Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছরে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া


আগামী নিউজ | জাহাঙ্গীর আলম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ০১:১৩ এএম
ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছরে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া

ছবিঃ আগামী নিউজ

কুড়িগ্রামঃ আজ ৩১ জুলাই। ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছর। ২০১৫ সালের এইদিনে মধ্যরাতে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের বিনিময় ঘটে। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলের মানুষের ৬৮ বছরের বন্দিদশার । ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল স্ব-স্ব দেশের অভ্যন্তরে থাকা মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়। বাংলাদেশের ভেতরে যে ১১১টি ছিটমহল ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া। ছয় বছরে সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দাসিয়ারছড়া ছিটমহলবাসী। বিনিময়ের পরদিন থেকে ছিটমহলগুলো উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার আমূল পরিবর্তন হয়। দেখতে দেখতে বদলে যায় অবহেলিত একটি ছিটমহল। রাস্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে লাগে উন্নয়নের ছোয়া। পরিবর্তন ঘটে বঞ্চিত এসব মানুষের নাগরিক জীবন ব্যবস্থায়। 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি দাখিল মাদ্রাসা, দুটি কলেজ, ডিজিটাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার, ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালীর হাটে কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পঁাচটি মসজিদ, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ মিটারের একটি ব্রিজ, ৭টি বক্স কালভার্ট, ৩৫টি ইউড্রেন, ১টি কবরস্থান, শ্মশানঘাট ২টি, টিউবওয়েল ৩৮৪টি, কঁাচাপাকা ল্যাট্রিন ১ হাজার ১৫০টি স্থাপন করা হয়েছে।এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে হতদরিদ্র পরিবারের ১০টি বসতবাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, শতভাগ বিদ্যুতের সংযোগ, দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক্প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তির ৭৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫৬২ পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। উপজেলা কৃষি অফিসের অর্থায়নে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। দাসিয়ারছড়ায় ঘরে ঘরে সুপেয় পানি আর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার যুব ও যুব মহিলাদের দেয়া হয়েছে নানা ট্রেডে প্রশিক্ষণ।সেখানকার বাসিন্দাদের দেয়া হয়েছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও স্মার্টকার্ড।

বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতা জাকির হোসেন জানান,চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৬৮ বছরে আমাদের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটেছে। মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ার  বছরের মধ্যে বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ দাসিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। আমরা কখনো কল্পনা করিনি সরকার এতো দ্রুত দাসিয়ারছড়ায় উন্নয়ন করবে।এ জন্য আমাদের প্রাধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

দাসিয়ারছড়া খরিয়াটারী বয়জৈষ্ঠ কবির হোসেন জানান,আমরা দাসিয়ারছড়াবাসী ৬৮ বছর বন্দী জীবন পার করছিলাম , শেখের বেটি আমার আমাদের  স্কুল কলেজ ,ক্লিনিকসহ অনেক কিছু দিয়েছে আমরা ওনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

সাবেক বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, মাননীয়  প্রাধামন্ত্রী শেখ হাসিনা দাসিয়ার ছড়া এসে দাসিয়ারছড়াবাসীকে এগুচ্ছ ফুল বলে আখ্যায়িত করেছেন,ওনি আমাদেরকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অনেক কিছু দিয়েছেন। আমারা দাসিয়ারছড়াবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ।

সাবেক বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির আন্দোলনের নেতা গোলাম মোস্তফা খান জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করে ছিটবাসী মুক্তি দিয়েছেন তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তার কাছে চিরঋণী। গত ৬ বছরে সরকার দাসিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে