ঢাকাঃ শিকার এবং ধর্ষকের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার দুটি ঘটনা একই দিনে ঘটেছে। একটি ঘটেছে জেলা কারাগার, ফেনীতে। অপরটি ঘটেছে আদালত চত্বরে, নাটোরে।
গতকাল (১৯ নভম্বর) বৃহস্পতিবার দুটি পৃথক স্থানে এ দুটি বিয়ের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ‘এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে’।
বিবিসি বাংলা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে, ‘আইনে ধর্ষণের অপরাধ আপোসযোগ্য নয়’।
ফেনী জেলা কারাগারে বিয়ে!
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের একজন তরুণী তার প্রতিবেশী একজন যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন প্রায় ছয় মাস আগে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সেই মামলা দায়েরের পর থেকেই ঐ যুবক গ্রেপ্তার রয়েছেন ফেনী জেলা কারাগারে।
বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের মামলার সরকারি আইনজীবী কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ জানিয়েছেন, উভয়ের পরিবারের মধ্যে আপোস মীমাংসা হয়েছে এবং অভিযুক্ত ভুক্তভোগীকে বিয়ে করবে-এই বিষয়টি জামিনের আবেদনের শুনানীতে আদালতকে জানানো হয়।
তখন হাইকোর্ট কারা ফটকে বিয়ের আয়োজন করার জন্য ফেনী জেলা প্রশাসন এবং কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার প্রশাসনের আয়োজনে বিয়ের অনুষ্ঠানে এই সরকারি আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেছেন, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত এবং উভয়ের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
একই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগী তরুণীর মামা মো: আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, তার ভাগ্নি এবং অভিযুক্তের মধ্যে আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছিল-এই অভিযোগে তারা মামলা করেছিলেন।
মো: সুফিয়ান আরও বলেছেন, তারা দুই পরিবার এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কয়েকদফা আলোচনার পর সমঝোতায় আসেন। তাদের আপোস মীমাংসার ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী এখন বিয়ে হলো।
এতে দুই পরিবারই খুশি বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
তবে সরকারি আইনজীবী কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ জানিয়েছেন, বিয়ে হলেও ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নাই। এটা আদালত থেকে নিস্পত্তি হতে হবে।
তিনি বলেছেন, এই বিয়ে হওয়ার রিপোর্ট এখন হাইকোর্টে যাবে এবং তারপর আদালত জামিন দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। আর ধর্ষণ মামলাটির ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী যেহেতু আর এগুবে না, সেজন্য পুলিশ আপোস মীমাংসা এবং বিয়ের বিষয়ে বিচারের আদালতে রিপোর্ট দেবে। আদালত সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলা নিস্পত্তি করবে।
নাটোরে আদালত চত্বরে বিয়ে!
উত্তরের জেলা নাটোরেও বৃহস্পতিবার আরেকটি ধর্ষণ মামলায় সেখানকার একটি আদালত চত্বরে ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তের মধ্যে বিয়ে দেয়া হয়।
নাটোরের গুরুদাসপুর থানায় একজন তরুনী ধর্ষণের অভিযোগে একজন যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার থাকা অভিযুক্তের জামিনে আবেদন নাটোর জেলা দায়রা জজ আদালত নামঞ্জুর করেছিল।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে স্থানীয় একজন আইনজীবীর বরাতে হলা হয়েছে, জামিন নাকচ হওয়ার পর দুই পরিবার সমঝোতায় আসে এবং তা আদালতকে জানানো হলে বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে আদালতের নিকাহ রেজিস্টার দু’জনের উপস্থিতিতে সাড়ে চার লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে নিবন্ধন করেন। এরপর আদালত গ্রেপ্তার থাকা যুবককে জামিন দেয়।
আইন কি বলছে?-
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, ধর্ষণের মামলায় আপোস মীমাংসা মাধ্যমের ধর্ষণের শিকার এবং ধর্ষকের বিয়ের ঘটনায় আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী বলেছেন, “আমাদের সমাজে এ ধরনের বিয়ে অপ্রচলিত তা কিন্তু নয়। অনেক সময় এটা হয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে সেই একই বিষয় যে সালিশের মাধ্যমে তারা বিয়ে দিয়ে দেয়। এটা বোধায় একটু অন্যভাবে দেখার বিষয় আছে। আমাদের সমাজে যদি ধর্ষকের সাথে বিয়ে হতেই থাকে, তাতে এমন অপরাধে আরও উৎসাহ যোগাবে।”
তিনি আরও বলেছেন, “আইনে অবশ্যই বিষয় আছে যে, ধর্ষণের মামলা আপোস যোগ্য নাকি আপোসযোগ্য না। সেই দৃষ্টিতে দেখলে এগুলো আপোসযোগ্য না।”
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, ধর্ষণের অপরাধ আপোসযোগ্য নয়-এটা আইনে রয়েছে।
আগামীনিউজ/প্রভাত