Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মাস্ক, ফল বিক্রি এমনকি রিকশা চালাচ্ছেন শিল্পীরা


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২০, ০১:১৭ পিএম
মাস্ক, ফল বিক্রি এমনকি রিকশা চালাচ্ছেন শিল্পীরা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ জনশ্রুতি, রাজা সূর্যকুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ হয়। সূর্যকুমারের পিতামহ প্রভুরাম ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজকর্মী। কিন্তু ইংরেজদের বিরাগভাজন হয়ে পলাশী যুদ্ধের পর লক্ষীকোলে এসে আত্মগোপন করেন তিনি। পরে তার পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এই অঞ্চলে জমিদারি গড়ে তোলেন। তারই পুত্র রাজা সূর্যকুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি পান। লোকমুখে প্রচলিত, রাজা সংগ্রাম শাহের রাজকাচারী ও প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অফিস এলাকা বোঝাতে তারা কাগজে-কলমে রাজবাড়ী লিখতেন।

‘বাংলার রেলভ্রমণ’ গ্রন্থের শেষের পাতায় রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে রাজবাড়ী নামটি লিখিত পাওয়া যায়। ১৮৯০ সালে স্থাপিত হয় এ স্টেশন। এ জেলার পর্যটন অঞ্চল ও দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র, জামাই পাগলের মাজার, নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির, সমাধিনগর মঠ (অনাদি আশ্রম), রথখোলা সানমঞ্চ, নীলকুঠি, পাচুরিয়া জমিদার বাড়ি ও রাজবাড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন। শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতিতেও রাজবাড়ি জেলার রয়েছে ব্যাপক সুনাম। কিন্তু করোনায় এখানকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সব প্রাণচাঞ্চল্য থমকে গেছে।

সূত্র জানায়, রাজবাড়ীর সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশের অধিক, সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৬০০। এদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৯৫ জনকে দুস্থ শিল্পী সহায়তা দেয়া হলেও যারা প্রকৃত শিল্পী এবং যাদের পাওয়ার কথা তাদের অধিকাংশই পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকাংশ শিল্পীই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনন্যেপায় হয়ে কেউ কেউ ভাঙাগারির কাজ করছে, মাস্ক বিক্রি করছে, রিকশা চালাচ্ছে। কেউ ঋণ করে এখন কিস্তির টাকা শোধ করতে না পেরে আরো শোচনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

মৈত্রী থিয়েটার গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল কুদ্দুস বাবু বলেন, সংগীত শিল্পী থেকে শুরু করে তবলা, নৃত্যের প্রশিক্ষকরা এখনো বেকার রয়েছে। অথচ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে সরাসরি জড়িতদেরই সহায়তা দিয়ে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। আমরা ক’জনা থিয়েটারের সভাপতি ও নাট্যশিল্পী বিনয় কুমার সাহা বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেলেও জীবনের কোনো চাহিদা থেমে নেই। এ জীবন একেবারে আমূল বদলে যাওয়া একটা জীবন! এখন এক বেলা খাই, আরেক বেলা না খেয়েই থাকছি। অসুখ হলে পথ্য কেনারও টাকা নাই। এমন একটা দুঃসময় যাপন করতে হবে ভাবিনি কোনোদিন।

নাটক ও সংগীত প্রশিক্ষক সঞ্জয় ভৌমিক বলেন, এখনো কার্যত লকডাউনের মধ্যেই আছি আমরা। অনেক বাউল মাস্ক, ফল বিক্রি করছেন, রিকশা চালাচ্ছেন। অথচ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা দলীয় লোকজনই নয়ছয় করেছে। যাদের পাওয়ার কথা তারা পায়নি। বরং যার সহায়তা দরকার নেই সেই সহায়তা নিয়েছে। খ্যাতিমান নাট্যশিল্পী মো. শেখ কামাল বলেন, করোনা আমাকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। আমি এখন বোতল, অকেজো কার্টুন বিভিন্ন জায়গা থেকে কুড়িয়ে এনে ২ থেকে ৩০০ শ টাকায় বিক্রি করে চলছি। এই দুঃসময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে ১০ কেজি চাল ছাড়া কোনো সহায়তাই পাইনি। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে এই নাট্যশিল্পী আরো বলেন, আমরা মঞ্চ কাঁপিয়ে মানুষকে সচেতন করি। কিন্তু এতদিন খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি, এই খবর কেউ রাখে না!

জানতে চাইলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার পাল বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল-ডাল সহ খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৯৫ জনকে ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২১৯ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমির কর্মীদের পক্ষ থেকে ১৩৫ জন শিল্পীকে ৭ দিনের খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।

আগামীনিউজ/এএইচ   

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে