Dr. Neem on Daraz
Victory Day

‍‍`এ পেশায় কিছুই নেই’


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২০, ০৬:০৬ পিএম
‍‍`এ পেশায় কিছুই নেই’

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য ও পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার সম্মিলনে ঠাকুরগাঁও হলো প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জনপদ। ঠাকুর- অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের সংখ্যাধিক্যের কারণে স্থানটির নাম হয়েছে ঠাকুরগাঁও। ১৮৬০ সালে এটি মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের আদি নাম নিশ্চিন্তপুর। নামটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনো জনপদের ছবি। এর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য স্থাপনা। জেলার অতিপ্রাচীন পুকুর ও গড়গুলোর অস্তিত্ব সুপ্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন তুলে ধরে। শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিতেও ভরপুর অনন্য এক জেলা ঠাকুরগাঁও। লোকসাহিত্য, লোকনৃত্য, ধামের গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, বাউল, মুর্শিদী, মারফতি, পালাগান, কবিগান, বিচার গান, কোয়ালী গান, বিষহরি গান, সত্যপীরের গান, কীর্তন, বিয়ের গান, যাত্রা, আদিবাসীদের গান, জারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ের লোকসংস্কৃতির অবদান রয়েছে।

এই জেলার দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তির মধ্যে রয়েছে রাণীশংকৈল (রাজা টংকনাথের) জমিদার বাড়ি, হরিপুর রাজবাড়ী, হরিণমারী শিবমন্দির, গোরক্ষনাথ মন্দির, রাজভিটা, জগদল রাজবাড়ী, মালদুয়ার জমিদার বাড়ি, রামরাই দীঘি, খুনিয়াদীঘি, শাপলা পেয়ালাদীঘি, খুরুম খুয়াদীঘি, প্রাচীন রাজভিটা, প্রাচীন জনপদ নেকমরদ, নাথমন্দির, গোরক্ষনাথ মন্দির ও তৎসংলগ্ন কূপ ও শিলালিপি, গোবিন্দনগর মন্দির, খোলাহাট মন্দির, বালিয়াডাঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী সূর্যপুরী আমগাছ।

সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা এক হাজারের অধিক। তাদের অনেকে সংস্কৃতিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তারা সম্পূর্ণ বেকার হয়ে গেছেন। এদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০০ জনকে অনুদান দেয়া হয়েছে। বাকি অনেকের জীবন কাটছে কষ্টে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ শিল্পীই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে সহায়তা দেয়া হয়েছে তা ঠিকমতো সমবণ্টন হয়নি। এক শ্রেণির মাতবর গোছের লোকেরাই পেয়েছে। সরকার যা সহায়তা দিয়েছে তা যদি ঠিকমতো সমবণ্টন হতো তাহলে শিল্পীরা এত অমানবিক জীবনযাপন করত না। করোনাকালে শিল্পীদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সঠিক বণ্টন এবং সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

জানতে চাইলে সংগীত প্রশিক্ষক মোজাম্মেল হক বাবলু  বলেন, এখন তো টিউশনি নেই। কোথাও কোনো ক্লাস নেই। ফলে আমার আয়ের পথ একেবারে বন্ধ। তাই সঞ্চিত অর্থ অর্থাৎ ডিপিএস ভেঙে চলছি। যে কারণে না খেয়ে নেই। এখন যেভাবে চলছি, তা বেঁচে থাকার জন্য চলা। তবে কষ্টে আছি। ১০ মাস পরে সরকারি সহায়তা ৫-১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়ে কী হবে? না পাওয়ার মতোই। প্রতি মাসে তো আর পাচ্ছি না। প্রতি মাসে যদি ৫ হাজার করে পেলে কাজে আসত। তাই এই সহায়তার হাত অন্তত করোনাকালীন প্রসারিত রাখলে শিল্পীরা প্রাণে বাঁচত।

সরকারি সহায়তা সমবণ্টনের দাবি জানিয়ে চার দশকের অধিক সময় ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত এই শিল্পী আরো বলেন, সরকারি সহায়তা মাতবর গোছের লোকজনরাই পেয়েছে বেশি। স্বজনপ্রীতিও হয়েছে। অথচ তালিকায় অনেকের নাম থাকলেও তারা পায়নি। এটা অনেকে বলছে না। কিন্তু কথা সত্য। যদি ঠিকমতো বণ্টন হতো তাহলে এত দুর্গতি হতো না। অর্থাৎ যার জমি নেই সে জমি পাচ্ছে না, যার জমি আছে সে পাচ্ছে। যার খাবার নেই সে খাবার পাচ্ছে না। যার আছে সে পাচ্ছে। এমন হওয়া উচিত নয়।

প্রফেসর মনোতোষ কুমার দে বলেন, শিল্পীরা তো অধিকাংশই গরিব। তারা যে উপার্জনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। করোনার কারণে তাদের সেসব কাজ অধিকাংশই হাতছাড়া হয়ে গেছে। যার ফলে তারা এখন বেকায়দায় পড়ে গেছে। শিল্পীদের সরকারিভাবে সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা তো পর্যাপ্ত নয়। তা দিয়ে তাদের চলে না। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠান করছে তারা। জানি না তারা এর জন্য সম্মানি পাচ্ছেন কিনা।

তিনি বলেন, জীবিকা তো তাদের অন্নসংস্থানের পথ। সেপথ এখন নড়বড়ে অবস্থানে এবং তারা কষ্টের মধ্যে আছে। যেহেতু বন্ধই রয়েছে সেক্ষেত্রে করোনাকালীন সহায়তা বা অনুদান অব্যাহত রাখলে শিল্পীরা প্রাণে বাঁচত।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও তবলাশিল্পী পার্থ সারথী দাস বলেন, সাবিনা ইয়াসমীন থেকে শুরু করে এন্ড্রু কিশোরের মতো শিল্পীরা সারাজীবন গান গেয়ে শেষ বয়সে এসে দেখা যায় তাদের চিকিৎসা করানোর পয়সা নেই! আমাদের মতো প্রান্তিক পর্যায়ের শিল্পীদের কথা না হয় বাদই দিলাম। তাহলে এটাকে পেশা হিসেবে কেন নেবে? মনের তৃপ্তি ছাড়া এখানে আর কী আছে? এটাকে পেশা হিসেবে নিতে হলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। কারণ শিল্পীরাই তো নাটক কিংবা গানের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন। অথচ অন্যান্য খাতের এ খাতে বাজেট একেবারে কমই দেয়। তাই বাজেট এবং প্রোগ্রামের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত।

এই শিল্পী আরো বলেন, কিছু দিন আগে জেলায় জেলায় কনসার্টের জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ ওই টাকা লুটপাট হয়েছে। আমি এটার কোনো মানেই খুঁজে পাইনি।

আগামীনিউজ/এইএচ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে