Dr. Neem on Daraz
Victory Day

শেরপুরে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম


আগামী নিউজ | নাহিদ আল মালেক, জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২১, ০৩:০৩ পিএম
শেরপুরে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম

ছবি : আগামীনিউজ

বগুড়া: মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীনদের মাঝে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের নামে দুই শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপে অনিয়ম, নিন্মমানের উপকরণ ব্যবহার, উপকারভোগীদের নিকট থেকে অর্থ এবং নির্মাণ সামগ্রী নেয়া, হস্তান্তরের পুর্বে স্থাপনায় ফাটল ধরাসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।

ছবি : আগামীনিউজ 

শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় উপজেলায় ১৬৩টি ভূমিহীন পরিবারকে ০২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি সেমি পাকা গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। যার প্রতিটি গৃহ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় তিন কোটি টাকার এই কাজের দেখভাল করছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। 

শেরপুর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে সুঘাট ও শাহবন্দেগী এই দুই ইউনিয়ন বাদ রেখে বাকি ৮টি ইউনিয়নে এই দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে এই দুই ইউনিয়নের ভূমিহীনরা এবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকড়কোলা গ্রামের আলাউদ্দিন রনি জানান, আমাদের গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য তিনটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে নিন্মমানের ইট, খোয়ার পরিবর্তে রাবিশ, নিন্মমানের বালু, কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। একটি ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। যেভাবে কাজ হয়েছে তাতে মনে হয় এই ঘর বেশি দিন টিকবে না। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেছি  কিন্তু কোন লাভ হয়নি। 

ছবি : আগামীনিউজ 

প্রকল্পের ১২ নং উপকারভোগী শেরপুর উপজেলার ১নং কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া কলোনী গ্রামের মৃত আবু বক্করের স্ত্রী বাছিরন বেগম। তিনি জানান, ঘরের কাজ ভালো করার জন্য ৫ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। তাছাড়া ঢালাইয়ের কাজে রডসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসময় তার সঙ্গে থাকা ছেলের বউ লাইজু খাতুন জানান, ‘এসব না দিলে কাজ ভালো হতো না।’ 

এই প্রকল্পের ১নং উপকারভোগী একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী গৃহিনী রুবিয়া খাতুন জানান, আমিও কাজ ভালো করার জন্য দুই বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। কিন্তু ঘরের কাজ ভালো হয়নি। ঘরের মেঝেসহ অন্যান্য কাজ ভাল হয়নি। পলেস্তরা খসে পড়ছে।
প্রকল্পের ৬১নং উপকারভোগী মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকড়কোলা গ্রামের ছারা খাতুন জানান, ‘শেখ হাসিনা এই ঘর দিছে আমি খুশি হচি বাবা। কিন্তু ঘর তৈরীতে সিমেন্ট দিচে অল্প কইরা বালু দিচে বেশি।’

২৭ নং উপকারভোগী খামারকান্দি ইউনিয়নের খামারকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, কাজের সময়ই ঘরের একটি পিলারে ফাটল ধরেছে। তড়িঘড়ি কাজ করায় এ সমস্যা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

ছবি : আগামীনিউজ 

স্থানীয়রা জানান, খামারকান্দিতে যে আরো দুটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে নিচু জায়গায় হওয়ায় সামান্য বন্যাতেই পানিতে তলিয়ে যাবে।

এসময় বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ সহকারি প্রকৌশলী হাসান ওয়াদুদ জানান, প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। এখন নয়, এসব বিষয়ে বক্তব্য পরে দিব। 
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. শামছুন্নাহার শিউলী জানান, প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল। দুই একটি জায়গায় নিন্মমানের কাজের অভিযোগ পেলেও সেগুলো ঠিক করা হয়েছে । এছাড়া উপকারভোগীদের  নিকট থেকে টাকা কিংবা সিমেন্ট নেয়ার কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিয়াকত আলী সেখ জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে শেরপুর উপজেলায় ১৬৩টি গৃহ নির্মাণে করে ভূমিহীনদের পুর্নবাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯৫শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গৃহনির্মাণ কাজে কোন অনিয়মের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি কিংবা কোন উপকারভোগীদের নিকট থেকে নির্মাণ সামগ্রী নেয়া হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।  

আগামীনিউজ/এএইচ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে