Dr. Neem on Daraz
Victory Day

জীবন কাটছে দুঃসহ কষ্টে


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২০, ০৪:৩৫ পিএম
জীবন কাটছে দুঃসহ কষ্টে

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ সুন্দরবনের কোলঘেঁষা কালীগঙ্গা, বলেশ্বর, দামোদর, সন্ধ্যা বিধৌত প্রাকৃতিক সবুজের লীলাভূমি পিরোজপুর জেলা। বৈচিত্র্যে ভরপুর পিরোজপুরের একদিকে লবণ পানি অন্যদিকে মিঠা পানির অবস্থান।

পিরোজপুরের নামকরণের একটি সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাঁখারী কাঠির জনৈক হেলাল উদ্দীন মোগল নিজেকে মোগল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবি করেছিলেন। তার মতে, আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার কাছে পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন বাংলার সুবেদার শাহ সুজা। আত্মগোপনের একপর্যায়ে নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাড়ে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন তিনি। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয়। শাহ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকান রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী ও এক শিশুপুত্র রেখে যান। পরবর্তী সময়ে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে বর্তমান পিরোজপুরের পার্শ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। ওই শিশুর নাম ছিল ফিরোজ। তার নামানুসারে জেলার নাম হয় ‘ফিরোজপুর’। কালের বিবর্তনে ফিরোজপুরের নাম হয়ে যায় ‘পিরোজপুর’।

পিরোজপুরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে শহরের পাল সম্প্রদায়ের গড়া মূর্তি, কাউখালীর শীতল পাটি ও স্বরূপকাঠীর নারিকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি পাপোস, বলেশ্বর ব্রিজ, মঠবাড়িয়া বধ্যভূমি, রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি ও শিব মন্দির, কাঠমহল, কবি আহসান হাবিবের বাড়ি, শেরেবাংলার জন্মস্থান (নানা বাড়ি), আটঘর আমড়া বাগান, কুড়িয়ানা অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম।

সূত্র জানায়, পিরোজপুরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা পাঁচশর অধিক। বর্তমানে তারা সম্পূর্ণ বেকার। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৯০ জনকে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। পাঠানো হয়েছে আরো ১৯ জনের তালিকা। বাকি অনেকের জীবন কাটছে দুঃসহ কষ্টে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ শিল্পীই মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ কেউ ধারদেনা এবং জমানো টাকা ভেঙে চলছে। কেউ কেউ রিকশা চালাচ্ছে। কেউ আবার একেবারে পেশা ছেড়ে দেয়ার কথাও ভাবছেন। করোনাকালে এসব শিল্পীদের প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

পিরোজপুর উদীচীর সাধারণ সম্পাদক খালিদ আবু বলেন, পিরোজপুরে মার্চের পর থেকে সাংস্কৃতিক ক্রার্যক্রম নেই। কিন্তু জীবনযুদ্ধ বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধে কেউ রিকশা চালাচ্ছে, কেউ মাঠে ধান কাটছে, কেউ দিনমজুরি করছে।

তিনি বলেন, সব কিছু বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা সংগঠনের অফিস ভাড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা তো রাস্তায়ও নামতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পীদের দিকে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে রাষ্ট্রকেই।

শিল্পী ও শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক রীনা দাশ বলেন, ৩৫ বছর ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আছি। এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ব ভাবতেই পারিনি। রুটি-রুজির পথটাই বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের বেতন এতটাই কম যে বলতেও লজ্জাবোধ করি। এটা বাড়ানো উচিত। শিল্পীদের প্রকৃত সম্মান দেয়া উচিত।

দিশারী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক ও অঙ্কন শিল্পী আবদুল আলীম বলেন, সাইন বোর্ড অঙ্কন করে কিছু আয় হতো। ডিজিটাল মিডিয়া এসে সেসবও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ধারদেনা হয়ে গেছে। কারো কাছে মুখ ফুটে বলতেও পারছি না। শুরুর দিকে কিছু সহায়তা পেয়েছি। পৌরসভা থেকে ভিজিভি কার্ড দিয়েছিল। তাও এখন বন্ধ করে দিয়েছে।

শিল্পী ও প্রশিক্ষক সঞ্জয় কুমার মিস্ত্রী বলেন, ডুমুরিতলা আশ্রমে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৩ হাজার টাকা পাচ্ছি। ওই টাকায় টেনে টুনে চলছি। বড় কষ্টে কাটছে জীবন।

আগামীনিউজ/এএইচ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে