Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নরমাল ডেলিভারীতে সুনাম ছড়াচ্ছে বাগাতিপাড়ার তালতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের


আগামী নিউজ | আব্দুল মজিদ, নাটোর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২১, ০৩:২৮ পিএম

নাটোরঃ নরমাল ডেলিভারী ও প্রসূতি সেবা দানে  অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের তালতলা কমিউনিটি ক্লিনিক(সিসি)। ইতোমধ্যে এই সিসি’র সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশসহ পাশ্ববর্তী এলাকাতেও। আস্থা অর্জন করেছে স্থানীয় ৬-৭ টি গ্রামবাসীর। বিশেষ করে বিনামূল্যে প্রসূতি মা-দের নরমাল ডেলিভারীতে একের পর এক সফলতাই সুনাম কুড়িয়েছে ওই ক্লিনিকটির। খবরটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ায় এখন দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা আসছেন ক্লিনিকটিতে। তবে ওই ক্লিনিকটিতে রোগীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দাবি জানিয়েছেন সেবাদাতা ও গ্রহিতারা।

তালতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সুনাম বিশেষ করে নরমাল ডেলিভারী ও প্রসূতি সেবা দানে  যাকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে তিনি ওই এলাকার তালতলা গ্রামের হাজী আব্দুল জলিলে ছেলে খায়রুল ইসলাম।

খায়রুল ইসলাম ২০০৫ সাল থেকে ওই এলাকায় পল্লী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন।  কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর  ওই ক্লিনিকে তিনি কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সেবাদানে নিয়োজিত হন।

কমিউনিটি ক্লিনিকে যে সকল সেবা দেওয়া হয় তার মধ্যে হলো মহিলাদের প্রশব-পূর্ব (গভকালীন, প্রশবকালীন, প্রসব-উত্তর অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদান এবং কোন জটিলতা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রে প্রেরন করা, সদ্য প্রশুতি মা (৬সপ্তাহের মধ্যে) এবং শিশুদের (বিশেষত মারাত্বক পুষ্টিহীন, দীঘমেয়াদী ডায়ারিয়া এবং হামে আক্রন্ত) ভিটামিন এ ক্যাপসুল প্রদান, মহিলা ও কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা সনাক্ত করা এবং পয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান, কিশোর-কিশোরীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা ও পরামশ প্রদান, ইপিআই সিডিউল অনুযায়ী শিশুদের প্রতিষোদক (যক্ষা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের ধনুষ্টংকার প্রতিষেধক টিকাদান, ১৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে সন্দেহজনক একিউট ফ্লাক্সিড প্যারালাইসিস (এএফপি)সনাক্ত করে রেফার করা, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ৬মাস পরপর প্রয়োজনীয় পরিমান ভিটামিন এ খ্যাপসুল খাওয়ানো এবং রাত কানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের খুজে বের করে চিকিৎসা প্রদান, ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীকে খাওয়ার স্যালাইন ও জিংক বড়ি (শিশুদের ক্ষেত্রে) সাহায্য চিকিৎসা, সদ্যবিবাহিত ও অন্ত:সত্তা মহিলাদের নিবন্ধন করন, সম্ভব প্রসব তারিখ সমাগত হলে যোগাযোগ করা ও জন্ম এবং মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করা, নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদান, সদ্যবিবাহিত ও অন্ত:সত্তা মহিলাদের নিবন্ধন করণ, সম্ভব প্রসব তরিখ সমাগত হলে যোগাযোগ করা, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করা্ এবং নবজাতকরে অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদান।

নিজ অভিজ্ঞতার সাথে নতুন নতুন সরকারী নির্দেশনা মেনে দিতে থাকেন রোগীদের সেবা। বাড়তে থাকে রোগী। এখন প্রতিদিন তিনি ওই এলাকার ৫০-৬০টি রোগী দেখে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেন দাবী করে বলেন, এ পর্যন্ত ওই ক্লিনিকের মাধ্যমে মোট ৬০টি নরমাল ডেলিভারী করিয়েছেন তিনি। সকল শিশু ও মা সুস্থ্য রয়েছে। বিশেষ করে প্রসূতি মা-দের নরমাল ডেলিভারীর জন্য দিন-রাত যে কোন সময় সেবা দিতে প্রস্তুত থাকেন তিনি।

সরেজমিনে ক্লিনিকটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিকটবর্তী পাকা রাস্তার সাথে সংযোগ সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পর অবস্থান ওই ক্লিনিকের। তবে ওই সরু রাস্তা ও ক্লিনিকটির মাঝে যাতায়াতে স্থানীয়ভাবে বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে ব্রীজ। ক্লিনিকটিতে একটি মাত্র বেড। পাশেই ডাক্তারের চেম্বার। নেই কোন আয়া বা জনবল।

তালতলা গ্রামের অধিবাসী নার্গিছ, জেসমিন ও আসমা বেগম বলেন, তারা শুরু থেকেই ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। তারা সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি সন্থান ধারন করার পর থেকে ওই ক্লিনিকে নিয়মিত চেকআপ করিয়েছেন এবং নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে  শিশুসহ সকলেই সুস্থ্য রয়েছেন।

পাশের কাজীর দিয়ারপাড়ার গ্রামের গৃহবধু মরিয়ম বলেন, তার বড়বোন গর্ভবতি হওয়ার পরে ওই ক্লিনিকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। এরপর নরমাল ডেলিভারী করে সম্তানসহ সুস্থ্য ছিল। তা দেখে তিনিও স্ব-পরিবারে ওখানেই সকল সমস্যায় চিকিৎসা নেন। তিনিও ওখানে নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে মা-শিশু দুজনই ভালো আছেন। তবে ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা, ব্রীজ, জনবলসহ বেড বাড়ালে এলাকার মানুষ আরো ভালো সুবিধা পাবে এমন দাবী করেন তিনি।

তালতলা এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম (৪৫) দাবি করেন, তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে আয়া হিসেবে চাকুরী করতেন। আর সেখানে দীর্ঘদিন ধাত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করতে গেয় তার অভিজ্ঞতা হয়। ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ক্লিনিকের সিএইচসিপি খাইরুল হিসলামের আহবানে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ নরমাল ডেলিভারীতে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। কোন টিাকার বিনিময়ে না, তাঁর প্রায় ৮বছরের অভিজ্ঞতা এলাকার মানুষের কাজে আসছে এটাই আত্মতুষ্টি বলে দাবি করেন তিনি।   

এব্যাপারে দায়িত্বরত সিএইচসিপি খায়রুল ইসলাম জানান, এলাকার রোগীদের চাহিদা বিবেচনায় বেড, ব্রীজ ও জনবল বাড়ানো সত্যিই প্রয়োজন।  তার সিসিতে ৬০জন গর্ভবতি প্রসুতি-মা এর নরমালণ ডেলিবারী হয়েছে। আর এই কাজে ধাত্রী হিসেব সহযোগীতা করেছেন একই এলাকার মর্জিনা বেগম নামের একজন মহিলা। তিনি প্রত্যাশা করেছেন সরকারীভাবে সিএসবি ট্রেনিং করানো হয়, সেই ট্রেনিং এর সুযোগ তিনি পেলে এ ধরণের চিকিৎসা কাজে আরো সহায়ক হতো। তিনি এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি ক্লিনিক ও চিকিৎসা পদ্ধতি দেখে সন্তুষ্ট।  ওই সিএইচসিপি’র উচ্চতর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ক্লিনিকটির আধুনিকায়ন, বেড সংখ্যা ও জনবল বৃদ্ধি এবং একটি কালভার্ট নির্মানের প্রয়োজনীয়তার কথা উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। বাজেট এলেই কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে