Dr. Neem on Daraz
Victory Day

চা বাগানে আলো ছড়াচ্ছেন অঞ্জন


আগামী নিউজ | সাখাওয়াত লিমন, শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ১২:১৪ পিএম
চা বাগানে আলো ছড়াচ্ছেন অঞ্জন

ছবি : আগামী নিউজ

মৌলভীবাজারঃ জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কমলগঞ্জের প্রত্যন্ত চা বাগানের সুবিধাবঞ্চিদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক চা শ্রমিক সন্তান। উদ্যেগী এই যুবকের নাম সন্তোষ রবি দাস অঞ্জন। 

১৯৯৬ সালের ৭ জানুয়ারী মৌলভীবাজারের শমসেরনগর ডানকান ব্রাদার্স চা কোম্পানীর শ্রমিক কলোনীতে জন্ম নেয়া অঞ্জন’র বাবা সত্যনারায়ন রবি দাস, মা কমলি রবি দাস। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান অঞ্জন ৬ মাস বয়সে পিতাকে হারায়। এতটুকু শিশুপুত্রকে নিয়ে কমলি দাস যেন অ-থৈ সাগরে পড়েন। তবে ছোট থেকেই মেধাবী হওয়ায় অঞ্জন মায়ের হাত ধরে কানিহাটি চা বাগান প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়। তারপর ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুল, বিএফএ শাহীন স্কুল কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএ মার্কেটিং বিভাগে পড়ুয়া অঞ্জন ২০১৯ সালে ডাকসু ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শোভন-রব্বানী প্যানেলের বিপোরীতে স্বতন্ত্র প্যানেলে সমাজকল্যান পদে নির্বাচন করেন। 

অঞ্জনের এই পথ চলা অতটা সহজ ছিলনা। যে সম্প্রদায়ে রবির বেড়ে উঠা সেখানে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকাটাই ছিল কষ্টসাধ্য। অপুষ্টি, দারিদ্রতা ছিল নিত্যসঙ্গি, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা-এসব কিছু ছাপিয়ে একজন চা শ্রমিকের কাছে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো সহজ ছিলনা। 

তার এই উচ্চ শিক্ষার পেছনে মায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টার কথা স্বরণ করে অঞ্জন বলেন, ‘মা পঞ্চম শ্রেণী পাস। কিন্তু শিক্ষার মর্যদা তার থেকে ভালো বুঝতে আমি আর কাউকে দেখিনি। মায়ের অল্প মজুরী দিয়ে দুজনের সংসারই চলতে হিমশিম অবস্থা। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে পড়ালেখার খরচ যোগাতেন। মা কিস্তি শোধ দিতে বাগানের কাজের পাশাপাশি ছড়া থেকে বালু তোলার কাজ করতেন। আলু সিদ্ধ খেয়ে অনেক রাত কাটিয়েছি’। রবি জানায়, ‘ভার্সিটির জীবনের শুরুটা সুখের ছিল না। দুপুরে সিঙ্গারা আর রাতে ২০ টাকার সব্জি-ভাত খেয়ে কাটাতে হয়েছে। শিক্ষাবৃত্তি লাভের পর হাফ ছেড়ে বাচি।

অঞ্জনে’র মতে, চা বাগানে আগের অবস্থা নেই। শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেনেটেশন সুবিধা বেড়েছে। খরচ ও প্রতিযোগীতাও বেড়েছে। এ প্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা এগোয়নি। অঞ্জন পিছিয়ে পড়া চা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে নিজের গ্রামে গড়ে তুলেছেন অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম। ‘ওয়ান ক্যান হেল্প এনাদার’ শ্লোগানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘অঞ্জনস স্কোয়ার্ড’। 

এতে চা শ্রমিক সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপ, বিজনেস স্কিল এবং যুগউপযোগী কর্মস্থানে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অধিকার, ভ্যক্সিনের নিবন্ধনসহ নানা ক্যাম্পেইন চালু  এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ, ভর্তি, বেতন ও বই কিনতে আর্থিক সহায়তার এবং উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে পরামর্শমূলক সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। সহপাঠীরাও তাকে এ কাজে উৎসাহ যুগিয়ে আসছে। 
অঞ্জন স্বপ্ন দেখেন- নিজের গ্রামে একটি আইসিটি ল্যাব স্থাপনের। যার দ্বারা পিছিয়ে পড়া চা জনগোষ্ঠীকে তথ্য প্রযুক্তিতে সময়ের সাথে এগিয়ে নেয়া।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে