Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মানিকছড়িতে চমক দেখাচ্ছে মালচিং পদ্ধতির তরমুজ চাষ


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২, ০৮:৩১ পিএম
মানিকছড়িতে চমক দেখাচ্ছে মালচিং পদ্ধতির তরমুজ চাষ

খাগড়াছড়িঃ খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার গোরখানা এলাকার ২৫ জন চাষি তামাক চাষ ছেড়ে মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ মূল্যের ফসল গ্রীষ্মকালীন নতুন তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। এ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন। 

মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনাময় বলে মনে করছেন খাগড়াছড়ির কৃষিবিদরা।    

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোরে পাখি ডাকার সাথে সাথে ঘুম ভাঙ্গে উপজেলার বাটনাতলী, গোরখানা, যোগ্যাছোলা, আছাদতলী এলাকার মানুষদের। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করছেন চার পাড়ার ২৫ চাষি। যেদিকে চোখ যায় তরমুজ আর তরমুজ। পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনাময় দুই জাতের তরমুজ। সকাল থেকে চাষিরা তরমুজ পরিচর্যা ও পরিপক্ক তরমুজ সংগ্রহ করেন বাজারজাত করতে। অনেক চাষি শুনে ক্ষেতে এসে দেখে তরমুজ কিনে নিয়ে যান।   

এক মাত্র নারী তরমুজ চাষি পারুল আক্তর বলেন, ৫০ শতক জমিতে তরমুজ চাষি করেছি। ফল ও ফুলে দেখে মন ছুঁয়েছে। গাছে গাছে ফল পরিপক্ক হয়েছে। তরমুজ চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছি। 

তরমুজ চাষি মো. চাঁন মিয়া ও খোরশেদ আলম বলেন, দীর্ঘ বছর যাবৎ হালদা পাড়ে তামাক চাষ করতাম। এখন তামাক চাষ ছেড়ে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করছি। এতে যেমন কমেছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি পরিবেশেও ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। পাশাপাশি তরমুজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করছি। এ প্রদ্ধতিতে তরমুজ চাষ কর অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছি। 

বাটনাতলী এলাকার তরমুজ দুই চাষি আলী মিয়া ও ফারুক হোসেন বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজের ভালো ফলন হচ্ছে। এখন গরম পড়ছে। বাজারে তরমুজের ভালো চাহিদা। দাম পাচ্ছি ভালো। ব্যবসায়িরা দরদাম করছেন। জেলা থেকে অনেকে ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে। ভালো দাম পেলে বিক্রি করব। 

তারা বলেন, সামনের বছর বড় আকারে চাষ করব। এক একরের কম জায়গাতে ৩ হাজারের বেশি তরমুজ পাব বলে আশা করছি। বিক্রি করে সাত লাখ টাকার বেশি পাব। 
 
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মালচিং পদ্ধতি সমতলে হয়। পাহাড়ে কী সম্ভব। এখন নিজচোখে দেখে অবাক হয়েছি। এখন তাদের দেখাদেখি পাহাড়েও হচ্ছে। চাষিরা ভালো লাভবান হচ্ছেন। 

চাষিরা জানান, ফলন দেখে খুব খুশি। তাই সামনে বছর বড় আকারে তরমুজ চাষ করার পরিকল্পনা আছে। বেকার যুবকরা চাষ করে সফল হবে। কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগ প্রশিক্ষণ দিলে এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের আগ্রহ বাড়বে। 

মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ সমতলের জমিতে হয়। এখন পাহাড়েও হচ্ছে। এটি চাষিদের ভালো উদ্যোগ। ফলন ভালো হচ্ছে। দামও ভালো পাচ্ছে। বর্তমানে উৎপাদিত তরমুজ বাজারজাতকরণ করতে চাষিদেরকে সহযোগিতা করবো। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাইকাররা ৭০০-৮০০ কেজি তরমুজ কেনার অর্ডার করেছে। 

খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুজন চাকমা বলেন, নতুন এক সম্ভাবনা। প্রযুক্তি পরির্তনের কারণে কৃষি বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে সারা বছর তরমুজ এখন পাওয়া যাচ্ছে। বর্ষাকালে হয় এমন তরমুজ আবিষ্কার করা হয়েছে। এখন কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। এই তরমুজ চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কারণ এটি ব্যতিক্রম চাষাবাদ। 

তিনি বলেন, কৃষিকাজ করে মানুষ উঠে আসছে। এটি এখন কর্মসংস্থান। একজন চাষির সাথে চার-পাঁচ জন শ্রমিক কাজ করে। কর্মসংস্থান হয়। দেশের উন্নতি হচ্ছে, কৃষির উন্নতি হচ্ছে।  

খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমেদ বলেন, এটা নতুন ফসল। পুষ্টিকর ফল। আমাদের কৃষকরা চাষ করতে পারে। বাজারে চাহিদা আছে। কৃষকরা চাষ করে ভালো লাভবান হবেন। ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফল আসে। 

তিন বলেন, বর্ষা মৌসুমে গাছের ঘোড়ায় পানি জমে যাবে কিনা। কৃষক সচেতন হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখে তা হলে পাহাড়ি এলাকায় কোন সমস্যা হবে না। গর্ত করে লাগিয়ে চাষ করছে। তেমন কোন রোগবালাই হবে না। ঝুঁকি বিহীন একটা চাষ। এটা সঠিকভাবে যদি করতে পারে এলাকার কৃষকরা লাভবান হবে। 

তিনি আরও বলেন, ঢাকার পরে সবচেয়ে বড় বাজার চট্টগ্রাম। পাইকারী ব্যবসায়িরা কিনে চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছে। চাষিদের মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। বাগানেই বিক্রি হচ্ছে। মানিকছড়িতে চাষ করছে। এখন খাগড়াছড়ির কৃষকরা করতে পারে।

এসএস      

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে