Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আজ সারাদিন ভাত খাং নাই, ঘরত কিচ্ছু নাই


আগামী নিউজ | আসাদুজ্জামান আসাদ , কুড়িগ্রাম প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২২, ০৮:০৩ পিএম
আজ সারাদিন ভাত খাং নাই, ঘরত কিচ্ছু নাই

কুড়িগ্রামঃ আজ সারাদিন ভাত খাং নাই,ঘরত চাউল, আটা, নুন, মরিচ কিচ্ছু নাই। আগে স্বামীর সংসারে ভালই ছিলেন, স্বামী অচল হওয়ার পরেও মোটামুটি চলেছিল।  কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের রামকৃঞ্চ রায়পাড়া গ্রামের ৫সন্তানের জননী মিনতি রানী ।

পাঁচ সন্তানের কেউ ভরন পোষন না দেয়ায় মিনতি রানী এখন ভিক্ষা করে চলেন। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটলেও খোঁজ রাখছে না কেউ। অথচ মধ্যবিত্ত পরিবারে স্বামীর সংসারে ছেলে মেয়েদেরকে আদর যত্নে লালন পালন করেছিলেন মিনতি রানী। কোনদিন তাদেরকে সামান্য দুঃখ কষ্টও দেননি তিনি।

রতন, ফটিক, শিপন, রিপন নামের চার পুত্র ও রত্না রানী নামে এক কন্যা রয়েছে তার। ছেলেরা সকলেই মোটামুটি কর্মক্ষম। পারিবারিক ভাবে কেউ অস্বচ্ছল নয়। মিনতি রানীর স্বামী অমূল্য চন্দ্র ৫বছর আগে পক্ষাঘাত (প্যারালিসিস) রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্মের ক্ষমতা হারান।

এর ২/১বছর পর থেকে মিনতির সুখের সংসার লন্ডভন্ড হতে থাকে। সেসময় ছেলেদের চাপে পড়ে সরল বিশ্বাসে বসত ভিটার ৩০শতক জমির মধ্যে ছেলেদের নামে ২৩শতক ও অবশিষ্ট জমি নিজ স্ত্রীর নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন অমূল্য চন্দ্র। এরপর থেকে মিনতি রানীর ছোট ছেলে রিপন চন্দ্র মাছের ব্যবসা করে তার বাবা মাকে নিয়ে সংসার চালাতো। চাষাবাদের ৫০/৬০শতক জমি থাকলেও অমূল্য চন্দ্রের চিকিৎসা ও সংসারের টানাপোড়নে ৫ বছরে বিক্রি করে শেষ হয়ে যায় সবটুকু জমি। শুরু থেকেই মিনতি রানীর অন্যান্য ছেলেরা তাকে কোন সাহায্য সহযোগীতা করত না। ছোট ছেলে রিপন সংসার চালানোর কারনে অন্যরা ভরন পোষনে কোন সহযোগীতা না করলেও মিনতি রানীর খুব একটা সমস্যা হতো না।

ছেলের বউদের কুপরামর্শে ছেলেরা তাকে খাবার ও খরাচাদি দেয় না এবং ছোট ছেলে রিপনও বিয়ের পর আলাদা হয়েছে। এমনকি তার স্বামীর প্রতিবন্ধী ভাতার টাকাও রিপন তাদেরকে দেয়না বলে জানান। একারনে তিনি বাড়িতে পক্ষাঘাতগ্রস্থ স্বামীকে রেখে নিজের অসুস্থ্য শরীর নিয়ে দিনের কিছু সময় আশেপাশের এলাকায় অন্যের দাড়েদাড়ে ভিক্ষা করেন বলে জানান মিনতি রানী।

প্রায় তিন মাস পূর্বে বাবা-মাকে না জানিয়ে মিনতির ছোট ছেলে রিপন চন্দ্র একই গ্রামের গোবিন্দ চন্দ্রের কন্যাকে বিয়ে করে। এরপর রাতারাতি বদলে যায় রিপন। সংসারের দায়িত্ব ছেড়ে কিছুদিন শশুড় বাড়িতে থাকার পর বাড়িতে এসে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করে রিপন। তার মা মিনতি রানী ও অসুস্থ্য বাবা অমূল্য চন্দ্রকে খাবার ও খরচাদি বন্ধ করে দেয় সে । এমনকি রিপনের মোবাইল নম্বর দিয়ে অমূল্য চন্দ্রের প্রতিবন্ধী ভাতা করা থাকায় সেই টাকাও রিপন উত্তোলন করলেও তা তার বাবা-মাকে দিচ্ছেন না।

এনিয়ে মিনতি রানী কথা বলায় নতুন পুত্র বধুর ইন্ধনে তার বাবা সহ আত্নীয়রা মিনতির বাড়িতে এসে তাকে লাঠিপেটা করার অভিযোগ করেন মিনতি রানী। পরে প্রতিবেশিদের সহয়তায় মিনতি রানী এনিয়ে একটি মামলাও করেন। মিনতি রানীর দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করতে গিয়ে রাজারহাট থানার ওসি তদন্ত পবিত্র কুমারের কাছেও তার অসহায়ত্বের বিষয়টি প্রকাশ পায় বরে তিনি জানিয়েছেন।

প্রতিবেশি ললিত চন্দ্র বলেন, তার ছেলেরা সবাই মিলে তাকে ভরন পোষনের ব্যবস্থা করলে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হতো না।

মিনতি রানীর ছোট ছেলে রিপন বলেন, এখন থেকে আমরা সব ভাই মিলে তাকে প্রতিমাসে ভরন পোষন বাবদ সাধ্যমত খরচাদি দিবো।

তার বড় ছেলে রতন চন্দ্র মোবাইল ফোনে জানান,আমি স্বস্ত্রীক ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকুরী করি। বসত ভিটার জমি বাবা-মা অন্যান্য ভাইদের নামে লিখে দেয়ার পর মনের দুঃখে বাড়িতে যাই না, খোঁজ খবরও রাখি না।

নাজিমখাঁন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক পাঠোয়ারী নয়া বলেন, মিনতি রানীর বাড়িতে পারিবারিক কলহ ছিল। আরতির স্বামী অমূল্য চন্দ্রের নামে প্রতিবন্ধি ভাতা করে দিয়েছি। মিনতি রানীর ভিক্ষা করার বিষয়টি জানা ছিল না, খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন এবং বয়স হয়ে থাকলে তার বয়স্ক ভাতা ও ভিজিএফ চাউল সহ অন্যান্য ব্যবস্থা করে দিবেন বলে জানান।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে