Dr. Neem on Daraz
Victory Day

এক সনদে আপন দুই ভাইয়ের সরকারি চাকরি


আগামী নিউজ | মো: জাহিদ, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২০, ০২:৩৪ পিএম
এক সনদে আপন দুই ভাইয়ের সরকারি চাকরি

সংগৃহীত

কুড়িগ্রামঃ আনিছুর রহমান ও আজিজুল হক আপন দুই ভাই। তাদের রয়েছে আলাদা আলাদা ছবি দিয়ে দুটি জাতীয় পরিচয় পত্র। বড় ভাই আনিছুর রহমান স্নাতক পাশ করলেও ছোট আজিজুল হক পা রাখেননি কোনো স্কুলের বারান্দায়। বড় ভাই আনিছুর রহমান রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন ২০১২ সালে। আনিছুরের সরকারি চাকরি হওয়ায় ছোট ভাই নিরক্ষর আজিজুলের খায়েশ হয়েছে সরকারি চাকরি করার। তাই তথ্য গোপন করে কৌশলে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আজিজুল হক বড় ভাই আনিছুর রহমানের সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে চাকরি নেন। এই সনদ জালিয়াতির মত চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটি নাওডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আপন দু’ভাই আনিছুর রহমান এবং আজিজুল হক। আনিছুর রহমান স্নাতক পাশ করে ২০১২ সালে রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে চাকরিতে যোগ দেন। আর আজিজুল হক আনিসুর রহমান নামে ৮ম শ্রেণী পাশ দেখিয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে চাকরি নেন। দুই ভাইয়ের একই নাম হলেও আলাদা আলাদা ছবি দিয়ে রয়েছে ভিন্ন দুটি জাতীয় পরিচয় পত্র। কোন দিন বিদ্যালয়ে না যাওয়া অক্ষরজ্ঞানহীন আজিজুল বড় ভাইয়ের (আনিসুর) সনদে চাকরি নিয়ে নিজেও আনিসুর নাম ধারণ করেন। 

এদিকে সনদের সাথে নামের মিল রাখতে তথ্য গোপন করে আজিজুল হকের পরিবর্তে আনিছুর রহমান দেখিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করেন। পূর্বের জাতীয় পরিচয় পত্রে আজিজুল হকের জন্ম তারিখ ছিল ৫এপ্রিল ১৯৮৭ সাল এবং পেশা ছিল কৃষক। অথচ তথ্য গোপন করে তার বড় ভাই আনিছুর রহমানের জন্ম তারিখ ৭জুলাই ১৯৮২সাল দেখানো হয়েছে। তথ্য জালিয়াতি করে একই নামে দু’ভাইয়ের দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র হলেও সংশোধিত জাতীয় পরিচয় পত্রে আজিজুল হক নামেই স্বাক্ষর রয়েছে। 

তথ্য জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত আজিজুল হক বলেন, তারা জমজ দু’ভাই। তার আসল নাম আজিজুল হক হলেও চাকরি করার কারণে নাম পরিবর্তন করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেননি তিনি। তবে অষ্টম শ্রেণী পাশের সনদটি সন্তোষপুর আদর্শ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১শ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন বলে তিনি জানান।
 
বড় ভাই আনিছুর রহমান বলেন, রেলের চাকরি মানেই হচ্ছে ঘাস কাটার চাকরি। এই চাকরি হবার পর নিয়ম মোতাবেক ভোটার আইডির সবকিছু ঠিক করা হয়েছে। একই নাম ব্যবহার করার কারণ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সনদ দিতে ভুল করে তার নাম আনিসুর লিখেছেন।  

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, জব্বার আলী, মহির উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, আনিছুর এবং আজিজুল দু’ভাই আমাদের সামনেই বড় হয়েছে। তারা কম পক্ষে ৪/৫ বছরের ছোট-বড়। আনিছুর বড় এবং আজিজুল ছোট। তারা যদি জমজ দাবি করে তাহলে সেটি মিথ্যা বলেছে। আমরা স্থানীয়রা জানি তাদের আসল নাম দিয়েই চাকরি করছে। কিন্তু ভোটার আইডিতে একই নাম ব্যবহার করেছে সেটা আমাদের জানা নেই। আর আপন দুই ভাইয়ে নাম একটাই হবে এটা কোনদিন শুনি নাই।

সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম বলেন, আনিসুর এবং আজিজুল জমজ নয়। ১নং ওয়র্ডে আজিজুল হক নামেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ছোট ভাই। দু’ভাইয়ের একই নাম হতে পারে না। কেননা বড় জনের নাম আনিছুর রহমান আর ছোট জনের নাম আজিজুল হক নামেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। 

এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, আজিজুল হক থেকে আনিছুর রহমান হলেও জাতীয় পরিচয় পত্রে তথ্য গোপন করা হয়েছে। তথ্য গোপন করার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনারের নিকট লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার হতে নির্দেশনা আসলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে