নারায়নগঞ্জঃ জেলার রূপগঞ্জে গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন চাহিদা পুরনের জন্য কৃষি জমিতে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানীর বালি ভরাটের কারনে এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশু পালনে কৃষকদের এখন ভরসা নেপিয়ার জাতের ঘাস। অতিবর্ষণ, বন্যা এবং করোনার সময়ে গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা যখন নিজ নিজ পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন ঠিক তখনই গৃহপালিত পশুদের গোখাদ্য সংকটের বিষয়টি তাদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। গোখাদ্য সংকটের কারণে ইতিমধ্যে অনেক কৃষকই কম দামে তাদের পশুগুলোকে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার কাঞ্চন, ভোলাব, দাউদপুর, পর্শি, হারারবাড়ি, মুড়াপাড়া, মাহমুদাবাদ, মাছুমাবাদ, পাচরুহী, মাঝিনা নদীর পাড়, বড়ালু, দেইলপাড়া, পাড়াগাওসহ অর্ধ শতাধিক গ্রামে এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। বেসরকারি দুগ্ধ খামারিরা তাদের বাড়িতে খরচ কমানোর জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষের দিকে ঝুকছে। এ ঘাস উচু জমিতে সারা বছরই চাষ করা যায়। নেপিয়ার ঘাস বর্ষায় ভাল জন্মে। আঁশযুক্ত, পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে চাহিদা ব্যাপক। এ ঘাস খেলে গাভীর দুধ বৃদ্ধি পায়, ষাড়ের মাংস বৃদ্ধি পায়। এক শতাংশ জমিতে এ ঘাস চাষ করলে সারা বছর একটা গাভীর খাবার হয়ে যায়। একবার কেটে নিলে ঘাস মরে যায়না বরং কাটা অংশ থেকে পুনরায় কুঁড়ি জন্মে আবার তা পূর্নাঙ্গ ঘাসে পরিণত হয়।
সরজমিন ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে গোখাদ্য সংকট এবং নেপিয়ার জাতের ঘাসে কৃষকের ভরসার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। কথা হয় উপজেলার পূর্বগ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ, অন্যের জমি চাষ করি কোনো রকমে জীবন চালাই। বাড়তি আয়ের জন্যে গরু-ছাগল পালি। কিন্তু এখন গরু-ছাগলের খাবার নিয়া খুব চিন্তায় আছি। বালি দিয়া কৃষি জমি সব ভরাট কওে ফেলছে। পশুকে খাওয়ানোর ঘাষ নাই। মানুষের বর্গা নেওয়া জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছি, সেইটাই এখন ভরসা।’
কৃষক কামাল হোসেন ও মোতালেব মিয়া আগামী নিউজকে বলেন, গরুর খাদ্য সমস্যার জন্যে আমাদের গরু কম দামে বিক্রি করি দিছি।
কুমারপাড়া এলাকার নেপিয়ার ঘাস চাষি রিপন মিয়া আগামী নিউজকে জানান, নেপিয়ার জাতীয় ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় চারা লাগানোর মাসখানেকের মধ্যে একবার কাটা যায়। আবার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই কেটে নেওয়া ঘাসগুলো বড় হয়ে যায়।
উপজেলা পশু পালন কর্মকর্তা আগামী নিউজকে জানান, বৈশাখ-জৈষ্ট্য মাসে রোপন করলে ভাল হয়।
রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কায়ছুন নাহার হাওলাদার গোখাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করে আগামী নিউজকে জানান, বর্তমানে গৃহপালিত পশু খাদ্যের জন্য নির্ভরতার আরেক নাম নেপিয়ার ঘাস। দ্রুত বর্ধনশীল, উৎপাদন খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় এলাকার চাষিরা দিনদিন নেপিয়ার জাতীয় ঘাস চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অপরদিকে গোখাদ্য সংকট নিরসনেও ভূমিকা রাখছেন।
রূপগঞ্জে ৫’শতাধিক খামারির বাড়িতে এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর ১০০ খামারিকে নতুন করে নেপিয়ার ঘাসের বীজ কাটিং দেয়া হচ্ছে। আমির হোসেন একজন দুগ্ধ খামারি বলেন, গবাদি পশুর ৭০ ভাগ খাদ্যেও চাহিদা এ ঘাসে পূরন করা সম্ভব।
বর্তমানে খামারিরা অধীর আগ্রহের সাথে এ ঘাস চাষের দিকে ঝুকছে। কাঞ্চন এলাকার খামারি শহিদুল্লা বলেন, নেপিয়ার ঘাস চাষে খরচ কম, কিন্তু লাভ অনেক বেশি। আউখাব এলাকার শাহজামাল বলেন, নেপিয়ার ঘাস অল্প জায়গায় এমনকি বাড়ীর ছাদেও চাষ করা যায়।
অতিরিক্ত খরা, অনাবৃষ্টি অথবা অধিক বৃষ্টির কারনে এবং ইটের ভাটার জন্য প্রতি বছর জমির উপরি অংশ বা পলি মাটি কেটে নেওয়ার এখন আর আগের মতো ঘাস জন্মাচ্ছে না। তাই অধিকাংশ দুগ্ধ খামারি তাদের গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে এখন নিজ উদ্যোগে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছে। এ ঘাস ১০/১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চাষের পদ্ধতিও সহজ।
আগামীনিউজ/এএস