Dr. Neem on Daraz
Victory Day

যশোরে করোনায় ও উপসর্গে মৃত্যু ১১, শনাক্ত ২৭২


আগামী নিউজ | বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২১, ০৮:৩৫ পিএম
যশোরে করোনায় ও উপসর্গে মৃত্যু ১১, শনাক্ত ২৭২

ফাইল ছবি

যশোরে কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি থামছেনা। গোটা জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক দিকে যেতে পারে এমন  আশংকায় জেলায় ৭ দিনের লকডাউনের আদলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যশোর জেলায় নতুন করে ২৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে করোনায় ৮ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৪ জন মারা যান। যা করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের করোনা রেডজোন ও ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় মারা গেছেন ৪ জন। তারা হলেন ঝিকরগাছা উপজেলার উলাকল গ্রামের নুর আহমেদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০), গরিবপুর গ্রামের বাহার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৬০),মণিরামপুর উপজেলার হাকুবা গ্রামের হাশেম আলী (৭৫) ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা গ্রামের মৃত বাকের উদ্দিনের ছেলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আশিকুর রহমান আশিক (৪০)। ইয়োলোজোনে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত ৫ জন হলেন যশোর শহরের কাজীপাড়া কদমতলা এলাকার ইন্তাজ আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৬৫), পোস্ট অফিসপাড়ার আহসান উল্লার স্ত্রী মিনা (৫২), পূর্ব বারান্দীপাড়ার তহম আলীর ছেলে গাজী ওয়াহিদুজ্জামান (৮০), সদর উপজেলার রুপদিয়া গ্রামের মৃত করিম আলীর ছেলে হাশেম আলী (৬৫) ও চৌগাছা উপজেলার লস্কারপুর গ্রামের সইর উদ্দিনের স্ত্রী শাহিদা (৩৫)। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, একই সময়ের মধ্যে আরও ২ জন করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। তারা হলেন অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ চাপাতলা এলাকার আইয়ূব খা (৬২) ও  মণিরামপুর উপজেলার ভোজগাতি গ্রামের ওলিয়ার পাটোয়ারি (৪০)।  তিনি আরও জানান,যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ৫৬২ জনে ১৯১ জন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) ল্যাবে ৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৬৪ জনের র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ২৩ জন ও অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬১ জনের র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৫৭ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। সবমিলিয়ে ৭৯২ টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭২ জনের শরীরে করোনা জীবাণু পাওয়া গেছে। জেনোম সেন্টার ও খুমেক ল্যাবে শনাক্ত ১৯২ জনের মধ্যে  সদর উপজেলায় ১১৭ জন, কেশবপুর উপজেলায় ১২ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৭ জন, অভয়নগর উপজেলায় ১৪ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ১ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ জন,  শার্শা উপজেলায়  ৩১ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ৯ জন রয়েছেন। যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, জেনোম সেন্টারে যশোরের ১৯২ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনও নড়াইল জেলার ৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা পজেটিভ হয়েছে। তিন জেলার মোট ৫৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩৫ জন করোনা পজেটিভ ও ৩২৮ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে।

যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ২২ জুন পর্যন্ত যশোর জেলায় ১০ হাজার ৬৮ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১২৭ জন নারী পুরুষ। এর মধ্যে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১১৩ জনের। আর ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৭ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। সিভিল সার্জন আরও জানান, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত ৪ জনের হিসাব এখনো তার কাছে দেয়া হয়নি। ওই ৪ জনের মৃত্যু ধরলে মোট মৃত্যু ১২৯ জন হবে। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, করোনায় আক্রান্তে খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন খুলনা জেলায়। আর দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে যশোর জেলা। বর্তমানে নিয়ন্ত্রহীণভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও ঊদ্বেগজনক দিকে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার প্রতি  যতœবান হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট (এডিএম) মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান জানান, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৯ জুন দিবাগত রাত থেকে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে। এরপর গত ১৫ জুন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দ্বিতীয় সভায় বিধিনিষেধ বাড়িয়ে যুক্ত করা হয় ঝিকরগাছা পৌরসভা, সদরের উপশহর, নওয়াপাড়া, আরবপুর, চাঁচড়া, শার্শা ইউনিয়ন ও বেনাপোল বাজার। এরপর চৌগাছা ও বাঘারপাড়া পৌর এলাকাও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়। এরপরেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ সোমবার যশোর জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির আলোচনায় জেলায় ৭ দিনের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২৩ জুন রাত ১২ টার পর থেকে ৩০ জুন রাত ১২ টা পর্যন্ত যশোর জেলায় লকডাউন চলবে বলে মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

যশোরের জেলা প্রশাসক শেখ তমিজুল ইসলাম জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বেশি নমুনা পরীক্ষায় বেশি মানুষ পজেটিভ হচ্ছেন। এতে ভয়ের কিছু নেই। এখনো সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সকলকে প্রশাসনের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে