Dr. Neem on Daraz
Victory Day

জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২১, ০১:০০ এএম
জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ কালের আবর্তে জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। বেচেঁ থাকার তাগিদে চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন জীবন সংগ্রামে পোড় খাওয়া এ পেশার শিল্পীরা। নগরায়নের ফলে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। সংকীর্ণ হচ্ছেএ শিল্পের স্থায়ীত্বের পথ। একদিকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব পাশাপাশি যান্ত্রিক যুগের বৈল্পবিক পরিবর্তনে হুমকির মুখে পড়েছে এ শিল্প।

শতবর্ষী এ মৃত শিল্পের তৈরী হাড়ি, পাতিল, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, ডাইনিং টেবিল, টালি, টাইলসসহ হরেক রকমের চোখ ধাধাঁনো তৈজসপত্র দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকলেও তথাকথিত আধুনিকতার ছোয়ায় দৈনিন্দন জীবনে ব্যবহার্য অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎ শিল্পীরা। কম চাহিদা, আয়ের সাথে ব্যায়ের অসঙ্গতি আর জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্য পেশার দিকে ঝুকে পড়ছেন তারা।

এ পেশায় জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে সহস্রাধিক মৃৎ শিল্পী ছিল আজ সেখানে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের সংখ্যা কমে প্রায় দু’শয়ে দাড়িয়েছে। এ পেশার সাথে জড়িতদের প্রায় সবাই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চলে গেছেন পাশ্ববর্তী দেশে। আবার কেউ বা জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের জন্য এ পেশা ছেড়ে সম্পৃক্ত হয়েছেন শিল্প কারখানার চাকুরীসহ অন্যান্য যান্ত্রিক পেশায়। এমন একটা সময় ছিল যখন পেশার সাথে জড়িতদের জীবনমান ছিল উন্নত। তারা জীবন ব্যবস্থার চাক চিক্যে ঝুকতো এ পেশায়। আদি পেশা হওয়ায় অনেকে এ পেশা নিয়ে গর্ব করতো। মাটির তৈরী তৈজসপত্রের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় এ পেশার মাধ্যমে স্বচ্ছলভাবেই জীবন ধারন করতে পারতেন মৃৎ শিল্পীরা। দেশের অধিকাংশ স্থানে মানুষ মাটির বাসনে ভাত খেতেন। হাড়ি পাতিল লবন বাটি ঘরের চালের ছাউনি। প্রায় সবই ছিল মাটির। ধীরে ধীরে দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার করা জিনিসপত্রের মধ্যে আধুনিকতার ছোয়ায় মৃৎ শিল্পের চাহিদা হ্রাসের পাশাপাশি স্টীল, প্লাষ্টিকসহ কাঠ ও বাশের তৈরী আসবাবপত্রের দিকে মানুষের ঝুকে পড়ায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে এ পেশাজীবিরা। টানাপোড়েন এ অবস্থার দোলাচলে কেউ কেউ চলে গেছেন দেশের বাহিরে অন্য কোন দেশে, কেউ যোগদান করেছেন সরকারী কিংবা বে-সরকারী পেশায় আবার কেউ জড়িয়েছেন যান্ত্রিক শিল্পকারখানার পেশায়।

এ বিষয়ে ঢাকার ধামরাইয়ের মৃৎ শিল্পী সত্তর উর্দ্ধো নীপেন চন্দ্র পাল জানান, বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছিল মাটির হাড়ি পাতিল তৈরী করা। তাদের বাড়িকে লোকেরা কুমার বাড়ি বলেই ডাকত। তাদের পাড়াকে মানুষ পালপাড়[ বলে আজও ডাকে। নৌকাযোগে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করতেন মাটির তৈয়ারী তৈজস পত্র। এককালে এ জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল অনেক। কালের পরিক্রমায় আজ বলতে গেলে তা শুন্যের কোঠায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশায় আজ টিকে থাকাই দায় হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন এ পেশা হারিয়েই যাবে।

অপর কুমার শুভাস পালের বয়স প্রায় ৬৮ বছর বলে জানান তিনি। তার তিন ছেলের মধ্যে একজন এ পেষায় আছেন। অপর দুজন গার্মেন্টস কারখানায় চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার ভাই এ পেশায় ছিলেন। ভাইপোরা কেউই এ পেশায় যুক্ত নন। ধামরাই পৌর শহরের পাল পাড়ার বাসিন্দা ৭৫ বছরের নিবাস পাল জানান পয়েলা বৈশাখে মাটির খাবারের বাসন বানানোর ওয়ার্ডার পড়ে।

তখন প্রতিবছরই পাচ’শ থেকে ছয়’শ বাসন তৈরী করেন তিনি। এ ছাড়া সারা বছর ওয়ার্ডার ছাড়া তেমনটা মাটির বাসন তৈয়ার করা হয় না। ফুলের টব, শোপিস. ছোট খাট খেলনা সামগ্রী মাটির ব্যাংক ইত্যাদি তৈয়ার করছেন তারা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শ্রীঃ সংকর চন্দ্র ও শ্রীঃ অখিল চন্দ্র পাল মৃৎ শিল্পের চলমান অবস্থা সম্পর্কে আগামী নিউজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয় তাদের।  এছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হয় তাদের।  মাটির তৈরি জিনিসপত্র এবং বিদেশে এ পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।  তারা আরো মনে করেন মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এর বাজার সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বাহাদুর হোসেন আগামী নিউজকে বলেন, ‘মৃত শিল্প আমাদের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প’।  বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে চলে যাচ্ছে দেশের অনেকে মৃশিল্পীরা।  আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পকর্মে প্রশিক্ষিত করে মৃত শিল্পের সময়োপযোগী জিনিসপত্র তৈরিতে এবং বিদেশে এ পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে জরুরি পদক্ষেপ অতী প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার শিল্পীদের বাচিঁয়ে রাখতে এখনই সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। দেশে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করে মাটির জিনিস পত্রের প্রয়োজনীয়তা বুজাতে জন সাধারনকে প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের ভর্তুকির বা বিনা সুদে লোন দিতে পারে ব্যাংকগুলি। তা না হলে এ মৃৎ শিল্প ইতিহাসে পরিনত হবে।

আগামীনিউজ/এএইচ 

 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে