Dr. Neem on Daraz
Victory Day

দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে শরীয়তপুরের শিল্পীরা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২১, ০২:০৮ পিএম
দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে শরীয়তপুরের শিল্পীরা

ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরঃ নদীমাতৃক জেলা শরীয়তপুরের রয়েছে বহু পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ব্রিটিশবিরোধী তথা ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সমাজ সংস্কারক হাজী শরীয়তউল্লাহর নামানুসারে ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের নামকরণ হয়। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ জেলায় উন্নীত হয় শরীয়তপুর। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো হলো- মাঝির ঘাট, ধানুকার মনসা বাড়ি, ফতেহজংপুর দুর্গ, সুরেশ্বর দরবার শরিফ, রুদ্রকর মঠ, রামসাধুর আশ্রম, বুড়ির হাট ঐতিহ্যবাহী মসজিদ, জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শরীয়তপুরের ধানুকায় চন্দ্রমণি ন্যায় থূষণ হরচন্দ্র চূড়ামণি ও মহা-মহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত বামাচরণ ন্যায়ের জন্ম। এখানকার শ্যামমূর্তি জাগ্রত দেবতা বলে কিংবদন্তি আছে। অতীতে এখানে সংস্কৃত শিক্ষাকেন্দ্রও ছিল। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অতুলনীয় শহর শরীয়তপুর করোনায় ছোবলে ম্লান হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা পঞ্চাশের মতো। সংস্কৃতিকর্মী রয়েছে পাঁচ শতাধিক। তাদের মধ্যে অনেকে সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত এবং যারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান করে সংসার চালান, তারা এখনও বেকার। এদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০০ জনকে সহায়তা দেয়া হয়েছে মাত্র। অনেক শিল্পী আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মনগড়া তালিকার খপ্পরে পড়ে বাদ পড়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৬ সালে শরীয়তপুরে শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হলেও আজ পর্যন্ত এর কোনো ভবনই তৈরি হয়নি। টিনশেড একটি ঘরে এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যেখানে বৃষ্টি এলেই জল চুইয়ে পড়ে। তার ওপর করোনার হানায় শরীয়তপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিস্থিতি একেবারে স্থবির হয়ে আছে। ফলে অধিকাংশ শিল্পীর জীবনই হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। অথচ শিল্পকলায় ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে যারা আছেন, তারা হচ্ছেন আমলাসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃস্থানীয়রা। তাঁরা নেতৃস্থানীয় হলেও এদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া কেউই সংস্কৃতিবান নয়। তাঁরা শিল্পীদেরই চেনেন না। ফলে তাঁদের দাপটে শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি!

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এডভোকেট মুরাদ মুন্সী  বলেন, সরকারদলীয় লোকজন শিল্পীদের তালিকা করেছে। যা মনগড়াভাবেই করা হয়েছে। তারা শিল্পীদের খবরই রাখেন না! ফলে সমন্বয় হয়নি বরং বৈষম্যই হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে এ জোট নেতা আরো বলেন, কমিটিতে এসব নেতারা ভিড় করার অবশ্য কারণও রয়েছে। তা হচ্ছে শোনা যাচ্ছে শিল্পকলা ভবনের কাজ শুরু হবে, যেখানে ২, ৪, ৫ কোটি টাকার বরাদ্দ হবে। ওই গন্ধে তারা কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এতে করে শিল্পীদের স্বার্থ বিপন্ন হচ্ছে।

শরীয়তপুর উদীচীর সভাপতি এম এম আলমগীর বলেন, স্বজনপ্রীতিসহ নানা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন শিল্পীরা। এমন বৈষম্য হলে শিল্পীরা কি মাঠে থাকবে? আর শিল্পী যদি মাঠেই না থাকে, তাহলে তো মৌলবাদী আর জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে।

বাউলশিল্পী আজিজ দেওয়ান বলেন, করোনার হানায় আমার অবস্থা ছিন্নভিন্ন। ধারদেনা করে চলছি। ক্ষুধার জ্বালায় লজ্জা ত্যাগ করে বাধ্য হয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়েছি। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে ডেকে ১০ কেজি চাল, আলু, ডাল দিয়েছে। এর আগে শিল্পকলা একাডেমিতে পরপর তিনবার আবেদন করে দুই মাস আগে ৫ হাজার টাকা পেয়েছি। অথচ আমি জীবনভর গান গেয়েই আনন্দ দিয়েছি মানুষকে। আজ আমি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। দেহ আছে, তবে মনে হচ্ছে নিষ্প্রাণ দেহ নিয়েই বেঁচে আছি।

শিল্পী জিহান রাব্বানি জাকির বলেন, আল্লাহ এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। জীবনের সব চাইতে ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতা পার করছি। কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে