Dr. Neem on Daraz
Victory Day

৭০ শতাংশ ঘটনায় পার পেয়ে যায় আসামিরা


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২০, ১২:০৮ পিএম
৭০ শতাংশ ঘটনায় পার পেয়ে যায় আসামিরা

ঢাকাঃ চলতি বছরের ১৭ আগস্ট অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন নড়াইলের বাহিরগ্রাম এলাকার তানিয়া আক্তার (২৬)। বিচার না পাওয়া এই মেয়েটির বক্তব্য ছিল, ‘আসামিরা প্রভাবশালী, টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করেছে, তাই আমি বিচার পাচ্ছি না। আমাকে এখনো হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

জরিপ বলছে, আইনের শিথিলতা কিংবা সাক্ষী না পাওয়ার কারণে অ্যাসিড নিক্ষেপের প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনায় এভাবেই পার পেয়ে যাচ্ছেন আসামিরা।

দেশে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা সংখ্যায় কমলেও নির্মূল হয়নি। এ নিয়ে সমাজে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা রয়েই গেছে। পারিবারিক বিরোধ, প্রেমে প্রত্যাখ্যান হওয়াসহ নানা কারণে অনেকেই অ্যাসিডকে ব্যবহার করছে। সামাজিক সচেতনতা কিংবা আন্দোলনের ফলে অনেক আসামি গ্রেফতার হলেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। অ্যাসিড-সন্ত্রাসে শিকারদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন (এএসএফ) এর গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ অনুযায়ী, একদিকে ৭০ শতাংশ ঘটনায় আসামিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ‘বিকৃত’ চেহারা নিয়ে ‘স্বাভাবিক’ জীবনে থাকার কঠিন লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অ্যাসিড হামলার ঘটনায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে হামলাকারীদের কোনো সাজা হয়নি। ২০১৯টি মামলা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সেখানে অভিযুক্তের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। কিন্তু পুলিশ মাত্র ১২ শতাংশ মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পেরেছে। আরেক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯ বছরে দেশে মোট ১ হাজার ৬৩৭টি অ্যাসিড-সন্ত্রাসের মামলা হয়। সেসব মামলার মধ্যে চার্জশিট দাখিল হয় ৯৭৯টিতে আর ৬৪০টির চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়। বিচারে ১৬৭টি মামলায় সাজা হয় ২৮১ জনের। যার মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১০২ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়।

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন-এএসএফের পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৫টি অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে ২২টি অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৭টি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাসিড হামলা কমানো গেলেও শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এখনকার পরিস্থিতি ধরে রাখতে গেলেও সামাজিক আন্দোলন জোরদারসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অ্যাসিড-সন্ত্রাস নির্মূলে পৃথক আইন প্রণয়নের পর এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে অনেক। তবে বিচারকাজে ধীরগতি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবসহ নানা কারণে অ্যাসিড-সন্ত্রাস পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব হয়নি।

তারা আরো বলছেন, অ্যাসিডের সহজলভ্যতা, অ্যাসিড ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নজরদারির অভাব, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এবং নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব অপরাধটি জিইয়ে রেখেছে। অ্যাসিড নিক্ষেপের অপরাধে ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ হলেও তা দীর্ঘদিনেও কার্যকর হয়নি। সাক্ষীর অভাবে যে হারে আসামিরা পার পেয়ে যাচ্ছে, তাতে অপরাধীরা উত্সাহ পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশে অ্যাসিড-সন্ত্রাসের ঘটনা অনেকাংশে কমে এসেছে। তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। ’৮৬ সালের দিকে মনে আছে; তখন মেয়েরা প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তার দিকে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হতো। সে সময় এ ধরনের ঘটনাও বেশি ছিল। কিন্তু এখন যে কোনো শত্রুতার কারণে যেমন রাজনৈতিক, জমি-সংক্রান্ত সমস্যা হলেই অ্যাসিড ছুড়ে মারা হচ্ছে।

অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, করোনাকালে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা কিছুটা বেড়েছে। এই সময়ে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। যে কারণে অন্য সহিংসতাও বেড়েছে। অ্যাসিড নিক্ষেপ বাড়ার আরো একটি কারণ হিসেবে তুলে ধরেন ‘আত্মতুষ্টি’।

তিনি বলেন, সবাই বলছে অ্যাসিড-সন্ত্রাস কমে গেছে। এ কারণে মনিটরিং দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে সহজে কেনাবেচা হচ্ছে অ্যাসিড।

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে