয় কোরবানির পশু সংগ্রহের ক্ষেত্রে। প্রথম দু'বছর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে কোরবানির জন্য গরু খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়েছিল অনেকের জন্য।

এই সংকটের কারণে গত কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার গড়ে উঠে। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের কোরবানির পশুর বাজার ভারতের উপর নির্ভরশীল নয়।

পেঁয়াজের এই নজিরবিহীন মূল্য বৃদ্ধি যে প্রশ্নে জন্ম দিয়েছে সেটি হচ্ছে, ভারতের উপর যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে বাংলাদেশ কি বেরিয়ে আসতে পারবে?

ভারত সরকার তাঁর দেশের জনগণের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রপ্তানির হিসেব করে। প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্বের কথা বলে বলে মুখে খই ফোটালেও বাস্তবে তার কোন নজির পরিলক্ষিত হয়না। তাদের আর্থিক লাভের হিসেব কষেই তারা কুটনৈতিক তৎপরতা চালায়। তাতে অন্যদেশের অর্থনীতি ভয়াল পরিস্থিতির দিকে গেলেও তারা তা কর্ণপাত করে না। আর সে কারণে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি না মেনে হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।”

দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, 'ভারত বাংলাদেশের জনগণকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। এভাবে চলতে পারে না। যখন যে সরকার এদেশে ক্ষমতায় এসেছে তারা ছলে বলে কৌশলে তাদেরকে ব্যবহার করেছে। নিয়ন্ত্রণ করেছে বাজার ব্যবস্থা। এতে যে শুধু বাংলাদেশের জনগণই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিষয়টি তা নয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ভারতের জনগণও।' 

তারা মনে করেন, 'ভারত সরকারের এই কূটচালকে ছিন্ন করে তাদেরকে একটি ‘ফাইনাল ওয়ার্নিং’ দেয়া উচিত  । নিজের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে তাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত। গরু আসা বন্ধ হলেও বাংলাদেশ যেভাবে গরুর চাহিদার সঙ্কট সমাধানে নজির অবস্থান সৃষ্টি করেছে তেমনি পেঁয়াজের বাজারেও এই নজির সৃষ্টি করতে হবে। তাদের ইচ্ছা মাফিক রপ্তানির দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।'

পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যঃ

বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ছাড়াও আরও তিনটি বিষয় কাজ করছে। সেগুলো হলো, বেপরোয়া সিন্ডিকেটের প্রভাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে কার্যকরি ফলাফলে ঘাটতি, ভবিষ্যতে আরো দাম বাড়ার আশঙ্কায় ভোক্তা জনসাধারণের অস্বাভাবিক মজুদ।

এ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটা সেক্টরেই সিন্ডিকেটের প্রভাব লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, আমাদের নিত্যদিনকার চোখে পড়ার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সুবিধাবাদী ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ সিন্ডিকেট চক্র অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং এরা রীতিমতো ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছেমতো বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আর মাঝখান দিয়ে ভোগান্তি আর নানা অসুবিধার মধ্যে জর্জরিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

দেশের সার্বিক বাজার পরিস্থিতি ভোক্তাবান্ধব করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। তাছাড়া, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বেপরোয়া সিন্ডিকেট। যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্যই সিন্ডিকেট হুমকি স্বরূপ। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অর্থনীতি তার মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। আর এর জন্য রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন ও দায়িত্বশীল মহলকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশে পেঁয়াজের আবাদ, উৎপাদন ফলনঃ 

বিগত ১০ বছরের পেঁয়াজের উৎপাদনচিত্র থেকে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ সালে ১.০৮ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে উৎপাদন পাওয়া গিয়েছিল ৭.৩৫ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছিল ৬.৮১ টন। পরবর্তী ১০ বছরে আবাদি জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০১৭-১৮ সালে ১.৭৮ লাখ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদন পাওয়া গেছে ১৭.৩৮ লাখ টন। অর্থাৎ ১০ বছরে চাষাধীন জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ এবং উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে ১৩৬ শতাংশ বা ২.৩৬ গুণ। মূলত নতুন জাত ও উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহারের দ্বারা হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধির কারণে এই বর্ধিত উৎপাদন পাওয়া গেছে। এই সময়কালে হেক্টরপ্রতি ফলন ৬.৮১ টন থেকে বেড়ে ৯.৭৬ টন হয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে পেঁয়াজের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লেও তা অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ১.৩৪৭ লাখ টন, সেখানে ২০১৭-১৮ সালে আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০.৬৪৩ লাখ টন। অর্থাৎ ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ২.৩৬ গুণ আর আমদানি বেড়েছে ৭.৯ গুণ। ২০১৪-১৫ সাল থেকে গত চার বছরে উৎপাদনের পরিমাণ স্থিতিশীল (১৭-১৮ লাখ টন) থাকলেও আমদানির পরিমাণ সোয়া চার লাখ টন থেকে বেড়ে সাড়ে ১০ লাখ টন হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে দেশে পেঁয়াজের জোগান (অভ্যন্তরীণ উৎপাদন + আমদানি) যেখানে ২১.২৭৪ লাখ টন ছিল, সেখানে চার বছরের ব্যবধানে ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে ২৮.০২৩ লাখ টন হয়েছে। অর্থাত্ পেঁয়াজের জোগান বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।

দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদাঃ

দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদা র মধ্যে ফারাক মাত্র দুই লাখ টনের। বছরে দেশে পেঁয়াজ হয় ২৩ লাখ টনের ওপরে। আর চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টনের। তারপরও শুধু নষ্ট হওয়ার কারণে বছরে আট থেকে দশ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ বছর বিদেশ থেকে আনতে হবে আরও বেশি। কারণ দেশে উৎপাদিত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য যে আধুনিক তাপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকা দরকার, তা সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়ে নেই।

যেখানে ভারত, চীন, মিসরের পেঁয়াজ দুই থেকে তিন মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। সেখানে বাংলাদেশের পেঁয়াজ পাঁচ থেকে সাত মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। মার্চে বাংলাদেশের মাঠ থেকে পেঁয়াজ ওঠা শুরু হওয়ার পর তা নভেম্বর পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূলত বিদেশি আমদানি পেঁয়াজের ওপরে নির্ভর করে দেশের বাজারের চাহিদা মেটানো হয়।

চাহিদা পূরণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপঃ

পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ উত্পাদন ও চাহিদার মধ্যে যে বিস্তর ব্যবধান, যা প্রতিবছরই বাড়ছে, তা পূরণের জন্য বর্ধিত হারে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এবং বেশি পরিমাণে আমদানি করার কারণে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে, ২০১৭-১৮ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৪১২.২৭ কোটি টাকা। দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানো প্রয়োজন। এর জন্য নিম্নরূপ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

১. উচ্চফলনশীল জাত এবং উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ: বাংলাদেশে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের গড় ফলন ৯ থেকে ১০.৪ টন। কিন্তু বারি উদ্ভাবিত উন্নত জাতগুলোর গড় ফলন ১৪ থেকে ২২ টন। প্রচলিত স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল জাতগুলোর আবাদ বাড়িয়ে এবং পরিমিত পরিমাণে সার, সেচের ব্যবহার করে গড় ফলন বাড়িয়ে বর্তমানের চেয়ে চার-পাঁচ লাখ টন বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

২. পেঁয়াজ চাষের এলাকা সম্প্রসারণ: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা রবি মৌসুমে অনাবাদি থাকে। মূলত আমন ধান কাটার পর সেচ সুবিধা না থাকায় এসব অঞ্চলে বোরো ফসলের আবাদ করা যায় না। পেঁয়াজ চাষে খুবই কম পানির প্রয়োজন হয়। শুধু এক থেকে তিনটি হালকা সেচ দিয়েই পেঁয়াজের ভালো ফলন পাওয়া যায়। এসব এলাকার এক লাখ হেক্টর জমি পর্যায়ক্রমে পেঁয়াজ চাষের আওতায় আনতে পারলে ১০-১২ লাখ টন পেঁয়াজ উত্পাদন করা যেতে পারে।

৩. আন্ত ফসল হিসেবে এবং বসতবাড়ির আঙিনায় চাষ: কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ ও বরেন্দ্র এলাকায় ভুট্টা, কচুমুখি, মরিচসহ শীতকালীন বেশ কিছু ফসলের সঙ্গে আন্ত ফসল হিসেবে পেঁয়াজের চাষ করা যায়। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ ও বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্পমূল্যের ফসলগুলোর পরিবর্তে লাভজনকভাবে পেঁয়াজের চাষ করা যেতে পারে। তা ছাড়া পার্বত্য জেলাসহ সারা দেশের বসতবাড়ি ও কিচেন গার্ডেনে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ (বারি পেঁয়াজ ২, ৩ ও

৫) চাষ করেও দৈনন্দিন চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব।

৪. বাজার তদারকি এবং উৎপাদনে মৌসুমে আমদানি নিয়ন্ত্রণ: বাজারে পেঁয়াজের জোগান যেন কেউ বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, তার জন্য নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা রাখতে হবে। দাম কিছুটা বাড়ালেই খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা যেন হুজুগে বেশি মাত্রায় কিনে মজুদ না করে, তার জন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলে বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। দেশীয় উত্পাদন সক্ষমতা বাড়াতে উত্পাদন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। কৃষক উত্পাদন মৌসুমে যেন ভালো দাম পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। শুধু ঘাটতি মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে) এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হলেই আমদানির ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

৫. উপকরণে ভর্তুকি এবং ঋণ সুবিধার সম্প্রসারণ: মৌসুমে পেঁয়াজের দাম যাতে খুব বেশি কমে না যায়, তার জন্য পেঁয়াজ চাষিদের উত্পাদন খরচের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাদের উপকরণ খরচে ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পেঁয়াজকে শুধু মসলাপণ্য হিসেবে গণ্য না করে বিদ্যমান স্বল্প সুদে (৪ শতাংশ হারে) ঋণ সুবিধার পরিধি বাড়াতে হবে, যাতে বেশিসংখ্যক কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহী হয়; এবং এতে পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়বে।

৬. গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণাগার তৈরি: পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল জাত এবং পেঁয়াজ সংরক্ষণে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তা ছাড়া পেঁয়াজ উত্পাদন এলাকায় পাঁচ-ছয় লাখ টন সংরক্ষণ উপযোগী বিশেষ ধরনের কোল্ড স্টোরেজ (৪ থেকে ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও ৩৫-৪৫ শতাংশ আর্দ্রতা) নির্মাণ করে ঘাটতি মৌসুমের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

৭. উন্নত প্রযুক্তির বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ: দেশের যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ উত্পাদনে তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে (ফরিদপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী), সেসব অঞ্চলের কৃষকদের পেঁয়াজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে উন্নত প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে