Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আইনজীবী ও বিচারকদের দ্বন্দ্বে প্রায় একমাস বন্ধ আদালত


আগামী নিউজ | সোহেল রানা ডালিম, চুয়াডাঙ্গা প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৯:০৭ এএম
আইনজীবী ও বিচারকদের দ্বন্দ্বে প্রায় একমাস বন্ধ আদালত

চুয়াডাঙ্গাঃ নাজির নিয়োগকে কেন্দ্র করে আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের পর আইনজীবীদের টানা আন্দোলনে ভেঙে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার বিচার ব্যবস্থা। একটানা ২৫ দিনের আন্দোলনে চরম হতাশা ও বিড়ম্বনার মধ্যে আছে এ জেলার বিচার প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় বন্ধ রয়েছে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সব মামলার কার্যক্রম।

দ্রুতই এ বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে দেখা দিতে পারে চরম মামলা জট। তবে গত ৭ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এদিকে, এ ঘটনায় একটুও ছাড় দিতে নারাজ আইনজীবীরা। আদালতের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি জেলার আইনজীবী নেতাদের। তবে আদালত খোলা থাকলেও অফিসের কাজ ছাড়া নেই বিচারিক কার্যক্রম।

সোমবার (১২ এপ্রিল) আদালত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আইনজীবীদের টানা ২৫দিনের আন্দোলনে চরম হতাশা ও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন শত শত বিচার প্রত্যাশীরা। আদালত বন্ধ থাকায় শত শত মুহুরীদেরও চাপাকষ্ট বেড়েছে। মন্দায় পড়েছে আদালত এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

তেমনি এক বিচারপ্রত্যাশী সদর উপজেলার জালশুকা গ্রামের আশকার আলী জানান, মাদক সেবনের মামলায় তাঁর ছেলে জেলে আছে। আদালত চললে এতোদিনে তাঁর ছেলের জামিন হয়ে যেত। কিন্তু আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধে আদালত বন্ধ থাকায় তার ছেলের জামিন আটকে আছে।

বিচারপ্রত্যাশী দামুড়হুদার আরিফুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন আগে আরামপাড়ার জব্বারুল ইসলাম পল্টু নামে তাঁর এক আত্মীয়কে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁকে জেলখানাতে পাঠানো হয়। তাঁকে জামিন করানোর জন্যই কোর্টে এসেছেন তিনি। আন্দোলনের ফলে আজও তাঁর জামিন আবেদন করা হলো না। আফসোস আর বিরক্তি নিয়েই তিনি বাড়ি ফিরলেন।

এদিকে আদালত এলাকার আসমান নামের এক ফাস্ট ফুডের দোকানি বলেন, আদালত বন্ধ থাকায় তাঁদের বেচা-বিক্রি একদম শূন্যের কোঠায় নেমেছে। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী খরচ দিয়ে এ মাসে দোকান ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই তাঁদের। এছাড়াও আদালত এলাকার ফটোকপির দোকান, ছোট বড় খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান, ভ্রাম্যমাণ ডাব ব্যবসায়ী, বাদাম-চানাচুর বিক্রেতারাও পড়েছেন চরম অর্থকষ্টে। তাই তাদেরও দাবি দ্রæত এই দ্ব›দ্ব নিরসন হোক।

জানা যায়, গত ১৫ মার্চ অবসরজনিত ছুটিতে যান বিচারক রেজা মোহাম্মদ আলমগীর হাসান। অথচ পরদিন সকালে জেলা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী নুরুল হক রাতে স্বাক্ষর করা একপত্র নিয়ে এসে বলেন, তাঁকে নাজিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ওই আদালতের অন্য কর্মচারীদের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হলে তিনি আর যোগদান করতে পারেননি। যোগদান করতে না পেরে আইনজীবীদের কাছে বিষয়টি জানান তিনি।

পরদিন ১৮ মার্চ নাজির দাবি করা বেঞ্চসহকরী নুরুল হক ও আইনজীবী নেতারাসহ কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত জেলা জজের খাস-কামরায় গিয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এবং নাজির হিসেবে নুরুল হককে যোগদান করানোর জন্য বিচারকের কাছে সেইসময় জোর দাবি জানান তারা। একপর্যায়ে এনিয়ে উভয়ের মধ্যে তুমুল বাগবিতন্ডা শুরু হয়। এসময় বিচারকের টেবিলের কাচ ভেঙে ফেলেন কয়েকজন আইনজীবী। এ ঘটনার পর ওইদিনই আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাঠিসোটা নিয়ে আইনজীবীদের ওপর হামলা চালায়।

এতে সেসময় কয়েকজন আইনজীবী আহত হন বলে দাবি করেন তাঁরা। পরে আইনজীবীরাও একত্রিত হয়ে আদালতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। উভয়পক্ষের হামলা পাল্টা হামলাই চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা আদালত এলাকায়।

ঘটনার দিনই জরুরি সভা ডাকেন আইনজীবী সমিতির নেতারা। ওই জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর দাবি করে সেরেস্তা সহকারী জহুরুল ইসলাম ও নাজির মাসুদুজ্জামানসহ বিচারক বজলুর রহমানের প্রত্যাহার করার দাবি তোলেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের দাবি না মানা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জন করারও হুমকি দেন তাঁরা। দাবির কোনো সুরাহা না হলে পরে আদালত বর্জনসহ প্রতিবাদ সমাবেশ করে আইনজীবীরা। একই সাথে চলমান রয়েছে আদালত বর্জন।

তবে সেই ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ বজলুর রহমান ইতোমধ্যে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতী পেয়ে ময়মনসিং জেলাতে যোগদান করেছেন। আদালতের এক সূত্রে জানায় কয়েক দিনের মধ্যেই চুয়াডাঙ্গায় নতুন জেলা জজের যোগদান হতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে, গত ৭ এপ্রিল খুলনা জেলা জজকে বিষয়টি নিয়ে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালায়।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন বলেন, তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। প্রতিদিনই তাঁদের কর্মসূচি থাকছে। তিনি আরও বলেন, এই দীর্ঘ ২৫দিনের আন্দোলনের মধ্যে অনেকটা সফলতার পক্ষে রয়েছেন তাঁরা। তার মধ্যে গত ৭ এপ্রিল খুলনা জেলা জজকে বিষয়টি নিয়ে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়। তিনিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তাঁদের যৌক্তিক দাবি দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের এ জেলা থেকে প্রত্যাহার করে সৎ ও কর্মপরায়ণদের এখানে দেওয়া হোক। তা না হলে জেলায় আরও বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ জেলার মানুষ তাঁদের দাবির পক্ষেই আছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

এদিকে দীর্ঘ ২৫দিন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সুশীল সমাজ। সুশীল সমাজের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিচারক কম থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে মামলার জট। তার ওপর এই দীর্ঘ বিরতি। এতে করে এ জেলাতে বিচার প্রত্যাশীদের আগের থেকেও অনেকটা বেগ পোহাতে হবে। বাড়বে বিপুল পরিমাণ মামলার জট। এখনি কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যাবে।

আগামীনিউজ/জনী

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে