Dr. Neem on Daraz
Victory Day

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীর টিকিটের টাকা কর্মচারীর পকেটে


আগামী নিউজ | মোহাম্মদ শাহ আলম, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২১, ১২:২২ পিএম
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীর টিকিটের টাকা কর্মচারীর পকেটে

ছবিঃ আগামী নিউজ

হবিগঞ্জঃ মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সারাদেশ। দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে করোনা রোগী। সচেতনতা বাড়াতে সরকার একের পর এক দিচ্ছে লকডাউন। আর এ লকডাউন দেয়ায় হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মনের মধ্যে নেমে আসে হাহাকার। লকডাউনে দিন এনে দিন খাওয়া মেহনতি মানুষগুলোর শ্রম বন্ধ থাকায় শুরু হয়ে যায় নিদারুণ কষ্ট।
 
ঈদুল আজহার পর মহামারি করেনায় টানা ১৪ দিনের লকডাউনে শ্রম বিক্রির ক্ষেত্রগুলো বন্ধ থাকায় হবিগঞ্জ অঞ্চলের লাখ লাখ ক্ষেতমজুর-দিনমজুর ও শ্রমজীবী আয় বঞ্চিত হয়েছেন। কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় হতাশায় পড়েছেন তারা। এরই মধ্যে থেমে নেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। অসুস্থ্য হলেই ছুটে যেতে হয় একমাত্র ভরসা হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে। যেখানে এই মহামারি করোনার লকডাউনে জীবন অচল সেখানে উন্নত চিকিৎসা করা হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য দূরূহ।
 
তাই অল্প খরচে চিকিৎসা নিতেই সদর হাসপাতালে ছুঠে যায় মানুষ। কিন্তু সদর হাসপাতালটিও যেনো নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বেড়াজালে বন্দী। স্বাস্থ্যসেবার বদলে এ হাসপাতালকে ট্রেড সেন্টার বানিয়ে ফেলেছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে এ সিন্ডিকেট দৈনন্দিন কামাই করে চলেছে লাখ লাখ টাকা। হাসপাতালের কর্তাব্যক্তি, ডাক্তার নার্স’ কর্মকর্তা কর্মচারী সহ সকলে মিলেই তৈরি এ সিন্ডিকেট।
 
রোগীদের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। কিন্তু হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করলে মনে হয় এখানে চিকিৎসার বদলে টাকা চাষ করা হচ্ছে। এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের এটেন্ডেন্টরা একটি সিন্ডিকেট চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন। চিকিৎসার বদলে রোগী ও এটেন্ডেন্টদের রক্ত চুষে খায় এ সিন্ডিকেট।
 
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে রয়েছে একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা আছে, ‘ জরুরী বিভাগের টিকিট ফ্রি মূল্য ৫ টাকা। জরুরী বিভাগের ভর্তি ফি ১৫ টাক। কিন্তু এখানে অহরহই নেয়া হয় বাড়তি টাকা। হাসপাতালে জরুরি সেবা নিতে গিয়ে এ বাড়তি টাকা নেয়ার ব্যাপারে জানেন না কর্তৃপক্ষ। এই টাকার কোন রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারিভাবে অতিরিক্ত টাকা গ্রহনের কোন আদেশও দেওয়া হয়নি। এরপরও নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা না করেই এ টাকা দিতে রোগীদের বাধ্য করা হচ্ছে।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জরুরী বিভাগের ভর্তি ফি ১৫ টাকার বদলে নেয়া হয় ২০ টাকা। রোগীর ভর্তি ফি ১৫ টাকার ক্ষেত্রে খুচরা নেই জানিয়ে টিকিট প্রতি পাঁচ টাকা বেশি নেয়া হয়। এ টাকা দায়িত্বরত কয়েকজন কর্মচারীই সমানভাবে ভাগ করে নেন। তারা কখনও ভর্তি ফি ২০ টাকারও বেশি নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
 
নাসির নগর উপজেলা থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় আসা এক রোগীর আত্মীয় জানান, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে দুর্নীতিতে সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ। রোগী ভর্তি ছাড়া টিকিট ৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা নিয়ে থাকে এবং ভর্তি ফরম ১৫ টাকার জায়গায় ৩০ টাকা জোরপূর্বক নিয়ে থাকে। সাবাজ নামে আমার এক আত্মীয়কে হাসপাতালে ভর্তি না করে ওই কাউন্টারের দিতে হলো ২০ টাকা।
 
গতকাল সকালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে আল আমিন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার এক আত্মীয়কে বুকে ব্যাথা নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালের সাইনবোর্ড। যদিও লেখা ভর্তি ফি ১৫ টাকা তারা আমার কাছ থেকে ২০ টাকা রেখেছে। কিন্তু কেউ ভর্তি ফরমের দাম জানতে চাইলে ২০ টাকা বলতে দেখা গেছে। মূল্য ১৫ টাকা লেখা থাকার বিষয়ে রোগীর স্বজন জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে জানানো হয় তাহলে খুচরা ১৫ টাকা দিন।
 
তবে জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা পাঁচ টাকার জন্য বাগবিতণ্ডায় জড়ান না। প্রতিটি ভর্তি ফরমের জন্য পাঁচ টাকা বেশি নেয়া হলেও দৈনিক তিন হাজার টাকা। বাড়তি নেয়া এই টাকা কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।
 
এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে স্বাস্থ্য সামগ্রীরও তীব্র সংকট। ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের অবহেলাতো আছেই। নার্সদের সাথে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না রোগীর স্বজনরা। কথা বলতে গেলে তাদের সাথে করা হয় চরম দুর্ব্যবহার।
 
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও মমিন উদ্দিন চৌধুরী  বলেন অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার তো প্রশ্নই  আসেনা। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে