Dr. Neem on Daraz
Victory Day
করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয়

দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষায় এখনই পরিকল্পনা জরুরি


আগামী নিউজ | সাইফুল হক মিঠু প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২০, ১০:০১ এএম
দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষায় এখনই পরিকল্পনা জরুরি

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বড় ধরনের আঘাত আসছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মহল থেকে বলা হচ্ছে, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা বলছেন, দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষায় এখনই জরুরি পরিকল্পনা না নিলে বড় রকমের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়বে দেশ।

দেশের ব্যবসা বাণিজ্য রক্ষার্থে এরই মধ্যে ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৯ সালের এক জরিপ মতে, জিডিপিতে শত ভাগ কাঁচামাল নির্ভর দেশীয় শিল্পের অবদান প্রায় ৫ শতাংশের মতো। এই খাতে কর্মসংস্থান হয় ৩১ দশমিক ৫ শতাংশের মানুষের। বাংলাদেশের সরকার দেশীয় শিল্প রক্ষায় বেশ কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। 

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে দেশের কৃষি। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বৈশাখ মাস কিছুদিন পর কালবৈশাখী শুরু হবে। এখন অনক মানুষের ফসল বোপন ও বোরো ধান ঘরে তুলার সময়। মূল ফসল পাট ও ধান এখন বোপন করে। কৃষকরা বীজ সংগ্রহ করতে পারছে না, মাঠে যেতে পারছেনা, সার সংগ্রহ করতে পারছে না, কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে কারণ কৃষক ঘরে আটকা পড়েছে। এর ফলে তারা সময় মতো ফসল বোপন ও উৎপাদনকরতে পারবে না। এতে কৃষিতে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন চারপাশের সব পতিত জমি কৃষির আওতায় আনতে হবে। এক টুকরো জমিও ফেলে রাখা যাবেনা।কৃষি মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

জানা যায়, ঢাকা থেকে পণ্য আনা নেয়া সংকুচিত হওয়ায় পন্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা কৃষক, অন্যদিকে আগাম বন্যার পূর্বাভাস কৃষক আরো বেশী দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করেছে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রান্তিক পযার্য়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি খামার ইত্যাদি কাজে উৎপাদন করতে এই টাকা তারা ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া ধান-কাটা মাড়াই কাজে যান্ত্রিকীকরণ করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

করোনার কারণে কৃষি ছাড়াও দেশী শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। পণ্য উৎপাদন যাত্রা ব্যাহত হবে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে দেশের ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা। এরইমধ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁ, সিনেমা, পরিবহন কোম্পানি, দোকানবাজার সবকিছুর ওপরই করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ছোট উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। মাঝারি উদ্যোক্তারা ব্যবসা গুটিয়ে আনছেন।এদিকে, দেশী শিল্প বাণিজ্য রক্ষায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় দেশীয় শিল্প বাণিজ্য রক্ষার বিকল্প নেই। এজন্য স্বমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। 

তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার একটি সহায়তা স্কিম শুরু করতে পারে। এছাড়া কর্মহীন শ্রমিকদের দক্ষতা নবায়ন ও পুনঃপ্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকদের বিকল্প কাজের সুযোগ করে দিতে হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে কুটির শিল্পের লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে যাবে। তাদের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, সব খাতকেই বিভিন্নভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেটা ব্যাংকের ঋণ মওকুফ করেই হোক অথবা শ্রমিকদের বেতন দিয়েই হোক, যেভাবেই হোক করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. নিম হাকিম বলেন, শুধু প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণ দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। করোনা পরবর্তী দেশীয় শিল্প রক্ষায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া জরুরি। না হলে এ শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে তা নিশ্চিত। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তাদের সংগঠন, অর্থনীতিবিদ ও এ বিষয়ে গবেষক, দেশীয় শিল্প বাণিজ্য রক্ষায় নিয়োজিত সংগঠন গুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি  কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

আগামীনিউজ/মিঠু/মিজান 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে